1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
বাণিজ্যের সঙ্গে ইউরোপে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে পর্যটন
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

বাণিজ্যের সঙ্গে ইউরোপে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে পর্যটন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫

কভিড মহামারীর পর ইউরোপে পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। লাখ লাখ ভ্রমণপ্রেমীর দেখা মিলছে এ মহাদেশের অতিচর্চিত শহরগুলোয়।

কেউ ঘুরছেন বার্সেলোনায়, কেউবা সান্তোরিনিতে। আবার কেউ ব্যস্ত রোম বা প্যারিসে সেলফি তোলায়। এত ভিড় একদিকে যেমন অর্থনীতিতে গতি এনেছে, অন্যদিকে শহরগুলোর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ফেলেছে চাপ।

আবাসন খরচ বাড়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে পানির সংকট। আবার ভিড় বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঐতিহাসিক স্থানও। ফলে ইউরোপে প্রশ্ন উঠছে—কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বাড়তি পর্যটন? কীভাবেই-বা স্থানীয়দের জীবন আর পর্যটনের ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব?

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ব্যারোমিটারের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ইউরোপ প্রায় ৭৪ কোটি ৭০ লাখ আন্তর্জাতিক পর্যটক পেয়েছে, যা বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ভ্রমণ করেছে দক্ষিণ ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোয়।

এত পর্যটকদের ভিড়ের পেছনে কাজ করছে একাধিক বিষয়। সস্তায় ফ্লাইট মিলছে, ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে সাহায্য করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ ধাঁধানো ছবি ও ধনী দেশগুলোর মানুষের ভ্রমণে বাড়তে থাকা আগ্রহ—সব মিলিয়ে ইউরোপের পর্যটনের চাপ বেড়েই চলেছে।

ইউরোপের জনপ্রিয় শহরগুলোয় এ ভিড় এখন স্থানীয়দের জন্য চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন আগে ভেনিসে বিয়ের আয়োজন করে প্রতিবাদের মুখে পড়েন শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস।

স্পেনের বার্সেলোনায় বাসিন্দারা সম্প্রতি প্রতিবাদে রাস্তায় নামে, কেউ কেউ ওয়াটার গান দিয়ে পর্যটকদের গায়ে পানি ছিটিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করন। প্ল্যাকার্ডে ‘আরেকজন পর্যটক মানে একজন কম বাসিন্দা!’ লিখে অনেকে নিজের দাবিও তুলেছেন। মূলত, শহরের আবাসন খরচ এতটাই বেড়ে গেছে যে অনেক স্থানীয়ের পক্ষে সেখানে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাড়তি চাপ সামাল দিতে স্পেন সরকারও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি অনলাইন প্লাটফর্ম এয়ারবিএনবিতে থাকা ৬৬ হাজার অবৈধ ভুক্তি সরিয়ে ফেলেছে।

বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৮ সালের মধ্যে শহরের ১০ হাজার স্বল্পমেয়াদি ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

ইতালিও একই সমস্যায় ভুগছে। রোম, ভেনিস, ক্যাপ্রি ও ফ্লোরেন্সের মতো জনপ্রিয় শহরগুলোয় প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত উফিতসি গ্যালারিতে এত বেশি লোক আসছে যে ভিড় নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ এআই-ভিত্তিক আগাম টিকিট বুকিংয়ের চিন্তা করছে।

ইতালির পর্যটনমন্ত্রী ড্যানিয়েলা সান্তানচে বলেন, ‘পর্যটন যেন হুমকি না হয়ে সুযোগ হয়, সেদিকেই নজর দিচ্ছি।’

তার দাবি মোট ভ্রমণের ৯৬ শতাংশ দেশের মাত্র ৪ শতাংশ এলাকাকে প্রভাবিত করে। তাই এখনই সমস্যা বলতে নারাজ তিনি।

গ্রিসেও সমস্যা প্রকট। মাত্র ১ কোটির বেশি মানুষের দেশটি গত বছর ভ্রমণ করেছে ৪ কোটি পর্যটক। সান্তোরিনি, মাইকোনসসহ জনপ্রিয় দ্বীপগুলোয় গ্রীষ্মকালে দেখা দিয়েছে পানি ও বিদ্যুৎ সংকট। ফলে সরকার পানি সরবরাহ, সমুদ্রের পানি পরিশোধন ও পর্যটকদের জন্য ‘ক্রুজ ট্যাক্স’ চালুর মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।

ফ্রান্সেও পরিস্থিতি জটিল। গত বছর দেশটিতে ভ্রমণ করেছে ১০ কোটি আন্তর্জাতিক পর্যটক। বিশ্বে সর্বাধিক দর্শনার্থী সামাল দেয়া জাদুঘর প্যারিসের লুভর মিউজিয়াম কর্মীদের ধর্মঘটের কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। ভেনিসে পর্যটকদের জন্য চালু করা হয়েছে ৫-১০ ইউরোর প্রবেশ ফি। গ্রিসের আকরোপলিসে একসঙ্গে বেশি লোক ঢুকতে না দেয়ার জন্য চালু করা হয়েছে ধাপে ধাপে প্রবেশের ব্যবস্থা।

তবে সমস্যা শুধু ভিড় বা অবকাঠামোর নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত পর্যটনের ফলে শহরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধারাও বদলে যাচ্ছে। বার্সেলোনা ও এথেন্সে বসবাসকারী নগর পরিকল্পনাবিদ অ্যাঞ্জেলোস ভারভারোসিস বলেন, ‘এ অতিরিক্ত ভিড়ে শহরগুলোর স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে যাচ্ছে। গড়ে উঠছে একধরনের পর্যটন নির্ভর মনোকালচার।’

সব মিলিয়ে ইউরোপ এখন বড় এক চ্যালেঞ্জের মুখে। কীভাবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ধরে রেখে নগরজীবন ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা যাবে–তা হলো প্রশ্ন। সঠিক পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণ আর প্রযুক্তির মাধ্যমে সে সমাধানই খুঁজছে ইউরোপ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com