শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে সেভেন সিস্টার্স ও পাকিস্তান নিয়ে কেন চিন্তিত ভারত

  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

গত দেড় দশকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নতির কথা বলা হলেও ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে সেই সম্পর্কের পতন ঘটে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক মোটামুটি সচল থাকলেও ভিসা বন্ধ। জনসাধারণ পর্যায়েও সম্পর্কের একটা বড় অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর সেভেন সির্স্টার্স নিয়ে উদ্বেগ ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ভারতে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়েও চিন্তিত দিল্লি।

ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বহু বছর ধরে বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা করছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার ভারতের কাছে একটি ‘এক্সপেরিমেন্টাল গর্ভনমেন্ট’ হিসেবে বিবেচিত। তাই আওয়ামী লীগের প্রস্থানে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়ছে, যা ২০০১-০৬ সময়কালের খারাপ সম্পর্ক ও সহিংস কর্মকাণ্ডের ইতিহাস স্মরণ করায়। সেই সময়ে বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং বাইরের শক্তির প্রভাব ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকারী ছাত্রনেতা এবং বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে ভারত যেসব বার্তা পেয়েছে সেটি নিয়ে তাদের অস্বস্তি আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আগে ভারতের নর্থ-ইস্টে ইনসার্জেন্ট অনেকগুলো ক্যাম্প তৈরি হয়েছিল উল্লেখ করে শ্রীরাধা দত্ত বলেন, এটা নিয়ে একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।

এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের গতি প্রকৃতি ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ বর্তমান সরকারের সময়ে পাকিস্তান থেকে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে। অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ নিয়ে ভারতবিরোধী কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করতে পারে। এছাড়া পাকিস্তান থেকে অস্ত্র কেনার খবর রটা এবং জিন্নাহর জন্মদিন উদযাপনও ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ভিত্তিহীন তথ্য ও গুজব ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে শ্রীরাধা দত্ত বলেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এমন স্পষ্ট বার্তা মিলছে না, আর সামাজিক মাধ্যমে গুজব পরিস্থিতি জটিল করছে। তিনি দু’দেশের মধ্যে ধর্ম নিয়ে টানাপোড়েনকে অপ্রত্যাশিত বলে উল্লেখ করে সম্পর্ক সুন্দর রাখার আহ্বান জানান।

এদিকে, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির মিছিলে সদস্য সচিব আখতার হোসেন শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার সমালোচনা করেন এবং ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানান। সীমান্ত হত্যা ও পানির ন্যায্য হিস্যার ইস্যুতে নতজানু নীতির সমালোচনা করে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিলে সামনের সারিতে অংশ নেয়া তাজনুভা জাবিন বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সাথে শত্রুতা নয়, সমমর্যাদার সম্পর্ক চায়। এছাড়া ভারতে বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া বাড়াবাড়ি বলে দাবি করে ঢাকায় বিভিন্ন কূটনীতিক মিশন ও রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করেছে বাংলাদেশ সরকার।

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েনের সবচে উদ্বেগের বিষয় হলো ভারত-বাংলাদেশ জনগণের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতির দিকটি।

ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির মনে করেন দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের এই নেতিবাচক অবস্থাটি নজিরবিহীন।

তিনি বলছেন জনগণের পর্যায়ে সম্পর্কের যে উত্তেজনা তারই প্রতিফলন হলো ভারতে বাংলাদেশ মিশনে হামলা এবং বাংলাদেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ।

এম হুমায়ুন কবির আরও বলেন,  দুই দিকেই কেমন যেন একটা সাজ সাজ রব মনে হচ্ছে এবং সেটা প্রধানত জনগণ পর্যায়ে। জন উত্তেজনার একটা নতুন জায়গা তৈরি হয়েছে যেটা কিন্তু আশঙ্কার কারণ। কেন আশঙ্কা কারণ হলো, এতে করে ভারতে বাংলাদেশিদের কোনো হোটেলে থাকতে দিচ্ছে না। সীমান্তে এসে ভারতীয়রা বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে বা বাংলাদেশ ঢুকবার চেষ্টা করছে, পণ্যসামগ্রী আদান প্রদানে বাধা প্রদানের চেষ্টা করছে। এইগুলো হলো আমার কাছে মনে হয় আশঙ্কার জায়গা।

সার্বিকভাবে দুদেশের সম্পর্কের গতি প্রকৃতি এখন নেতিবাচক বার্তাই দিচ্ছে বলে বিবিসিকে বলেন এম হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ভারত ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে মেসেজ যেটা যে ভারত আমার বর্তমান বাস্তবতার সাথে সহযোগী হতে রাজি নয়। মেসেজটা এখনো নেতিবাচক রয়ে গেছে ভিসা না দেয়ার কারণে। অন্যান্য সার্ভিসগুলো হচ্ছে না সেগুলো নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। আগরতলাতে আমরাও অফিস বন্ধ করে দিয়েছি, ওখানেও একইরকমভাবে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে যে বাংলাদেশ আর আমাদের ভিসা দেবে না।

৫ আগস্ট পরবর্তী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলাপ আলোচনার জায়গাটিও সংকুচিত হয়ে গেছে বলে পর্যবেক্ষকরা বলছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আলাপ আলোচনা দরকার বলে উল্লেখ করে এম হুমায়ুন কবির।

তিনি বলেন, স্বাভাবিক ক্ষেত্রে যে ধরনের সরকারি বেসরকারি জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগগুলি হয় সবগুলি যোগাযোগ কিন্তু স্থবির হয়ে আছে। কাজেই এগুলোকে আবার চালু করা দরকার। তবেই আস্তে আস্তে সম্পর্কটা আবার স্বাভাবিক জায়গায় আসবে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com