চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে পড়াশোনার পাশাপাশি রয়েছে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের বৃত্তি। পড়াশোনা ও থাকা–খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে কেউ ইচ্ছা করলে বৃত্তির টাকা কিছুটা বাঁচিয়ে দেশে পরিবারকেও দিতে পারেন। মোট তিন ধরনের বৃত্তি দিয়ে থাকে চীন সরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে সুবিধা বেশি চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপে।
চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ
প্রতিবছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েক ধরনের বৃত্তি দিয়ে থাকে দেশটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে চীনের সরকারি বৃত্তিতে, যেটি চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ নামে পরিচিত। চীন সরকার চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিলের (সিএসসি) মাধ্যমে এ বৃত্তি দিয়ে থাকে।
সিএসসি তিন ধরনের হয়ে থাকে। যা টাইপ-এ, টাইপ-বি ও টাইপ-সি নামে পরিচিত।
টাইপ-এ
সরকারি স্কলারশিপের মধ্যে প্রথমেই আসে টাইপ-এ স্কলারশিপের নাম। এটি মূলত চীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের মধ্যকার সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ। একেক বছর একেক দেশ থেকে একেক রকম প্রার্থী নিয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫০-৬৫ জন প্রার্থী নেওয়া হয়।
প্রথমে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চীনের দূতাবাসে আবেদন করতে হয়। প্রাথমিক বাছাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় করে দূতাবাসে জমা দেয়। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য সিএসসির কাছে রিকমেন্ডেশন পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে আলাদাভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
আবেদনের সময়
সাধারণত নভেম্বর মাসেই বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে এবং নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন–সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানা যাবে। ইতিমধ্যে এই বৃত্তির আবেদন শুরু হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যাবে এই লিংকে। এটি চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংগঠন। যাঁরা চীনে পড়তে যেতে চান, তাঁদের সাহায্য করে থাকে।
সুযোগ–সুবিধা
আবেদন ফি মওকুফ, টিউশন ফি মওকুফ, আবাসন ফি মওকুফ, স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে, প্রথমবার চীনে যেতে ও পড়াশোনা শেষ করে ফেরত আসার সময়কার বিমান টিকিটও দেবে। স্নাতকে প্রতি মাসে বৃত্তি দেয় ২ হাজার ৫০০ ইউয়ান (৪৫ হাজার টাকা), স্নাতকোত্তরে ৩ হাজার ইউয়ান (৫৫ হাজার টাকা), পিএইচডিতে ৩ হাজার ৫০০ ইউয়ান (৬৪ হাজার টাকা)।
টাইপ-বি
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে সিএসসির কাছে আবেদন করতে হয়। চীনা সরকারি বৃত্তি বলতে শিক্ষার্থীরা টাইপ-বিকেই বেছে নেন। কারণ, টাইপ–এ-তে অনেক প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।
আবেদনের সময়
আবেদনের সময় একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক সময়। সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হয়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত চলে। তবে যত আগে আবেদন করা যায়, বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়ে।
সুযোগ–সুবিধা
টাইপ-এ ও টাইপ-বির সুযোগ–সুবিধা প্রায় একই। প্রথমটিতে বিমান টিকিট দূতাবাস থেকে পাওয়া যায়, দ্বিতীয়টিতে পাওয়া যায় না।
আবেদনের যোগ্যতা
নন-চায়নিজ হওয়া, চীনের অন্য কোনো স্কলারশিপ না হওয়া, বয়স সর্বোচ্চ স্নাতকের জন্য ২৫ বছর, স্নাতকোত্তরের জন্য ৩৫ বছর ও পিএইচডির জন্য ৪০ বছর।
স্নাতকে আবেদনের জন্য এইচএসসি বা সমমান পাস, স্নাতকোত্তরে আবেদনের জন্য স্নাতক পাস এবং পিএইচডিতে আবেদনের জন্য স্নাতকোত্তর পাস হতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
পাসপোর্ট, সর্বোচ্চ একাডেমিক ডিগ্রির অ্যাটেস্টেড ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট, মেডিকেল সার্টিফিকেট অথবা ফরেনার ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন ফরম, সিভি, দুটি রিকমেন্ডেশন লেটার, স্টাডি প্ল্যান/রিসার্চ প্রপোজাল, আইইএলটিএস/টোয়েফল/এইচএসকে সনদ ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।
টাইপ-সি
এটি পারশিয়াল স্কলারশিপ। বেশি কিছু শর্ত রয়েছে। যে টাকা দেয়, সেটি দিয়ে টিউশন ফির একটা অংশ কাভার করে। অন্যান্য ফি নিজেকেই বহন করতে হয়।
সিএসসি-এ ক্যাটাগরিতে যেভাবে আবেদন
আগ্রহী প্রার্থীদের এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে লগইন করতে হবে। এরপর বিস্তারিত তথ্য পূরণ করে আবেদন করতে হবে। আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে এই ওয়েবসাইটে।
সূত্র: চীনের দূতাবাসের ওয়েবসাইট