বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

বাংলাদেশের সাফারি পার্ক

  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১

লেখক সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখে গিয়েছেন, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে‘। প্রাণীদের খাঁচাবন্দি জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় সাফারি পার্ক। এই পার্ক চিড়িয়াখানা থেকে একদম ভিন্ন। যেখানে চিড়িয়াখানায় প্রাণীরা থাকে খাঁচায় বন্দি। অন্যদিকে সাফারি পার্কে প্রাণীদের জন্য থাকে উন্মুক্ত পরিবেশ এবং মানুষেরা থাকে গাড়িতে কিংবা বাসে বন্দি অবস্থায়। সহজ কথায়, সাফারি পার্ক হচ্ছে বন্য প্রাণীদের জন্য সৃষ্ট উন্মুক্ত অভয়ারণ্য। যেখানে প্রাণীরা স্বাধীনভাবে খোলামেলা বন্য পরিবেশে বিচরণ করতে পারে।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক :

safari park সাফারি পার্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর। ছবি : মোসতাক আহমেদ সজীব[

বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় ২০১৩ সালে নির্মিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। এই পার্কের অবস্থান ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে। প্রতি মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে পার্কটি। পার্কের ভেতরে বিশ্রামাগারসহ খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। রয়েছে টাইগার ও লায়ন রেস্টুরেন্ট। চারপাশে বিচরণরত বাঘ ও সিংহ দেখতে পাবেন। তবে পার্কের রেস্টুরন্ট গুলোয় তুলনামূলক ভাবে দামটা একটু বেশিই। পার্কের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকেই হাতের ডানে পার্কের মানচিত্র রয়েছে। সেই মানচিত্রের সাহায্যে এক পলকে ধারণা নেয়া যায় পুরো পার্কের সম্পর্কে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে রয়েছে হাজারো প্রাণীদের সমাহার। রয়েছে বিচিত্র সব পশুপাখি। রয়েছে বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, হাতি, সাম্বার, হনুমান, বানর, কুমির। এছাড়াও নির্মিত আছে বিভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য। পার্কে ঝুলন্ত ব্রিজ এবং উপর থেকে পার্কের সীমানা পর্যন্ত দেখার জন্য কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ারও রয়েছে। সম্পূর্ণ পার্কটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত-

বঙ্গবন্ধু চত্বর পার্কের এই অংশ থেকে যেকোনো প্রকার তথ্য জানা যাবে। বঙ্গবন্ধু চত্বরে একটি ন্যাচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম রয়েছে। মিউজিয়ামটি জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্য ও গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয়। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে প্রায় হাজার খানেক প্রজাতির মেরুদণ্ডি ও অমেরুদণ্ডি প্রাণীর দেহাবশেষ।

কোর সাফারি পার্কের এই অংশে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। ১৩৩৫ একর এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত এই অঞ্চল। এত বড় এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে বাসের ব্যবস্থা। বাসের টিকেটের দাম ১০০ টাকা। কোর সাফারি অঞ্চলটি পার্কের মূল আকর্ষণ। কেননা পার্কের প্রাণীরা এখানে বন্য পরিবেশে নিজ মন মত স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, হরিণ, হাতি, নীল গাইয়ের মত প্রাণীদের আপনার বাসের চারপাশে হাঁটাচলা করতে দেখতে পাবেন। জেব্রা, জিরাফের মত আফ্রিকান বিভিন্ন প্রাণীদেরও বিচরণ করতে দেখা যাবে এই অঞ্চলে।

সাফারি কিংডম সাফারি কিংডম অঞ্চলটি প্রায় ৫৭৫ একর জমি নিয়ে গঠিত। পাখি প্রেমিকদের জন্য রয়েছে পাখিশালা। রয়েছে দেশি-বিদেশি পাখিদের বিশাল সংগ্রহ। এছাড়াও পার্কের এই অঞ্চলটিতে ঘুরে যেতে পারেন জিরাফ ফিডিং স্পট, পেলিকেন আইল্যান্ড, ক্যঙ্গারু এভিয়ারি, ম্যাকাউ ল্যান্ড, প্রকৃতি বিক্ষন কেন্দ্র, ধনেশ এভিয়ারি, এগ ওয়ার্ল্ড এবং বায়োডাইভারসিটি পার্কের মত জায়গাগুলো।

জীব বৈচিত্র্য পার্ক বাটারফ্লাই পার্ক, ক্রোকোডাইল ও লিজার্ড পার্ক আছে এই অঞ্চলটিতে। আরও রয়েছে স্নেক পার্ক। এখানে আছে বিভিন্ন রঙ বেরঙের সাপ।

বিস্তৃত এশীয় পার্ক এক্সটেনসিভ এশিয়া সাফারি অঞ্চলটি প্রায় ৮২৪ একর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চলে এশীয় বিভিন্ন তৃণভোজী, সরীসৃপ, উভচর, এবং মাংসাশী প্রাণীর সমাগম রয়েছে। রয়েছে বন্য পরিবেশে হাতির আশ্রম। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আটটি জলধারা এবং দুটি কৃত্রিম হ্রদের ব্যবস্থা আছে। যা পার্কের পশুপাখিদের পানির চাহিদা পূরণ করে। হ্রদে বোটিং-য়ের সুবিধাও রয়েছে। অনেকটা থাইল্যান্ডের সাফারি পার্কের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে এই পার্কটি।

ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক :

dulahazra-safari-park-coxsbazar
ছবি : ভ্রমণ গাইড

ডুলাহাজরা সাফারি পার্কটি কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া উপজেলায় অবস্থিত। এই পার্কের অপর নাম ‘ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক’। পাহাড় পর্বতেঘেরা এই অভয়ারণ্যটি ১৯৮০-৮১ সালে হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে চালু করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে হরেক প্রজাতির জীব বৈচিত্র্যের বসবাস স্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে এই পার্কটি। প্রতিবছর দেশ বিদেশের লাখো পর্যটক এখানে ভিড় জমায় এখানে। পার্কের প্রবেশ মূল্য মাত্র ৫০ টাকা। পার্কের আয়তন ৯০০ হেক্টর। পুরো অঞ্চলটি এক নজরে দেখার জন্য প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে হাতের বাম পাশে রয়েছে একটি ম্যাপ। যার সাহায্যে আপনি কোথায় কোন প্রাণীর বসবাস তা সম্পর্কে জানতে পারবেন। উঁচু-নিচু, আঁকাবাকা ছায়া ঘেরা পার্কের পথে পায়ে হেঁটেই ঘুরতে পারবেন। চারপাশের চির সবুজ বন, পাখির কিচির মিচির সব মিলিয়ে আপনাকে পাহাড়ি জঙ্গলের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি দেবে আপনাকে। পথের মাঝে বিশ্রাম নেয়ার জন্য ছাউনি ও বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বাসের সুবিধা। পায়ে না হেঁটে বাসে চড়ে পাহাড়ি উঁচু-নিচু রাস্তাগুলো উপভোগ করতে পারেন। সময়ের স্বল্পতা থাকলে বাসে করে পুরো এলাকা সহজে দেখে শেষ করতে পারবেন। অন্যথা পায়ে হেঁটে দেখাই উত্তম। পার্কের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে বামের রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে, পুরো পার্ক ঘুরে ডানের রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতে পারবেন। জীবন্ত প্রাণীর পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ভাস্কর্য। যা আপনাকে রোমাঞ্চিত করে তুলবে। এছাড়াও পার্কটিতে রয়েছে প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক জাদুঘর। জানা-অজানাকে জানতে রয়েছে তথ্য শিক্ষা কেন্দ্র, রয়েছে বিশ্রামাগার এবং পার্কের সম্পূর্ণ নাজারা দেখার জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ারের সুবিধা। এর উপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারবেন পার্কের অপার সৌন্দর্য। দেখতে পাবেন প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘ ও সিংহের অবাধ বিচরণ। তবে ওয়াচ টাওয়ারের উপর হুরুস্থুল করবেন না। খুব সাবধানতা অবলম্বন করবেন। ভুলে নিচে পরে গেলে কিন্তু বাঘ বা সিংহের পেটে চলে যেতে পারেন। ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে বসবাস রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পশুপাখির। রয়েছে হনুমান, ময়ূর, স্বাদুপানির ও লোনা পানির কুমির, সাপ, বনগরু, হাতি, গয়াল, জেব্রা, জিরাফ, বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, বন্য শুকরসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। দেখা মিলবে কাদামাখা বিশাল জলহস্তীরও। এদের অদ্ভুত ভাবে পানিতে ভেসে থাকা, কাদামাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া এবং বিশাল বড় হা করে খাবার গিলে খাওয়া আপনাকে অবাক হতে বাধ্য করবে। এছাড়াও রয়েছে নানা প্রজাতির হরিণ। যেমন : চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, সম্বর হরিণ, প্যারা হরিণ ইত্যাদি। পশু-পাখির পাশাপাশি এই পার্কে রয়েছে দুর্লভ ও মূল্যবান বৃক্ষবৃক্ষাদি। গাছে গাছে দেখতে পাবেন পাজি বানরের লাফালাফি। শুনতে পাবেন বাঘের গর্জন। মাঝ পথে দেখা হয়ে যেতে পারে গাছে শুয়ে থাকা ছোট কালো ভাল্লুকের সাথেও। পার্কের ভেতরে একটি দর্শনীয় বাংলোর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রবেশ ফি দিয়ে এর ভেতরে যাওয়া লাগে। শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা, দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ৫০ টাকা।

সাফারি পার্কের উদ্দেশ্য :


১। বন্য প্রাণী সংরক্ষণে গণসচেতনতা সৃষ্টি

২। ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টি

৩। পর্যটন শিল্পের বিকাশ

৪। উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ

৫। দারিদ্র্য বিমোচন

৬। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা

৭। বিরল ও বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণীর উন্নয়ন সাধন

৮। প্রাণী গবেষণা

লামিয়া আলম  

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com