আর পাঁচটি পশ্চিমা দেশের মতো জার্মানিও অনেকের কাছে অভিবাসনের জন্য জনপ্রিয়৷ পাশাপাশি অনেকের কাছেই জার্মান ভাষা শিখে দেশের শ্রমখাতে যোগ দেওয়ার অনেক কঠিন৷
পাকিস্তানের জেসিকা জেমস বিজনেস অ্যাডমেনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে গত নয় বছর ধরে ব্যাংকে কাজ করছেন৷ ইউরোপের দেশগুলোতে অভিবাসনের ইচ্ছা তার৷ জেসিকা বলেন, ‘‘আমি একজন খ্রিস্টান আর পাকিস্তান একটি মুসলিম প্রধান দেশ৷ তাই আমি ইউরোপে যেতে চাই৷’’
জার্মানিতে কাজ করার যোগ্যতা ও দক্ষতা দুটোই আছে তার৷ জার্মানির বাণিজ্যিক শহর ফ্রাঙ্কফুর্টে তিনি চাকরির সন্ধান করতে পারেন৷ কিস্তু জেসিকা জার্মানি যেতে চান না৷
তিনি বলেন, ‘‘সেখানে চাকরি পেতে হলে আপনাকে জার্মান ভাষা জানতে হবে৷ তাছাড়া, ভিসা পাওয়াও বেশ জটিল৷ আমি শুনেছি বাদামি চামড়ার লোকেদের এবং অভিবাসীদের প্রতি স্থানীয়রা বন্ধুবৎসল নয়৷’’ এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে জেসিকা নেদারল্যান্ডসে অভিবাসনের পরিকল্পনা করছেন৷
তারপরও জার্মানি ‘আকর্ষণীয়’
স্থানীয় লোকজন বন্ধুবৎসল নয়, ভাষা শিক্ষা এবং ভিসা পেতে জটিলতা — সবমিলিয়ে মনে হয়, দক্ষ শ্রমিকরা জার্মানিতে আসতে খুব একটা আগ্রহী হবে না৷
অর্গানাইজেশন ফর ইকেনোমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের বিশেষজ্ঞ টোমাস লাইবিগ অবশ্য ঠিক বিপরীতটাই ভাবছেন৷ তার মতে, জার্মানিতে চাকরি করতে আসতে চাওয়া লোকেদের জন্য অনেক সুযোগ আছে৷
লাইবিগ ও তার সহকর্মীরা সম্প্রতি চাকরি নিয়ে জার্মানিতে আসতে চায় এমন ৩০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর উপর একটি গবেষণা চালিয়েছেন যারা জার্মানিতে চাকরি পাওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারের নানা ওয়েবসাইটে পরিদর্শন করেছেন৷
তার মানে দাঁড়ায়, যারা চাকরি নিয়ে জার্মানিতে আসতে চান তারা দেশটিতে কী ধরনের সুযোগ আছে সে বিষয়ে জানতে চাইছে৷ তবে তাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো- তারা জানেন না কীভাবে জার্মানিতে একটি চাকরি পাওয়া যেতে পারে৷ জার্মানির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞাপনও তারা পড়তে পারে না৷
গবেষণায় অংশ নেওয়াদের প্রতি তিন জনের মধ্যে দুই জনই বলেন, বসবাসের জার্মানি অনেক ভালো সেজন্য দেশতে আসতে চান৷
তাদেরই একজন আদ্রেয়ান ওকো৷ আলবেনিয়ার বাসিন্দা ওকো ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি জার্মানিতে থাকতে চাই, তাই কাজ খুঁজছি৷’’
প্লান্ট মেকানিক ওকো ফ্রাঙ্কফুর্টের অভ্যর্থনাকেন্দ্রে অপেক্ষা করছেন৷ এখানকার কর্মকর্তারা বিদেশিদেরকে চাকরি পাওয়ার বিষযে জার্মান, স্প্যানিশ এবং সোয়াহিলি ভাষায় পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷
‘জার্মান ভাষা কঠিন কিন্তু সুন্দর’
জার্মানিতে আসার পর ওকোর কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল জার্মান ভাষা৷ এজন্য কথা বলার সময় সে একটু সময় নেয়৷ কী বলতে চায় সে বিষয়টি আগে গুছিয়ে নেয়৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মান ভাষা আসলে কঠিন, কিন্তু বেশ সুন্দরও৷’’
এদিকে অর্গানাইজেশন ফর ইকেনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এক গবেষণায় দেখা গেছে বলছে, প্রতি দশজনে চারজন জার্মিনিতে চাকরি পেতে ভাষা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন৷
জার্মানির বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, ল্যাবেরেটরি, এবং বিভিন্ন কনফারেন্সে লোকজন জার্মান ভাষায় কথা বলে৷ বিষয়টি এমন যে, স্থানীয়রা ধরে নেয় জর্মান ভাষায় সবাই বুঝতে পারবে৷ এর ফলে কী আন্তর্জাতিক জার্মানির জন্য শ্রমবাজারে অবস্থান পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে?
জার্মান শ্রমবাজার নিয়ে কাজ করা ক্রিস পিক অবশ্য তাই মনে করেন৷ জার্মানিতে কাজ করতে চাওয়া কর্মীদের কাছে ভিসা জটিলতা বা যোগ্যতার স্বীকৃতি বড় সমস্যা নয়৷ মূল বিষয় হলো, চাকরির মাত্র চার ভাগ বিজ্ঞাপন ইংরেজি ভাষায় দেওয়া হয়৷
‘চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে’
জার্মানিতে এই মুহূর্তে যেসকল চাকরির চাহিদা রযেছে — যেমন সফটওয়্যার ডেভেলপার। এসকল চাকরি ভালো মানের ইংরেজি জানা থাকলে চালিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন পিক৷
তার মতে, অভিবাসীদের জন্য জার্মানির সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে৷ তার কথায়, ‘‘আপনি যদি চান সেরা ব্যক্তিটি জার্মানি আসুক। তাদেরকে আনার জন্য চেষ্টা করতে হবে৷ তা না হলে সেই লোকেরাই আসবে যাদের অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই৷