আল দুহাইলান আরও জানান, সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মানদণ্ড পূরণ করতে না পারায় প্রায় ১৫ বছর সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে কোনো চিকিৎসা কর্মী নিয়োগ দেয়নি। এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের পাঠ্যক্রম, কলেজ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি করতে হবে বলে মত দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদির রাষ্ট্রদূত।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে নার্স নিয়োগ দিতে শুরু করেছে সৌদি আরব। উপসাগরীয় দেশটি সাধারণত বাংলাদেশ থেকে কম বেতনের, স্বল্প-দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এবার বাংলাদেশি নার্স নিয়োগের মাধ্যমে দেশটি নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল।
প্রাথমিকভাবে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ৫০০ নার্স নিয়োগের লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশি প্রার্থীরা যদি সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া কঠোর শর্তাবলি পূরণ করতে পারেন, তাহলে নিয়োগের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে পারে।
২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রায়ত্ত রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেল সৌদি আরবভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আফরাস ট্রেডিং অ্যান্ড কন্ট্রাক্টিং কোম্পানিতে নিয়োগের জন্য যোগ্য বিএসসি নার্সদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
যোগ্য নার্সদের বেতন হবে ১ লাখ টাকার বেশি। তবে যোগ্য প্রার্থীদের অন্তত তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার পাশাপাশি সৌদি প্রোমেট্রিক পরীক্ষার সনদ থাকতে হবে।
নার্সরা সৌদি আরবে কাজ করার জন্য কতটা প্রস্তুত, তা যাচাই করার পরীক্ষা হচ্ছে সৌদি প্রোমেট্রিক। প্রোমেট্রিক কর্তৃক পরিচালিত এই পরীক্ষা সৌদি কমিশন ফর হেলথ স্পেশালটি থেকে নার্সিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য পূর্বশর্ত।
বোয়েসেলের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রোমেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মতো নার্স পাওয়া বেশ কঠিন।
বোয়েসেলের সদ্যসাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন টিবিএসকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০০ নার্সের চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা পূরণ করা গেলে ক্রমান্বয়ে আরও নার্স নেওয়া হবে।’
সম্প্রতি সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বেসরকারি এজেন্সি নাজিফা রিক্রুটমেন্ট সার্ভিসেস বাংলাদেশি নার্সদের জন্য একটি বড় নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করে। পরীক্ষায় প্রায় ৩০০ নার্স অংশ নেন।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীদের দক্ষতা যাচাই করা হয়। ২৮১ জন প্রার্থীর মধ্যে ২১৫ জন নার্স ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হন এবং তাদের সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন হাসপাতালে নার্স স্পেশালিষ্ট হিসেবে নিয়োগ পান।
মে মাসে সৌদি গেজেট-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরর এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০২৩ সালে সৌদির স্বাস্থ্য খাতে নিবন্ধিত ও ক্লাসিফাইড নার্সের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬১ জন।
২০১৮ সালে দেশটিতে নিবন্ধিত নার্স ছিলেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬৫ জন। এর মধ্যে ৭০ হাজার ৩১৯ জন সৌদি নাগরিক। দেশটির নার্সিং কর্মশক্তিতে বিদেশি নার্স প্রায় প্রায় ৭০ শতাংশ। এই বিদেশি নার্সদের বেশিরভাগই ভারত, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলান জানান, চিকিৎসা কর্মীদের নিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে শীঘ্রই একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আরও বেশিসংখ্যক অভিবাসীকে নিচ্ছি। তবে আমরা স্বল্প-দক্ষ বা অদক্ষ কর্মীদের বদলে দক্ষ কর্মীদের ওপর গুরুত্ব দিতে চাই। স্বল্প-দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা থাকলেও আমাদের ভিশন অনুযায়ী এখন আগের চেয়ে বেশি দক্ষ জনবল প্রয়োজন।’
আল দুহাইলান আরও জানান, সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মানদণ্ড পূরণ করতে না পারায় প্রায় ১৫ বছর সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে কোনো চিকিৎসা কর্মী নিয়োগ দেয়নি। এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের পাঠ্যক্রম, কলেজ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি করতে হবে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে বলে মত দেন তিনি।
দুহাইলান আরও বলেন, ‘ডাক্তার, নার্স, মিডওয়াইফ ও ল্যাব টেকনিশিয়ানদের মতো চিকিৎসা কর্মীদেরকে সৌদি আরবে দুই-তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রশিক্ষণের পর তারা হাসপাতালগুলোতে কাজ করতে এবং স্বাস্থ্য খাতে সেবা দিতে পারবেন।’
২০২২ সালে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আওতায় উপসাগরীয় দেশটি বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসাকর্মী নিয়োগ শুরু করবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে চিকিৎসক আছেন মাত্র কয়েক ডজন।
২০২২ সালের চুক্তির আওতায় ২০২৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রথম ব্যাচ সৌদি আরবে পৌঁছায়।
বাংলাদেশে শতাধিক মেডিকেল কলেজ রয়েছে, যেগুলো প্রচুর সনদপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মী তৈরি করে। তারা সৌদি আরবে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের সুযোগ নিতে পারেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড