শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

বদিউল আলম মজুমদার: এক বছরের জন্য দেশে ফিরে হাঙ্গার প্রজেক্টেই ৩০ বছর

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩

নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কাছে একটাই চাওয়া, তাঁরা যাতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনীতিবিদেরা এই কথা উপলব্ধি করলে দেশে সুশাসনের অভাব হতো না। একদিন হয়তো তাঁরা বিষয়টি উপলব্ধি করবেন।

আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্টের দেশীয় পরিচালক হিসেবে ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করছেন বদিউল আলম মজুমদার। সংস্থাটির সঙ্গে তাঁর ৩০ বছর উদ্‌যাপন উপলক্ষে সহকর্মী ও স্বেচ্ছাব্রতীদের পক্ষ থেকে আজ বুধবার দিনব্যাপী একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ওয়াইডব্লিউসিএ অব বাংলাদেশের মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের।

অনুষ্ঠানে নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আমাদের কথায় গাত্রদাহ হয়। কিন্তু আমরা তো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কথা বলি।’

অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান কর্মীরা বদিউল আলম মজুমদারকে ফুল, ক্রেস্ট এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফুল ও অন্যান্য উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ৩০ বছরের পথচলা নিয়ে কর্মীদের পক্ষ থেকে ‘জাগরণের পথিকৃৎ’ নামের একটি প্রকাশনা তুলে দেওয়া হয় তাঁর হাতে।

প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া বদিউল আলম মজুমদারের ছোটবেলা কেটেছে অভাবের মধ্যে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করতে হয়েছে। ১৯৬৯ সালে ছাত্রজীবন শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে রোটারি ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান। সেখানকার কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল ইউনিভার্সিটি ও ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। পরে দেশে ফিরে ১৯৯৩ সাল থেকে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হন। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে ১৯৭৭ সালে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শান্তি-সম্প্রীতি বিরাজ করলে উন্নয়ন হবে, তা না হলে উন্নয়ন হবে না। কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের একত্র করা অর্থাৎ তেল ও জলের সংমিশ্রণ সম্ভব হবে কি না, তাই ছিল চিন্তার বিষয়। তবে তাঁরা একত্র হয়েছেন, এলাকায় দ্বন্দ্ব হলে নিজেরাই তার সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন।

‘জাগরণের পথিকৃৎ’ প্রকাশনাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাব্রতী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাব্রতীদের যুক্ত করে রাজনীতিবিদ ও সমাজের সচেতন নাগরিকদের নিয়ে স্থিতিশীল ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তোলার আন্দোলন পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বদিউল আলম মজুমদার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক কর্মী এবং তাঁর স্ত্রী তাজিমা হোসেন মজুমদারসহ পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আজ যে পর্যায়ে এসেছেন তা তাঁর মা দেখে যেতে পারলে অনেক খুশি হতেন। এ কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রের আয়েশি জীবন ছেড়ে বাংলাদেশে এসে এবং ৩০ বছর দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজের জীবন সমৃদ্ধ হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন স্পর্শ করতে পেরেছেন তিনি। পথচলায় গ্রামের সাধারণ মানুষ বড় শিক্ষক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন।

হাঙ্গার প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বদিউল আলম মজুমদার। ঢাকা, ৩১ মে
হাঙ্গার প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বদিউল আলম মজুমদার। ঢাকা, ৩১ মেছবি: প্রথম আলো

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, খাঁচায় বন্দী টিয়া পাখির ওড়ার ক্ষমতা থাকে না। মানুষও যেন বন্দী টিয়া পাখি হয়ে যাচ্ছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্পৃহা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দি হাঙ্গার প্রজেক্টের উজ্জীবক প্রশিক্ষণের মূল কথাই হচ্ছে, নিজের ভাগ্য নিজেকে গড়তে হবে। উন্নয়নকে আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। উন্নয়নে মানুষ দর্শক বা উপকারভোগী হবে না, উন্নয়নের কারিগর হবে মানুষ। এই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সহায়ক পরিবেশ আর মানুষের আত্মবিশ্বাস। উন্নয়ন মানেই দেওয়া-নেওয়া—এ মানসিকতা থেকেও সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে।

বদিউল আলম মজুমদারের স্ত্রী উইমেন এন্টারপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট তাজিমা হোসেন মজুমদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে বদিউল আলম মজুমদার দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। সেই ১ বছর গড়িয়েছে ৩০ বছর ১ মাসে। তিনি এবং তাঁর স্বামী বুঝতে পেরেছিলেন দারিদ্র্য, ক্ষুধা দূর করার কাজটি এক বছরের কাজ নয়।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যে কথা বলা দরকার তা বদিউল আলম মজুমদার একক কণ্ঠস্বর হিসেবে বলে গেছেন। এতে করে তাঁকে অনেকে পাগল বলেছেন আবার অনেকে বলেছেন তিনি এসব বলছেন নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য। তবে তিনি থেমে যাননি। তিনি ৩০ বছর ধরে মাঠে আছেন, লিখছেন এবং মানুষকে সংগঠিত করছেন।

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার বা কথা বলার সংকটের কথাগুলো সামনে এনেছেন বদিউল আলম মজুমদার। অনেক সময় নেপথ্যে আবার অনেক সময় প্রকাশ্যে থেকে কাজগুলো করছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম বলেন, একসময় তাঁর সাহস ছিল না। দি হাঙ্গার প্রজেক্টে বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েই তিনি সাহস অর্জন করেছেন। আন্তরিকতা, ভালো ব্যবহার দিয়ে কীভাবে মানুষের মনের ভেতর ঢুকতে হয়, তা শিখেছেন।

অনুষ্ঠানে সাবেক সচিব মাহবুবুল আলম, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট মনিরা খান, সুজনের সহসম্পাদক জাকির হোসেন, সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য রেহানা সিদ্দিকী, ওয়াইডব্লিউসিএ বাংলাদেশের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনীষা সরকার, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন অ্যান্ড প্র্যাকটিসেসের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া, কবি লিলি হক, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের পরিচালক নাছিমা আক্তার, আইনজীবী রাশিদা আক্তার প্রমুখ বদিউল আলম মজুমদারের কাজ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্মৃতিচারণা করেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com