শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৯ অপরাহ্ন

বাংলাদেশিদের মেডিকেল ভিসা না দিয়ে চীনের জন্য পথ খুলে দিয়েছে ভারত

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে স্বাভাবিক পরিমাণে মেডিকেল ভিসা পুনরায় শুরু করার জন্য বাংলাদেশের আবেদনে সারা দিচ্ছে না ভারত। ছয়টি সূত্র রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কাজের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার বিরল সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশিরা ভারতে যাওয়ার বেশিরভাগ ভিসাই নিতেন সাশ্রয়ী মূল্যের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার জন্য। এটি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করতে এবং চীনের আঞ্চলিক প্রভাব সীমিত রাখছে সহায়তা করেছিল।

বাংলাদেশের চারটি সূত্রের একটি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘যখন শূন্যতা তৈরি হবে, তখন অন্যরা এসে সেই স্থান পূরণ করবে। কিছু লোক থাইল্যান্ড এবং কিছু লোক চীন যাচ্ছে।’

সূত্র বলেছে, আগস্ট মাস থেকে ভারত প্রতি কর্মদিবসে ১ হাজারেও কম মেডিকেল ভিসা দিয়েছে বাংলাদেশিদের।

ভারতের দীর্ঘমেয়াদী মিত্র শেখ হাসিনার স্থলাভিষিক্ত হয়ে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর সম্পর্ক শীতল হয়ে যাওয়ায় ভিসা কমে এসেছে। আগস্টে প্রাণঘাতী বিক্ষোভের ফলে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং তিনি নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন। বিচারের জন্য তাকে দেশে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের অনুরোধের পর ভারত এখনো কোনো সাড়া দেয়নি।

উভয় দেশের সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে ভারত ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে, যার বেশিরভাগই চিকিৎসার কারণে। কিন্তু এরপর থেকে ভারতের ভিসা প্রত্যাহারটি চীনের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ তৈরি করেছে।

চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘চিকিৎসা পর্যটন বাজারের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার জন্য’ এই মাসেই একদল বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইউনান সফর করেছেন।

রাষ্ট্রদূত গত সপ্তাহে বলেছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তাদের কমপক্ষে ১৪টি কোম্পানি বাংলাদেশে ২৩০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে, যা এই সময়ের মধ্যে যে কোনো দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এদিকে, বাংলাদেশের কার্যত প্রধানমন্ত্রী ইউনূস এই মাসে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে চীন সফর করবেন।

২০২০ সালে হিমালয় সীমান্ত সংঘর্ষের পর চীনের সঙ্গে ভারত ধীরে ধীরে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করছে। বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, চীন ঢাকায় একটি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল খোলার কথা বিবেচনা করছে এবং সেখানে চিকিৎসা নিতে আসাদের জন্য প্রবেশাধিকার সহজ করছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতা ক্রমাগত গভীর করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একসাথে কাজ করতে ইচ্ছুক চীন।

মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা কোনো তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য করে নয় এবং এটি তৃতীয় পক্ষের কারণ দ্বারা প্রভাবিতও নয়।’

রয়টার্স জানিয়েছে, এসব বিষয়ে কথা বলতে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্তব্যের জন্য অনুরোধের জবাব দেয়নি।

বিচ্ছিন্নতা

চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ভারতের বিলম্বিত ভিসা প্রক্রিয়া কেবল বাংলাদেশ সরকারকেই নয়, বরং বৃহত্তর জনগণকেও বিচ্ছিন্ন করে তুলছে। এটি ভারতকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঢাকার সুবিধা থেকে দূরে রাখতে পারে, কারণ হাসিনার দলের দ্রুত প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা কম।

কূটনীতিকরা এবং ভারত সরকারের সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ভিসা সমস্যার জন্য ভারত বারবার ঢাকায় অবস্থিত তাদের দূতাবাসে কর্মীদের ঘাটতির কথা উল্লেখ করেছে। তারা কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছে।

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে জনমত ভারত সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাওয়ার পর আগস্ট মাসে নয়াদিল্লি বাংলাদেশে অবস্থিত তাদের মিশন থেকে অনেক কূটনীতিক এবং পরিবারকে সরিয়ে নেয়। বাংলাদেশের রাজধানীতে বিক্ষোভকারীরা একটি ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলা চালায়।

ভারত সরকারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারা চায় অসুস্থ বাংলাদেশিরা ভারতে চিকিৎসার সুযোগ পাক। তারা বলেন, ‘বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা’ এলে প্রতিবেশী দেশটির মিশনগুলোতে কর্মী যুক্ত করা হবে।

একজন সূত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের কঠিন পরিস্থিতি থেকে পালানোর চেষ্টায় কিছু লোক আইনের অপব্যবহার করছে। যার ফলে মেডিকেল ভিসার সংখ্যা কমে গেছে।’

এই মাসে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে তাদের কিছু প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং উভয় পক্ষ ‘প্রকল্পের পোর্টফোলিওকে যুক্তিসঙ্গত করার’ বিষয়ে আলোচনা করেছে।

তবে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ভারত বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেনি। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন প্রাক্তন মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বেইজিংয়ের আমন্ত্রণে চীন সফর করেছে।

দুটি ভারতীয় সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ড. ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে প্রথম বৈঠকটি আগামী এপ্রিল মাসে থাইল্যান্ডে একটি সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

একজন ভারতীয় বিশ্লেষক বলেছেন, চীনের আঞ্চলিক প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে।

জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক হ্যাপিমন জ্যাকব বলেন, দক্ষিণ এশিয়া একটি বড় কৌশলগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে চীন অন্যতম বৃহৎ খেলোয়াড় হয়ে উঠছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের সাথে, ভারতের ঐতিহ্যবাহী প্রাধান্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com