এতো পাহাড়ে যাও কেনো?? সমুদ্রে কেনো না??—সমুদ্রে গেলে আমার বিষন্ন লাগে, সমুদ্রের বিশালতা সামনে থেকে দেখলে মনে হয়, দূর থেকে ধেয়ে আসা ঢেউগুলো এই বুঝি আমকে টেনে নিয়ে যাবে। ভয় লাগে আমার। বুকের মধ্যে বিষন্নতা অনুভব করি কড়াভাবে।
আর পাহাড় পুরাই এর বিপরীত। পাহাড়ের নিজস্ব একটা আওয়াজ আছে, একটা কথা আছে যেটা আপনাকে কখনই লোনলি ফিল করতে দিবে না। জাগিয়ে রাখবে, বাঁচিয়ে রাখবে। পাহাড়ের পাশে বাতাসের আওয়াজটা একটু আলাদা। চূড়ায় দাঁড়িয়ে হাত পা ছড়িয়ে বুক ভরে ঠান্ডা শ্বাস নিলে মনে হয় ‘এইতো আমি বেচেঁ আছি’। শহরের যান্ত্রিকতায় প্রতিনিয়ত মরে গিয়ে ২টা দিন পাহাড়ে যাই একটুখানি বেঁচে থাকতে।
পাহাড়ে যাওয়ার পথে সাথে যদি থাকে একগাদা মনের মতো ট্যুরমেট, তাহলে তো কথাই নেই। একদম খাপে খাপ। আই ফিল লাইক-‘আয় আইজকা’।
পাহাড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাস্তা নরমালি অনেক দীর্ঘ হয়। অনেক হাঁটতে হয়। আমরা কেউই স্বাভাবিকভাবে এতো হেঁটে অভ্যস্ত না। কিন্তু, পাহাড়ের আরেকটা স্পেশালিটি হলো, এতো এতো রাস্তা বেয়ে উপরে উঠতে কারো একটুও বিরক্ত লাগে না, হয়তো ক্লান্ত লাগে কিন্তু পাহাড়ের রুপ দেখে ক্লান্তি তো দূরের কথা কলিজা, আত্মা, নাড়িভূঁড়িসহ শীতল হয়ে যায়!
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় শহরে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়ে গুলোও নিমিষেই ২/৩ হাজার ফিট উপরে উঠে যায়, কি আশ্চর্য তাই না? হ্যাঁ বস, এটাই হচ্ছে কথা। পাহাড় আপন করতে শেখায়,পাহাড় ভালোবাসতে শেখায়। নয়তো পাহাড়ে যেতে যেতে অপরিচিত এতগুলো মুখ এতো সহজেই কিভাবে আপন হয়ে যায়?
আমি বরাবরই একটু অস্থির প্রকৃতির। চিল্লাপাল্লা না করলে আমার একদমই ভালো লাগে না। এবারের বান্দরবানের ট্যুর-এর দায়িত্ব আমার আর আশা’র কাছে থাকায় আমরা ইচ্ছামতো মজা করেছি। চিল্লাপাল্লা, গান, নাচ যা খুশি তাই।
হয়েছে কি শোনেন, বাসে উঠে দেখি সবাই চুপচাপ বসে আছে। কোনো কথা নেই। পেছনে আশার সাউন্ডবক্সে গান বাজতেসে। আমি ভাবছিলাম কি করা যায়, চিল্লাপাল্লা করার জন্য মনটা ছটফট করছিলো। দায়িত্ব যেহেতু আমার কাছে সো মাসুমকে পাত্তা না দিয়ে আমার পিছনে বসা অ্যাশলে কে বললাম চল ডান্স করি,সাথে সাথে লাফিয়ে উঠলো ও। ওমা, একি মেয়ে, এতো দেখি আমার থেকে ৩ ডিগ্রি উপরে। মনে মনে ভাবলাম যাক মনের মতো কাউকে পেয়েছি।
পেছনে গিয়ে এই কথা বলতেই সবাই রাজি, যেটা আনএক্সপেকটেড ছিলো। এরপর বাসের মধ্যে যা হলো ২/৩ আওয়ারস সেটা আর না বলি। সেই বাস থেকে যে শুরু হইছে তো হইছেই। চিল্লাপাল্লা, হই হুল্লোড় থামছে একদম বান্দরবান এসে বাসে ওঠার আগে। এই ট্রিপটা ছিলো আমার লাইফ-এর বেস্ট ট্রিপ।যারা যারা এই ট্রিপে ছিলো তারা জোর করে ভুলে যেতে চাইলেও ফিরে আসার সময় চাঁদের গাড়ির আড্ডা কাউকে এই ট্রিপ ভুলতে দিবে না । এতো হেসেছি আমরা যেটা বলে বুঝানো যাবেনা।
জীবনে প্রথম দায়িত্ব নিয়ে কিছু করেছি এবং সফল হয়েছি। সবার এতো পজিটিভ রেসপন্স পেয়েছি যেটার যোগ্য হয়তো আমি না। সবার প্রতি আমার অনেক অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা।
পাহাড়ের একটা জিনিসই খুব খারাপ লাগে, হুট করে সবাইকে আপন করে দেয়, আর ফিরে যাওয়ার সময় তীব্র একটা কষ্টকর অনুভূতি। ব্যাক করার সময় যখন বাসে উঠি তখন মনে হয় ‘আরও কিছু বলার ছিলো, সবার সাথে একসাথে তারা দেখার বাকি ছিলো, অনেক পাগলামি করার ছিলো,কথা ছিলো। আরোও কিছু গল্প বলার বাকি ছিলো।’
তানিয়া তাহসিন