বাংলাদেশে মধ্য ইউরোপের এই দেশটির কোনো দূতাবাস নেই৷ কিন্তু দেশটির ব্যবসা খাতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বাড়ছে৷ ক্রোয়েশিয়ার ভিসা পেতে আগ্রহী কর্মীদেরকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে যেতে হতো৷
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে ভিসা আবেদনে জমা নেওয়ার ঘোষণা দেয় ভিএফএস৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিএফএস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি অনুমোদ স্বাপেক্ষে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে থাকে৷ সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রতিনিধি হিসেবে তার আবেদনকারীদের বায়োমেট্রিক ডেটা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিসার আবেদন সংগ্রহ করে থাকে৷
কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, ক্রোয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া কঠোর করতে যাচ্ছে৷ ক্রোয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপে বাংলাদেশের নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের একটি চিঠি ছড়িয়ে পড়ে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লেখা ওই চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়৷ এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়৷
সর্বশেষ ক্রোয়েশিয়ার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেও এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কিছু দেশের কর্মীদের ভিসা প্রদানের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে ক্রোয়েশিয়া সরকার৷
চিঠিটির সত্যতা জানতে নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বার বার ফোন করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি৷ তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, এ বিষয়ে তারা অবগত হয়েছেন৷
উল্লেখ্য, ক্রোয়েশিয়াতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই৷ সরকারের নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত দূতাবাস ক্রোয়েশিয়াতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে৷
ক্রোয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের অবস্থান
ক্রোয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম ভেচেরাইনলিস্ট জানায়, দেশটিতে বর্তমানে বৈধভাবে সাত থেকে আট হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন৷ বাংলাদশিসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশের শ্রমিকদের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমটি৷
প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের বিষয়ে বলা হয়, ২০২৩ সালে ১২ হাজার ৩০০ বাংলাদেশি কর্মীকে ভিসা প্রদার করে ক্রোয়েশিয়া সরকার৷ এরমধ্যে আট হাজার কর্মী ক্রোয়েশিয়াতে প্রবেশ করেননি৷ পত্রিকাটির ধারণা, এই কর্মীরা ইউরোপের শেঙ্গেনভুক্ত অন্য কোনো দেশে চলে গিয়েছেন৷
আর বাকি চার হাজার ৪০০ কর্মীর অর্ধেক ক্রোয়েশিয়া থেকে পালিয়ে গিয়েছেন৷ শুধু বাংলাদেশিই নয়, পত্রিকাটি বলছে, ভারত নেপাল, ফিলিপাইন্স এবং মিশরের কর্মীদের অনেকেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন৷ তবে এই প্রবণতা বাংলাদেশিদের মধ্যে বেশি৷
ক্রোয়েশিয়া সরকারের পদক্ষেপ
ক্রোয়েশিয়ার আরেক সংবাদমাধ্যম ক্রোয়েশিয়া উইক জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদেশি কর্মীদের ভিসা প্রদানের শর্ত কঠিন করতে যাচ্ছে ক্রোয়েশিয়া সরকার৷ আর বাংলাদেশি কর্মীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি হওয়ার কারণে ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের বেলায়ও শর্ত কঠিন হতে যাচ্ছে৷
এরইমধ্যে নেরাদল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাসকে ক্রোয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি অবহিত করেছে বলে দাবি পত্রিকাটির৷
পরিস্থিতি সামলাতে ক্রোয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যাচাই বাচাইয়ের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে৷ ভিসার আবেদনকারীরা ক্রোয়েশিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছে কি না এবং কোনো ঝুঁকি তৈরি করেবে কি না ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো আরো যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে বলে জানায় সংবাদমাধ্যমটি৷
তবে শুধু বাংলাদেশই নয় যেসব দেশের কর্মীরা এমন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের সবার ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া আরোপ করা হবে৷
ক্রোয়েশিয়া উইক জানায়, বাংলাদেশ সরকারে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ক্রোয়েশিয়া সরকার৷
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণায়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাদ্যমটি জানায়, বাংলাদেশ সরকার সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবে৷
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা দূতাবাসের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন৷