দেশে সক্রিয় ইউরোপের নকল ভিসা চক্র। সার্বিয়া ও পর্তুগালের নকল ভিসা দিয়ে ইউরোপে পাঠানোর নাম করে ভারত, নেপাল ও কম্বোডিয়ার মতো দেশে মানবপাচার করছে সংঘবদ্ধ এই চক্র। আট থেকে পনেরো লাখ টাকার চুক্তিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নকল ভিসা দিচ্ছে চক্রটি। এসব ভিসা নিয়ে দেশবিদেশের বিমানবন্দরে আটক হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। আর নিঃস্ব হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম শ্রীনগরের বাসিন্দা মোহাম্মদ মোবারক কাজ করতেন মালয়েশিয়া। তবে বছর দুয়েক আগে আরও সচ্ছলতার আশায় যেতে চান ইউরোপের যে কোনো দেশে। যোগাযোগ করেন পাশের বাড়ির ইতালি প্রবাসী আশরাফ সবুরের সঙ্গে।
তার সাথে ৮ লাখ টাকায় ইউরোপের দেশ সার্বিয়া যাওয়ার চুক্তি করেন মোবারক। সার্বিয়ার ভিসাও পেয়ে যান। তবে আসল ঘটনা ধরা পড়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র আনতে গেলে। মোবারক জানতে পারেন তার সার্বিয়ার ভিসাটি নকল।
শুধু মোবারকই নয়। ভৈরবের একই উপজেলার এমন পনেরো জনকে দেওয়া হয়েছে সার্বিয়ার নকল ভিসা। প্রত্যেককে গুণতে হয়েছে দশ লাখ করে টাকা। যাদের সবাই প্রতারিত হয়েছেন। এই তালিকায় আছেন ইতালি প্রবাসী আশরাফের নিজের ভাই মামুনও। যিনি মানবপাচার আইনে মামলা করেছেন আদালতে। যার তদন্তে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
তদন্তে জানা গেছে আশরাফ শ্রীনগরের পনেরো যুবককে সার্বিয়া পাঠাতে চুক্তি করেন ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার নামের একটি এজেন্সির সাথে। রাজধানীর শাহজাদপুরের কনফিডেন্স টাওয়ারে তাদের ঠিকানা। কিন্তু ভবনটিতে এমন কোনো অফিসের অস্তিত্ব নেই। অভিযোগ আছে এজেন্সিটির মালিক এম এস আজিজুল হক ও তার স্ত্রী সাফরিনা হক এমন কয়েকশ যুবককে ইউরোপের নকল ভিসা দিয়ে মানুষের কোটি কোটি আত্মসাৎ করেছেন।
সার্বিয়া ও পর্তুগালের নকল ভিসা দেয়ার পাশাপাশি ভারত ও নেপালে মানব পাচারের অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। সিআইডি বলছে, অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
পর্তুগালের দূতাবাস নকল ভিসার তথ্য নিশ্চিত করেছে। শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কাসেম। পাশাপাশি, মানবপাচার থেকে রক্ষা পেতে জনসাধারণকে আরো সচেতন থাকার পরামর্শও দিয়েছেন সিআইডি।