নরওয়ে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ যেখানে উচ্চ বেতন, চমৎকার জীবনযাত্রার মান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একসাথে মেলে। ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মধ্যে নরওয়ে বাংলাদেশিদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে, বিশেষ করে যারা উচ্চ আয় এবং ভালো ক্যারিয়ার চান।
এই ব্লগে আমরা জানবো নরওয়েতে বাংলাদেশিদের চাকরি পাওয়ার উপায়, ওয়ার্ক ভিসার প্রক্রিয়া, খরচ, সুবিধা এবং কীভাবে সহজে বসবাস করা যায়।
কেন নরওয়ে?
নরওয়ে অনেক কারণেই কর্মীদের জন্য আকর্ষণীয়:

উচ্চ বেতন: নরওয়েতে মাসিক গড় বেতন প্রায় ৪,০০০ – ৬,০০০ ইউরো বা তার বেশি হতে পারে।

ট্যাক্সের বিনিময়ে সামাজিক সুবিধা: ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, এবং বেকারত্ব সুবিধা পাওয়া যায়।

পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ: এটি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর এবং নিরাপদ দেশ।

ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স: নরওয়ের কর্মসংস্কৃতি খুবই ভালো, সপ্তাহে মাত্র ৩৭-৪০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
নরওয়েতে চাকরির সুযোগ কোথায় বেশি?
বাংলাদেশিদের জন্য নরওয়েতে কিছু নির্দিষ্ট খাতে প্রচুর চাকরির সুযোগ রয়েছে:
১. আইটি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
ক্লাউড কম্পিউটিং
সাইবার সিকিউরিটি
ডেটা অ্যানালিস্ট
২. স্বাস্থ্যসেবা (Doctor, Nurse, Caregiver)
নার্সিং ও কেয়ারগিভার পেশায় প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
মেডিকেল ডিগ্রি থাকলে সহজেই চাকরি পাওয়া যায়।
৩. নির্মাণ ও ম্যানুফ্যাকচারিং
ওয়েল্ডার, ইলেকট্রিশিয়ান, মেশিন অপারেটর
নির্মাণ খাতে দক্ষ কর্মীদের অনেক সুযোগ রয়েছে।
৪. হোটেল ও রেস্টুরেন্ট
শেফ, ওয়েটার, হাউসকিপিং
পর্যটন শিল্পের জন্য হোটেল ও ক্যাফেগুলোতে লোক নিয়োগ করা হয়।
৫. কৃষি ও ফিশারিজ সেক্টর
মাছ ধরার খাতে প্রচুর কাজ পাওয়া যায়।
কৃষিকাজেও বাংলাদেশিদের জন্য কিছু সুযোগ রয়েছে।
নরওয়েতে কীভাবে চাকরি খুঁজবেন?
নরওয়েতে চাকরি পাওয়ার জন্য কিছু নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট:
NAV.no (সরকারি চাকরির ওয়েবসাইট)
EURES
আপনি LinkedIn ও Facebook গ্রুপ থেকেও চাকরির সুযোগ সম্পর্কে জানতে পারেন।
নরওয়ের ওয়ার্ক ভিসার ধাপ
নরওয়েতে কাজ করতে হলে Skilled Worker Visa (D-type Work Visa) লাগবে। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি দেখানো হলো:
১. চাকরি পাওয়া ও স্পনসরশিপ সংগ্রহ:
প্রথমে নরওয়ের কোনো কোম্পানির কাছ থেকে চাকরির অফার নিতে হবে।
নিয়োগকর্তা (Employer) আপনার জন্য ওয়ার্ক পারমিট আবেদন করবে।
২. ওয়ার্ক পারমিটের অনুমোদন:
নরওয়ের ইমিগ্রেশন অথরিটি (UDI) ওয়ার্ক পারমিটের অনুমোদন দিলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৩. বাংলাদেশ থেকে নরওয়ে ওয়ার্ক ভিসার আবেদন:
আপনাকে ঢাকার নরওয়েজিয়ান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদসহ)

চাকরির অফার লেটার ও স্পনসরশিপ কাগজ

ওয়ার্ক পারমিটের অনুমোদনপত্র

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট

মেডিকেল সার্টিফিকেট

ব্যাংক স্টেটমেন্ট (আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ)
৪. ভিসা অনুমোদন ও নরওয়েতে যাত্রা:
ভিসা অনুমোদিত হলে নির্ধারিত সময়ে নরওয়ে যেতে পারবেন।
সেখানে পৌঁছে বাসস্থান ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে।

নরওয়েতে বসবাসের খরচ:-
নরওয়ে বিশ্বের ব্যয়বহুল দেশগুলোর মধ্যে একটি। তবে উচ্চ বেতনের কারণে এটি সামলানো যায়।

বাসা ভাড়া: প্রতি মাসে ৮০০ – ১২০০ ইউরো (১ বেডরুম)

খাবার খরচ: প্রতি মাসে ৩০০ – ৫০০ ইউরো

পরিবহন খরচ: প্রতি মাসে ৭০ – ১০০ ইউরো

মোট খরচ: গড়ে ১৫০০ – ২০০০ ইউরো লাগতে পারে।
নরওয়েতে থাকার সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ

সুবিধা:-
বিশ্বের অন্যতম উন্নত জীবনযাত্রার মান
বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা
নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব দেশ

চ্যালেঞ্জ:
আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা, বিশেষ করে শীতকালে
জীবনযাত্রার খরচ বেশি
নরওয়েজিয়ান ভাষা শিখতে হতে পারে
উপসংহার:-
নরওয়ে বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপে উচ্চ বেতন এবং ভালো সুযোগের দেশ হতে পারে। আপনি যদি দক্ষ কর্মী হন এবং ওয়ার্ক পারমিট পেতে চান, তাহলে বিশ্বস্ত সোর্স থেকে চাকরির অফার নিয়ে আবেদন করুন।
আপনি কি নরওয়েতে কাজ করতে আগ্রহী? তাহলে এখনই প্রস্তুতি নিন এবং আপনার ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করুন!
Like this:
Like Loading...