রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:১১ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের চারটি এয়ারলাইনসে ২৮ জন নারী পাইলট

  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫

পুরুষের তুলনায় শ্রমের অংশগ্রহণে পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে প্রায় সব ধরনের পেশায় আছেন নারীরা। সাধারণ পেশার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও সমানতালে কাজ করছেন নারীরা। তেমনি বিমান চালাতে পাইলটের পেশাতেও এসেছেন অনেক নারী। এ পেশায় আসা নারীরা বলছেন, নারী হিসেবে যদিও আমাদের ঘরে-বাইরে দুই জায়গাই সামলাতে হয়, কিন্তু কাজের জায়গায় সবাই সমান।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের চারটি এয়ারলাইনসে কর্মরত আছেন মোট ২৮ জন নারী পাইলট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাইলট কর্মরত আছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে। রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থায় বর্তমানে কর্মরত আছেন মোট ২৪ জন পাইলট। এর মধ্যে ক্যাপ্টেন হিসেবে আছেন ৬ জন, ফার্স্ট অফিসার আছেন ৯ জন এবং ক্যাডেট পাইলট হিসেবে কর্মরত আছেন ৯ জন নারী। ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসে ক্যাডেট পাইলট হিসেবে আছেন ২ জন নারী। নভো এয়ারে আছেন ১ জন নারী ফার্স্ট অফিসার এবং এয়ার অ্যাস্ট্রাতে আছেন ১ জন নারী ফার্স্ট অফিসার।

ক্যাপ্টেন সারওয়াত সিরাজ অন্তরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৩৭-৮০০-এর পাইলট হিসেবে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মা ছিলেন একজন কেবিন ক্রু। ফলে বিমানে ওঠা, ককপিটে পাইলটদের কাছে গিয়ে বিমান চালানো দেখা এগুলো আমার কাছে খুব পরিচিত একটি বিষয় ছিল। তাই ছোটবেলা থেকেই আমি স্বপ্ন দেখি পাইলট হওয়ার। পরে তা পূরণও হয়েছে। তবে আমরা যে কাজই করি না কেন যখন সংসার-সন্তানের বিষয় আসে তখন সে দায়িত্ব ওই নারীর কাঁধেই পড়ে। ফলে আমাদের দুটোই সামলাতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমার পরিবার আমাকে অনেক সাপোর্ট দেয়। যেমন যখন লং টাইমের জন্য ফ্লাই করি তখন সন্তানদের দেখভাল আমার স্বামী করেন।

তিনি না পারলে বাবা-মা থাকেন। আবার অনেকে যাদের পারিবারিক সাপোর্ট থাকে না তারা সার্বক্ষণিক কাজের একজন মানুষ রাখেন বাসায়। কারণ আমাদের কাজটা এমন যে, আমরা সাধারণ ডে-কেয়ার সেন্টারের ওপর নির্ভর করতে পারি না সন্তান রাখার জন্য। আমাদের চাকরির সময় আর ডে-কেয়ারে বাচ্চাদের থাকার সময় ম্যাচ করে না। ফলে আমাদের একটি অলটারনেটিভ সাপোর্ট সিস্টেম রাখতে হয়। আর এ ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।’

অনেকটা একই কথা বলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট ক্যাপ্টেন অনিতা রহমান। তিনি বলেন, পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া আসলে এমন পেশায় নারীদের কাজ করা সম্ভব নয়। একজন নারী ৪ দিন, ৭ দিন, ১০ দিনের জন্য বাসার বাইরে, দেশের বাইরে থাকছেন এটা অনেক পরিবারই মানতে চান না। সে ক্ষেত্রে আসলে পরিবার যদি তেমন প্রগতিশীল মানসিকতার না হয় তাহলে নারীরা এগোতে পারেন না। আমার ক্ষেত্রে আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা যেমন সাপোর্ট দেন তার থেকে বেশি সাপোর্ট এখন আমার হাসবেন্ড দেন। কারণ আমাদের ঘরে ছোট সন্তান আছে। তাকে আমরা একা রাখতে চাই না। ফলে আমি যখন থাকি না তখন তিনি নিশ্চিত করেন যে তিনি বাসায় থাকছেন। ফলে পারিবারিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

নতুন যেসব নারী এই পেশায় আসতে চান তাদের উদ্দেশে অনিতা বলেন, এই পেশায় আসতে হলে মনোবল শক্ত থাকা জরুরি। কারণ আপনি এমন একটা কাজে যাচ্ছেন যেখান থেকে হঠাৎ কিছু শুনলেও আপনি দ্রুত ঘরে ফিরতে পারবেন না। যেমন- আপনি ফ্লাইটে চলে গেছেন কানাডা। তখন শুনলেন আপনার সন্তানটি অসুস্থ। কিন্তু তৎক্ষণাৎই আপনি আসতে পারবেন না এবং সে সময় আপনার কাজটি ঠিকভাবে শেষ করেই দেশে ফিরতে হচ্ছে, যেখানে অনেক সময় লাগছে। সুতরাং সে সময় আপনার মনোবল ঠিক রেখে কাজটি ঠিকভাবে শেষ করে আসতে হবে।’

অন্যদিকে অন্তরা বলেন, যেকোনো কাজেই আপনাকে পারফর্ম্যান্স দেখাতে হয়। যেমন- অনেক সময় নারীদের শারীরিক অসুস্থতা থাকে। তখন স্বভাবতই নারীদের দীর্ঘ সময় বসে থাকা কষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এটি আপনার কাজ সুতরাং তা ঠিকভাবেই করতে হবে। এতে আপনার অফিসও বুঝবে, যে সমস্যাই থাকুক আপনি দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করছেন। তখন তাদের আস্থাটাও বাড়ে।

তারা বলছেন, আগে অ্যাভিয়েশন সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ নেক কম ছিল। কিন্তু এখন তা অনেক বেড়েছে। এখন এই সেক্টর নারীদের আরও কর্মসংস্থান করতে প্রস্তুত হয়েছে। কিন্তু যারা এখানে আসতে চান তাদের অবশ্যই সেভাবে তৈরি হয়ে আসতে হবে।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে সবচেয়ে বেশি নারী পাইলট আমাদের এয়ারলাইনসেই কর্মরত আছেন। বিমান আরও নারীদের স্বাগত জানায় এ পেশায় আসার জন্য। আমরা আশা করি, যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে আরও অনেক নারী এই পেশায় আসবেন।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com