1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
বাংলার মোহে আদি পর্যটকেরা
রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:০২ অপরাহ্ন
Uncategorized

বাংলার মোহে আদি পর্যটকেরা

  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

ছিল না আকাশপথ, উড়োজাহাজ ও মোটর যান। আবিষ্কৃত হয়নি বাষ্পীয় ইঞ্জিন। চলাচলের পথ কণ্টাকাকীর্ণ। এমনই পরিস্থিতিতে বাংলায় ছুটে এসেছেন ভিন দেশ থেকে পর্যটকেরা। কী জানি কিসের টানে এমন এক ভূমিতে আসতে তারা পাড়ি দিলেন হাজার হাজার মাইল। নদী আর জলে টইটম্বুর, উর্বর সবুজ ফসলের মাঠ-ঘাট, সাগর-জলাশয়, মাছে-ভাতে পূর্ণ আর ছিল মসলিন। অথচ তার চেয়ে লোভাতুর ছিল না কিছুই। তবে ছিল সহজ-সরল মানুষ ও আবহমান সংস্কৃতির ধারা। সম্ভত সেই সরল মানুষ ও তাদের গড়ে তোলা সংস্কৃতির ঐশ্বর্যের সমারোহই ভিনদেশিদের আকৃষ্ট করত।

ঠিক কবে থেকে বাংলায় বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে বাংলার ইতিহাস ঘেঁটে প্রাচীনকালে কয়েকজন ভিনদেশি পর্যটক সম্পর্কে জানা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রাচীনকালে আসা কয়েকজন পর্যটক সম্পর্কে কিছু কথা।

কৌটিল্য

কোটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত, যিনি সর্বাধিক খ্রাত চাণক্য হিসেবে। একজন প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক, রাষ্ট্রবিশেষজ্ঞ ও উপদেষ্টা। অর্থশাস্ত্র লিখে যিনি সর্বাধিক সুখ্যাতি পেয়েছেন। রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে তিনি ছিলেন প্রাচীন বাংলার একজন দিকপার। ঘুরে বেড়ানোর নেশাও তার মধ্যে ছিলো। মহান এই মানুষটি বাংলায় আগমন করেছিলেন খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে। কৌটিল্যের লেখনি অনুযায়ী, তৎকালীন সময়ে এই ভূখণ্ড থেকে প্রবাল, শঙ্খের মালা, কাছিমের ছাল ইত্যাদি সংগ্রহ করা হত। পুন্ড্রে (বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী অঞ্চল) রেশমী বস্ত্র তৈরি হতো। কামরূপের জঙ্গল থেকে হাতির দাঁত সংগ্রহ করা হত এবং সেগুলো অলংকার তৈরিতে কাজে লাগত।

ফা হিয়েন

ফা-হিয়েন ছিলেন মূলত প্রাচীন চৈনিক বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী। তিনি মধ্য এশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা ভ্রমণ করেন ও তার ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করেন। ফা-হিয়েনের নামের সঠিক উচ্চারণ সম্ভবত ‘ফাজিয়ান’ বা ‘ফা-সিয়েন’। মাত্র তিন বছর বয়সে বৌদ্ধ সংঘে যোগ দেন ফা-হিয়েন। একসময় তার মধ্যে ভারতে আসার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। ৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পায়ে হেঁটে বাংলায় ভ্রমণে আসেন। একই সাথে ভ্রমণ করেন পাকিস্তান, নেপাল, ভারত ও শ্রীলংকা। তিনি যখন ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তখন তার বয়স সম্ভবত ৬৪ বছর। মধ্য এশিয়া ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে পরিভ্রমণ করে ফা-হিয়েন উত্তর ভারতে উপস্থিত হন। এরপর তিনি একে একে গঙ্গা উপত্যকায় বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিভিন্ন পবিত্র স্থান দর্শন করেন, যেমন বুদ্ধের জন্মভূমি কপিলাবস্ত্ত, বুদ্ধের দিব্যজ্ঞান প্রাপ্তির স্থান বুদ্ধগয়া; বুদ্ধের প্রথম ধর্মোপদেশ প্রদানের স্থান সারনাথ এবং নির্বাণ লাভের স্থান কুশীনগর। তিনি তার ভ্রমণের অধিকাংশ সময়ই মধ্য ভারত বা মগধ পরিভ্রমণ অতিবাহিত করেন। তার লেখা ভ্রমণকাহিনীতে প্রাচীন বাংলার উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন সে সময়ে এখানে চণ্ডাল ছাড়া কেউ প্রাণী হত্যা করত না।

হিউয়েন সাঙ

আনুমানিক ৬০২ খ্রিষ্টাব্দে চীনের লুজহু প্রদেশের গৌসি টাউনের চিনহি গ্রামের সম্ভ্রান্ত ও উচ্চশিক্ষিত পরিবার জন্মগ্রহণ করেন হিউয়েন সাঙ। শৈশব থেকেই তিনি কনফুসিয়াস-এর দর্শন এবং বৌদ্ধ ধর্মে অনুরক্ত হন। ক্রমেই তিনি একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীতে পরিণত হন। সেই সুবাধেই বেরিয়ে পড়েন সমকালিন বিশ্ব ভ্রমণে। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি সর্বাধিক সমাদৃত পরিব্রাজক হিসেবে। আবার অনুবাদ হিসেবেও পেয়েছেন পরিচিত। আনুমানিক ৬৩০-৬৪০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে চীনের এই পরিব্রাজক বাংলা ভ্রমণ করেন। চীন ও ভারতের মধ্যকার যোগসূত্র স্থাপনে তার ব্যাপক ভূমিকা অসাধারণ। মূলত গৌতম বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও নিদর্শন পরিদর্শন এবং অন্যান্য ভিক্ষুদের রচনাবলী সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি এই ভ্রমণ শুরু করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি সমতট, পুণ্ড্র, হরিকেল ও চন্দ্রদ্বীপ জনপদ ভ্রমণ করেন। তার লেখা ভ্রমণকাহিনী থেকে জানা যায সেসময় তিনি সমতটের প্রায় ৩৫টি বিহার ভ্রমণ করেছিলেন। বিশ্বখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ও পরিদর্শন করেন এবং সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে অন্তত আড়াই বছর অধ্যয়ন করেন। বাংলার রূপ-লাবণ্যে হিউয়েন সাঙ মুগ্ধ হয়েছিলেন।

ইং-সিং

সপ্তম শতকে বাংলায় বেড়াতে এসেছিলেন আরেক চীনা নাগরিক ‘ইং সিং’। তিনি হরিকেল ও চন্দ্রদ্বীপ অঞ্চল ঘুরে দেখেছিলেন। তার বর্ণনা মতে, তখনকার সময়ে শালি ধানের ভাত বেশ জনপ্রিয় ছিল। মাষকলাই, তিল, মুগ ও যবের চাষ হত প্রচুর পরিমাণে। নানারকম পিঠা পায়েস ও মিষ্টির চল ছিল। কলাপাতায় গরম ভাত, গাওয়া ঘি, মৌরলা মাছ আর পাট শাক ছিল চরম উপাদেয়। তৎকালীন লোকেরা গবাদি পশু রক্ষায় এবং নানা ধরণের বিপদে-আপদে মন্ত্রের সাহায্য নিত।

এভাবে যুগে যুগে বহু পরিব্রাজক বাংলাদেশ ভ্রমণে এসেছিলেন। ইতিহাসে তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে একেকজন কিংবদন্তি পর্যটক হিসেবে। এই মানুষগুলোই আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে দিক ভ্রমণ বা পর্যটনের সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। প্রাচীন যুগের মতো মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগেও বাংলায় আগমন ঘটেছে অসংখ্য পর্যটকদের। অন্য কোনো লেখায় আমরা তাদের সম্পর্কে জানব।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com