শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন

বহুসংস্কৃতির নৈসর্গিক দ্বীপ: অ্যাডলার

  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

যেন সমুদ্রের বুকে চকচকে এক টুকরো হীরের মত দ্বীপ। তীরে তার আছড়ে পড়ছে ঢেউ। ইস্তাম্বুলের কাছের এই দ্বীপের নাম ‘প্রিন্সেস আইল্যান্ড’। স্থানীয়রা ভালোবেসে ‘অ্যাডলার’ নামেই বেশি ডাকে। অন্য দ্বীপগুলো থেকে এটি একটি কারণে আলাদা। এই দ্বীপে গাড়ি ব্যবহারে রয়েছে কড়াকড়ি। সেই সঙ্গে আছে বহু সংস্কৃতিবাদের অনন্য নিদর্শন।টার্কির ইস্তাম্বুল থেকে পাবলিক ফেরিতে প্রায় এক ঘন্টা লাগে দ্বীপটিতে যেতে।

অ্যাডলারে বাইজেন্টাইন এবং অটোমান সুলতানরা তাদের অবাধ্য রাজপুত্র এবং রাজনৈতিক বন্দিদের নির্বাসনে পাঠাতো। এটি অটোমান সাম্রাজ্য এবং আর্মেনীয় সম্প্রদায়েরও শেষ আশ্রয়স্থল ছিলো। অ্যাডলার মূলত কাছাকাছি দূরত্বের চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এই চারটি দ্বীপের আবার আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। সেগুলো হলো কানাডিলা, বুর্গাজাডা, হাইবেলিডা এবং বুয়ুকাডা।

চারটি দ্বীপ নিয়ে অ্যাডলার মোট আয়তন প্রায় ১১ কিলোমিটার। আপনি চাইলেও এখানে গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না।

ছবি: যেহেতু দ্বীপগুলি গাড়িমুক্ত, স্থানীয়রা বৈদ্যুতিক স্কুটারে যাতায়াত করে

স্থানীয়রা এখানে চলাচলের জন্য বৈদ্যুতিক স্কুটার ব্যবহার করে থাকেন। এই যানবাহন দিয়েই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করে। ভ্রমণকারীরা এখানে বাইসাইকেলে করে ঘুরে বেড়াতে পারেন। এজন্য এখানে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। তবে এই দ্বীপে অল্প পরিমাণে ইলেকট্রিক বাসও রয়েছে। টার্কির অন্তভূক্ত হলেও এখানে সংস্কৃতিগত বৈচিত্র লক্ষ করা যায়। এই দ্বীপের মুসলিম অধিবাসীদের সঙ্গে খ্রিস্টানরাও মিলে মিশে থাকেন।

ছবি: ভ্রমণকারীরা দ্বীপটিতে বিশুদ্ধ বাতাস এবং প্রকৃতির সৈন্দর্যের জন্য ঘুরতে আসেন

‘অ্যাডলার’ বেশিরভাগ বাড়িঘর, রেস্টুরেন্ট, হোটেল এবং ক্যাফেই নীল এবং সাদার মিশেলে তৈরি। যা অনেকটাই গ্রিক দ্বীপপুঞ্জের আবহ এনে দেয়। ট্যুর গাইড ও প্রাচীণ ভাষা বিশেষজ্ঞ অ্যাকার বলছিলেন, শীতকালে কানাডিলাতে মাত্র ৫০০ জন লোক বাস করেন। তখন এখানে দিনে পাঁচ থেকে ছয়টি ফেরি ইস্তাম্বুলে যাতায়াত করে। ১৪৫৩ সালে থেকে দ্বীপটি মুসলিম অটোমানদের শাসনে পরিচালিত। ঐতিহাসিকভাবে এই দ্বীপের অনেক বসবাসকারী ইস্তাম্বুলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। অনেক গ্রিক এবং আর্মেনিয়দের বাড়িঘর এখানে রয়েছে। বহুসংস্কৃতি ছিলো অটোমান সাম্রাজ্যের ট্রেডমার্ক। যা বলকান থেকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বহু জাতি ও জাতীয়তাকে প্রভাবিত করেছিল।

কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুর্কি এবং গ্রিসের মতো প্রতিবেশি দেশগুলির মধ্যে মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের বিশাল জনসংখ্যার বিনিময় হয়। তখন এখানকার অনেক খ্রিস্টান অধিবাসী গ্রিসে পাড়ি জমিয়েছিলে।

তাই ঐতিহাসিকভাবে এই দ্বীপে গ্রিকদের তৈরি প্রচুর অর্থোডক্স চার্চের দেখা পাওয়া যায়। যা এই দ্বীপের সাংস্কৃতিক প্রাচুর্যতার অংশ। হাইবেলিডার অধিকাংশই মানুষ এখন মুসলিম। তা স্বত্ত্বেও এখানে এখনও মঠ এবং চার্চের দেখা পাওয়া যায়।

দ্বীপের অধিবাসির অত্যন্ত আন্তরিক। টার্কির মূল ভুখন্ড থেকে মানুষ এখানে মঠগুলো পরিদর্শণ করতে আসে।

এই দ্বীপে এখানো ৩০ থেকে ৪০ জন খ্রিস্টান বসবাস করেন। সবাই এখানে মিলেমিশে বাস করে। মুসলিম কিংবা খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে কোন সমস্যা এখানে নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com