শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ‘পাঠান’

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩

বহু বিতর্ক আর অনিশ্চয়তা শেষে বলিউডের ছবি ‘পাঠান’ বাংলাদেশের সিনেমাহলগুলোতে মুক্তি পেতে চলেছে, এটা নতুন খবর নয়। তবে বলিউডের আন্তর্জাতিক বাজারে এই নতুন দেশটির যুক্ত হওয়ার খবরকে হিন্দি সিনেমার দুনিয়া যেরকম সাড়ম্বরে স্বাগত জানাচ্ছে, তা প্রায় অভূতপূর্ব। 

‘পাঠান’ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যশরাজ ফিল্মসের পক্ষ থেকে তো ঘোষণাই করা হয়েছে, ‘‘১৯৭১ সালের পর এই প্রথম কোনও হিন্দি মুভি বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পাবে। ‘পাঠান’কে এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ।’’

বস্তুত এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ১১০টি দেশে বলিউডের সিনেমা নিয়মিত মুক্তি পায়, সেসব দেশের লোকজন থিয়েটারে গিয়ে বড় পর্দায় হিন্দি সিনেমা দেখেন– যার বেশিরভাগই সাবটাইটেলে। তবে ঘরের পাশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী বাংলাদেশ এতদিন এই তালিকার বাইরে ছিল। প্রায় বাহান্ন বছর বাদে সেই বাংলাদেশও যে হিন্দি সিনেমার জন্য তাদের দ্বার উন্মুক্ত করছে, এটাকে বলিউড খুব তাৎপর্যপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছে।

বিখ্যাত বলিউড সাময়িকী ফিল্মফেয়ারের পক্ষ থেকে টুইট করা হয়েছে, ‘‘শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম হিন্দি ভাষার কোনও টাইটেল সে দেশে থিয়েট্রিকাল রিলিজ পাবে।’’

বলিউডের সুপরিচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ‘ভাইরাল ভায়ানি’ ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন, ‘‘পাঠান’ হবে বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া প্রথম হিন্দি ছবি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার হিন্দি ছবির প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, তবে এখন তা তুলে নেওয়া হয়েছে’

যদিও এই বক্তব্যে বেশ কিছু তথ্যগত ভুল আছে।

যশরাজ ফিল্মসের পক্ষ থেকে যিনি আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিবিউশনের দিকটি দেখেন, সেই নেলসন ডি’সুজা বলেছেন, ‘বিভিন্ন দেশ, জাতি আর সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে সিনেমা। সিনেমার আবেদন সীমান্ত পেরিয়ে যায়, মানুষকে কাছাকাছি আনতেও বিরাট ভূমিকা পালন করে এই মাধ্যম।’

তিনি আরও জানান, ‘‘সারা পৃথিবীতে ঐতিহাসিক ব্যবসা করার পর ‘পাঠান’ যে এখন বাংলাদেশের দর্শকদেরও আনন্দ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে তাতে আমরা সত্যিই রোমাঞ্চিত।’’

ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশের সিনেমা হলে ‘পাঠান’র বাণিজ্যিক মুক্তির মধ্য দিয়ে সে দেশে হিন্দি সিনেমার খুব উজ্জ্বল এক সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে বলিউড।

যশরাজ ফিল্মস যেমন পরিষ্কারই বলছে, ‘বহু বছর ধরে আমরা জানি বাংলাদেশে শাহরুখ খানের বিপুল সংখ্যক ভক্ত আছেন। ফলে সে দেশে ভারতের সংস্কৃতি আর সিনেমার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এর চেয়ে ভাল ছবি আর কিই বা হতে পারত?’

ঘটনা হলো, পূর্ব পাকিস্তান আমলেও কিন্তু বিভিন্ন হিন্দি সিনেমা ঢাকা বা চট্টগ্রামের সিনেমা হলগুলোতে নিয়মিত মুক্তি পেতো। ১৯৬৫’র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরও তাতে ছেদ পড়েনি, কারণ সেখানে ভালো হিন্দি ছবির রীতিমতো চাহিদা ছিল।

মুম্বাইতে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসে মিডিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক ড. হরমনপ্রীত কাউর বলছিলেন, ‘বলিউডের সব ছবিই যে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে যেত তা নয়, তবে বেশিরভাগ হিট ছবিই যেত। যে ছবিই ভারতে ভালো ব্যবসা করতো, সে দেশের পরিবেশকরা সেই ছবিগুলোকেই ওখানে নিয়ে যেতেন। সরকারি পর্যায়েও তেমন কোনও বিধিনিষেধ ছিল না।’

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলছিলেন, ‘আমি যতদূর জানি ১৯৭১-এ মুক্তি পাওয়া ‘কাটি পাতাং’-ই হলো শেষ হিন্দি ছবি, যেটা ঢাকার সিনেমা হলেও দেখানো হয়েছিল। শক্তি সামন্তের পরিচালনায় রাজেশ খান্না ও আশা পারেখের এই সুপারহিট ছবিটি ভারতে মুক্তি পায় ১৯৭১-এর ২৯ জানুয়ারি, তার কিছু দিন পরেই সেটি পূর্ব পাকিস্তানেও যায় বলে জেনেছি।’

কিন্তু একাত্তরের মার্চ থেকেই বাংলাদেশে শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতার লড়াই। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন আর বর্বরতার বিরুদ্ধে যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, সেই উত্তাল পর্বে বিদেশ থেকে সিনেমা নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ছিল না। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দেশজ বাংলা ভাষার সিনেমাকে সুরক্ষা দেওয়ার যুক্তিতে বন্ধ করা হয় হিন্দি ছবির আমদানি।

এতদিন পর এসে আবার বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ শর্তসাপেক্ষে হলেও বছরে দশটি হিন্দি (মূলত সাফটা চুক্তির দেশগুলোর ছবি) ছবি আনার অনুমতি দিয়েছে।

বলিউডের সুপরিচিত ফিল্ম সমালোচক সুচরিতা ত্যাগীও মনে করছেন, হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় ‘সুখবর’।

সুচরিতা ত্যাগী বলছিলেন, ‘বাংলাদেশে বিশেষ করে বলিউডের তিন খানের জনপ্রিয়তা যে আকাশপ্রমাণ সেটা সবাই জানেন। আমাদের দুই দেশের সংস্কৃতিতেও প্রচুর মিল। ফলে ১৮ কোটি মানুষের ওই দেশটিতে বলিউডের যে বিপুল সম্ভাবনা আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’

‘‘পাঠানের কথা তো ছেড়েই দিলাম– সারা দুনিয়াতেই ছবিটি রেকর্ড ব্যবসা করেছে, বাংলাদেশেও নির্ঘাত করবে। তবে এছাড়াও বলিউডে বহু ছবি তৈরি হচ্ছে, যেগুলো বাংলাদেশেও অবধারিত হিট করবে। যেমন এ বছরের শেষ দিকেই মুক্তি পাওয়ার কথা মেঘনা গুলজারের ‘শ্যাম বাহাদুর’। একাত্তরের যুদ্ধে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশকে নিয়ে ওই ছবিটিতে নাম ভূমিকায় দেখা যাবে ভিকি কৌশলকে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশেও ‘স্যাম বাহাদুর’কে নিয়ে তুমুল আগ্রহ থাকবে’’, বলছিলেন সুচরিতা।

ফলে ‘পাঠান’ই শেষ নয়, বরং এই ব্লকবাস্টারকে দিয়েই বাংলাদেশে একটি লম্বা ইনিংসের সূচনা করার স্বপ্ন দেখছে বলিউড।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com