রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন

বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

বান্দরবানের নাফাখুম জলপ্রপাত বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাতগুলোর তালিকায় নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছে। এই ঝর্ণার নামকরণের কথা বলতে হলে শুরুতেই বলতে হবে রেমাক্রি নদীর কথা। এই নদীতে নাফা নামে এক ধরনের মাছ আছে, যেটি সবসময় স্রোতের বিপরীত দিকে চলে। এভাবে চলতে যেয়ে মাছগুলো লাফিয়ে ঝর্ণা পার হওয়ার সময় এদের কাপড় বা জালে আটকে ফেলে স্থানীয় আদিবাসীরা। এই আদিবাসীদের বসতবাড়িগুলো দেখা যায় সবুজে ঘেরা পাহাড়ের আনাচে-কানাচে।

পাহাড়ের ঢালে টিন আর বেড়া দেওয়া ঘরগুলোকে মারমা ভাষায় ‘খুম’ বলা হয়, যার অর্থ জলপ্রপাত। আর এভাবেই নাফা আর খুম শব্দ দু’টি মিলে ঝর্ণার নাম হয়েছে নাফাখুম। চলুন, জেনে নেওয়া যাক নাফাখুম জলপ্রপাতে যাওয়ার উপায়।

ঢাকা থেকে বান্দরবান 

ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে বিভিন্ন ধরনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এগুলোর মধ্যে ননএসিগুলোর ভাড়া জনপ্রতি ৭‘শ থেকে ৮‘শ টাকা। আর এসিগুলো জনপ্রতি এক হাজার থেকে ১৬‘শ টাকা ভাড়া নেয়।

আর ট্রেনে যেতে হলে ঢাকা থেকে প্রথমে চট্রগ্রাম যেতে হবে। শ্রেণিভেদে ট্রেনের ভাড়া পড়বে ৩৪৫ থেকে শুরু করে ১২২৯ টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম পৌঁছে বহদ্দারহাট বাস স্টেশন থেকে বান্দরবানের বাস ধরতে হবে। বাস ভাড়া জনপ্রতি ২২০ টাকা করে নিতে পারে। এছাড়া দামপাড়া বাস স্টেশন থেকেও বান্দরবানের বাস ছাড়ে।

চট্রগ্রাম থেকে গাড়ি রিজার্ভ নিয়েও বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা হওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে গুনতে হবে ২,৫০০ থেকে ৩,৫০০ টাকা।

বান্দরবান থেকে থানচি

বান্দরবান থেকে বাসে কিংবা জিপ রিজার্ভ নিয়ে থানচি যাওয়া যায়। বান্দরবানের থানচি বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় থানচিগামী লোকাল বাস পাওয়া যায়। এগুলোতে বাস ভাড়া মাথাপিছু ২‘শ টাকা, আর সময় লাগতে পারে ৪-৫ ঘণ্টার মতো।

জিপ রিজার্ভ নিয়ে অথবা চাঁন্দের গাড়ি নিলে খরচ পড়বে পাঁচ হাজার ৫‘শ থেকে ছয় হাজার টাকা। একটি গাড়িতে ১২ থেকে ১৪ জন যাওয়া যায়। এই যাত্রাপথে দেখা মিলবে মিলনছড়ি, চিম্বুক ও নীলগিরি।

থানচি থেকে রেমাক্রি

থানচি আসার পর একজন গাইড ঠিক করতে হবে এবং এটা আবশ্যিক। দল বড়-ছোট যাই হোক না কেন, গাইড ছাড়া নাফাখুম যাওয়া যায় না। এখানে উপজেলা প্রসাশন কর্তৃক প্রত্যয়িত গাইড পাওয়া যায়। প্রথমদিন ঘুরে পরের দিন থানচি ফিরে আসা পর্যন্ত গাইড ফি ১৫‘শ টাকার মতো।

গাইড ঠিক করার পর কাজ হচ্ছে থানচি বিজিবি ক্যাম্প বা থানা থেকে অনুমতি নেওয়া। গ্রুপের সবার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, কোথায় যাবে, কয়দিন থাকবে সবকিছু কাগজে লিখে ক্যাম্পে জমা দিতে হবে। এই অনুমতি নেওয়ার কাজে গাইড সম্পূর্ণ সহায়তা করবে।

আর মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, বিকেল ৩টার পর থানচি থেকে আর রেমাক্রি যাবার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই অবশ্যই ২টার মধ্যে থানচি থাকা জরুরি। অন্যথায় ওইদিন থানচি থেকে পরের দিন সকালে রেমাক্রির উদ্দেশে রওনা হতে হবে।

অনুমতি পাওয়ার পর এবার থানচি ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করার পালা। ৪-৫ জন ধরে এমন নৌকার ভাড়া চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই ভাড়ায় রেমাক্রি পর্যন্ত যেয়ে পরদিন আসা যাবে, যেখানে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগবে।

সাঙ্গুতে পানি কম থাকলে কিছু কিছু জায়গায় নৌকা থেকে নেমে হাটা শুরু করতে হয়। এই যাত্রাপথে সাঙ্গু নদীর রূপ ছাড়াও বিমোহিত করবে পদ্মমুখ, ভূ-স্বর্গ খ্যাত তিন্দু, রাজাপাথর বড়পাথর এলাকা ও রেমাক্রি ঝর্ণা।

রেমাক্রি থেকে নাফাখুম

খুব সকালে বান্দরবান থেকে রওনা দিলেও রেমাক্রি পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে যায়। তাই সেই দিন রাতে রেমাক্রি বাজার থেকে পরের দিন সকালে নাফাখুম যাত্রা শুরু করতে হয়।

এবার রেমাক্রি থেকে স্থানীয় আরও একজন গাইড ঠিক করতে হবে। এই গাইডের জন্য ৫‘শ টাকা খরচ করা লাগবে। অবশ্য থানচি থেকে আসা আগের গাইডই এই নতুন গাইডকে ঠিক করে দিবে। রেমাক্রি খাল ধরে হেঁটে রেমাক্রি থেকে নাফাখুম যেতে ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com