বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জেলা বরগুনা। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদ-নদী ও সমুদ্রের বিশালত্ব বরাবরই পর্যটকদের মুগ্ধ করে। সেখানে আছে মনোমুগ্ধকর সমুদ্রসৈকত, পিকনিক স্পট, বনাঞ্চল ও ঐতিহাসিক স্থাপনা।
বরগুনার পর্যটন সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সুযোগ উন্মোচন করছে। বরগুনা ভ্রমণে আপনি কোন কোন স্পটে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না, চলুন জেনে নেওয়া যাক-
বরগুনার তালতলী উপজেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো শুভ সন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত। সৈকতটির নির্মল পরিবেশ, সাদা বালি ও নীলাভ জলরাশি দিয়ে পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এখানে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য যে কোনো পর্যটকের মনকে ছুঁয়ে যায়।
কোলাহলমুক্ত এই সমুদ্রসৈকত পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য আদর্শ। এলাকাটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনাময়, বিশেষ করে সৈকতের আশপাশে কটেজ ও রিসোর্ট নির্মাণের মাধ্যমে পর্যটনকে আরও সমৃদ্ধ করা যেতে পারে।
বরগুনা সদর উপজেলায় অবস্থিত সুরঞ্জনা পার্ক একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। পার্কটি মনোরম পরিবেশ ও সবুজে ঘেরা বৃক্ষরাজির জন্য সুপরিচিত।
এটি স্থানীয় পর্যটকদের জন্য বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হয় ও পরিবার নিয়ে এখানে পিকনিক করার সুযোগ আছে। পার্কটিতে বসার ব্যবস্থা, কৃত্রিম লেক ও শিশুদের জন্য খেলার ব্যবস্থা আছে।
বরগুনার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র হলো ‘টেংরাগিরি বনাঞ্চল’, যা ‘ছোট সুন্দরবন’ নামে পরিচিত। এই বনাঞ্চলে ঘন ম্যানগ্রোভ বন ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
বনে হরিণ, বানর, কুমিরসহ নানা বন্যপ্রাণী পর্যটকদের জন্য এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা প্রদান করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য এটি ভ্রমণকারীদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য।
পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা এলাকা সুন্দরবনের কাছাকাছি অবস্থিত ও এখানে ম্যানগ্রোভ বন ও নদীর যৌথ সৌন্দর্য আছে। এখানে ভ্রমণকারীরা নদীতে ডলফিনের খেলা দেখতে পারেন।
বিশেষ করে শীতকালে অনেক পর্যটক এখানে আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখার জন্য।
বরগুনা জেলায় বেশ কয়েকটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আছে, যা পর্যটকদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা হতে পারে। এর মধ্যে পাথরঘাটা উপজেলার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখান থেকে বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এটি মৎস্যজীবীদের ব্যস্ত জীবন ও মাছ ধরার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান।
বরগুনায় বেশ কয়েকটি সুন্দর পিকনিক স্পট আছে, যা স্থানীয় ও বহিরাগত পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
সৈকতটি সমুদ্রের নীল জলরাশি ও বালির জন্য পরিচিত। পিকনিক ও অবসর যাপনের জন্য এটি অত্যন্ত উপযোগী।
নদীর তীরে অবস্থিত স্থানটি একটি আদর্শ পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত। এখান থেকে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
বরগুনা নদী ও সমুদ্রের মিলনস্থলে অবস্থিত, তাই এখানে নদ-নদীর বৈচিত্র্য ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ তৈরি করে। বরগুনায় আছে বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদী, যা জেলে ও পর্যটকদের নৌবিহারের জন্য উপযুক্ত।
বরগুনা তার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে পর্যটনের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এখানকার সমুদ্র সৈকত, নদী, বনাঞ্চল ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো উন্নয়নের মাধ্যমে বরগুনাকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব।