ভুমধ্যসাগরের বিস্তীর্ণ উপকূল বিধৌত মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পর্যটন শহর বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী ‘বাংলার মেলা ২০২৩’। আশির দশক থেকে বাংলাদেশিদের বসবাস শুরু হওয়া স্পেনের এই শহরে বর্তমানে বসবাস করে প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি। তাদের প্রাণের উৎসব হিসেবে খ্যাত এই বাংলার মেলায় প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ও বিদেশিরা অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার (১৫ জুলাই) শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্লাসা মাকবায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন কুলতুরাল ই উমানিতারিয়া দে বাংলাদেশ এন কাতালোনিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতায় মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারোয়ার মাহমুদ। মেলায় গান পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আসেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর, প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস ও পুলক অধিকারী।
কাতালোনিয়া অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরসহ যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশি শিল্পীরা মেলায় উপস্থিত হন। এদিন দেশীয় ঐতিহ্যময় শাড়ি, চুড়ি, শেরওয়ানি, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন বাংলাদেশি পোশাকে সজ্জিত হয়ে উপস্থিত হন নারী, পুরুষ ও শিশুরা। তাদের উৎসাহ, আনন্দ ও বাংলা গানের সুরের মূর্ছনায় মেলাপ্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে এক চিলতে বাংলাদেশ।
বার্সেলোনা শহরসহ কাতালোনিয়ার অন্যান্য শহর থেকে মেলায় আসেন বাংলাদেশিরা। বিকেল ৬টা থেকে শুরু হয়ে মেলা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। পুরো সময়জুড়ে মেলার মঞ্চে ছিল দেশীয় নৃত্য, গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সন্ধ্যা ৭টার পর কানায় কানায় ভরে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। মেলা উপভোগ করতে বাংলাদেশিদের সঙ্গে দেখা মেলে অনেক বিদেশিদের। বিদেশিদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে বাংলার মেলার আনুষ্ঠানিকতা দেখার বিপুল আগ্রহ। মেলায় উপস্থিত থেকে তারা জানতে ও বুঝতে চেয়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে।
সরেজমিন দেখা যায়, দেশীয় পণ্য ও ঐতিহ্যময় বাংলাদেশি খাবারে সজ্জিত ছিল মেলার স্টলগুলো। নানান স্বাদের বাংলার ঐতিহ্যময় খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে স্টলগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। দেশি খাবারের স্বাদ নিতে অনেক স্প্যানিশদের সঙ্গে আরো অনেক বিদেশিদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। স্টলগুলো সাজানো হয়েছিল বাংলার ঐতিহ্যময় হরেক রকমের পিঠাপুলি, ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, বিরিয়ানি, কাবাব, সমুচা-শিঙারা, ঝাল চানাচুর ও হালুয়াসহ বাংলার ঐতিহ্যময় পান-সুপারি দিয়ে।
এদিকে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে মেলা শুরু হওয়ার পর আয়োজক সংগঠনের পরিচিতি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সাঈদ স্বপন, মিতা, নিগার, মুন্নি ও শারমিনের উপস্থাপনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব।
বার্সেলোনা শহরের স্থানীয় শিল্পীসহ আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পীদের দিয়ে সাজানো আনুষ্ঠানিকতায় মেলা মঞ্চ ভরপুর ছিল মধ্যরাত পর্যন্ত। সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পী আঁখি আলমগীর, প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস, পুলক অধিকারী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত নব্বইয়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ইমতিয়াজ বাবু। তাদের মন মাতানো গানের পাশাপাশি ছিল স্থানীয় শিল্পী অহনা দিবা, রাজু গাজি, তন্ময়, জিনাত শফিক, মঞ্জু স্বপন, ওমি রহমানসহ অন্যান্য শিল্পীদের পরিবেশনায় নানা স্বাদের বাংলা গান।
মেলা সফল করার জন্য বার্সেলোনা ও সান্তাকলমার বাংলাদেশি কমিউনিটির সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান মেলা আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আলাউদ্দিন হক নেসা ও সাধারণ সম্পাদক শফিক খান।
তারা বলেন, বছর ঘুরে প্রবাসের মাটিতে এই ঐতিহ্যবাহী বাংলার মেলা মঞ্চায়নে আমাদের মূল উদ্দেশ্য- প্রবাসে বসবাস করা বাংলাদেশি প্রজন্মকে বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। এই ঐতিহ্যবাহী বাংলার মেলার কারণে, প্রবাসে বড় হওয়া শিশুরাসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা বছরে অন্তত একদিন বাঙালিয়ানা উৎসবে মেতে উঠতে পারে এবং আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যকে স্মরণ করতে পারে। আর সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেই আমরা প্রতি বছর মেলার আয়োজন করি।