বিমানে খরচ কমাতে কড়াকড়ির অন্ত নেই। কিন্তু ভুলনীতিতে ফাঁকফোঁকর গলে পানির মতো টাকা চলে যাচ্ছে। ঠিক যেন বাংলা প্রবাদ। সামনে দিয়ে পিঁপড়া যেতে পারে না, কিন্তু পেছন দিয়ে হাতি গেলেও টের পায় না। ঢাকা ম্যানচেস্টার রুটেও তাই ঘটেছে। এই রুটের প্রতি ফ্লাইটে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা করে গচ্চা যাচ্ছে। গত এক বছর এই রুটে বিমান লোকসান দিয়েছে ১৮৭ কোটি টাকা। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসেই লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৭২ কোটি টাকা।
এই লোকসানের খবরে ঝড় উঠেছে বিমানের অন্দরমহলে। সংস্থাটির মহাক্ষমতাধর পরিচালনা পর্ষদ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। একটা মাত্র গন্তব্যের জন্য বিশাল অঙ্কের ক্ষতি এতদিন কেন তাদের জানানো হয়নি তার ব্যাখ্যা চেয়েছে পর্ষদ।
গত ১৩ জুন অনুষ্ঠিত বৈঠকে চিফ ফাইনান্স অফিসার ম্যানচেস্টার রুটে হাতি পোষার তথ্য দিয়ে বলেন, ‘ভবিষ্যতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে এ রুটের।’ ব্যাখাটা মেনে নিতে পারেননি এক পর্ষদ সদস্য। নিজেকে সামলাতে না পেরে তিনি বৈঠকে বলেছেন ‘ভবিষ্যতে সম্ভাবনা রয়েছে এ কথা ভেবে বর্তমানে বিশাল অঙ্কের ক্ষতি গণনার অবস্থা বিমানের নেই। অন্য যেসব রুটে ধারাবাহিক লোকসান গুনছে তার তথ্য জানান।’
বৈঠকে পর্ষদ সদস্যরা জানতে চান-যেসব রুটে বিমান লোকসান দিচ্ছে সেসব রুটের মার্কেটিং এ রাইট পারসন আছেন কিনা। এসব রুট চালুর আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে কিনা। সব রুটের লাভক্ষতি নিয়ে বিমানের একটি পূর্ণাঙ্গ স্টাডি থাকা দরকার। যেসব রুটে লোকসান দিচ্ছে সেসব রুটের তথ্য উপাত্ত নিয়ে দীর্ঘ সময়ে ধরে বৈঠক করতে হবে। এ ধরনের বৈঠক যে কোনো শনিবার আয়োজনের নির্দেশনা আসে পর্ষদ থেকে।
শেষ পর্যন্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় লোকসানী রুট বন্ধ বা চালু রাখার বিষয়ে সুপারিশ দেওয়ার জন্য পরিচালক (মার্কেটিং) নেতৃত্বে কমিটি করা হবে। তারা ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিবেন।
বিমানের পর্ষদ গঠন করা হয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সচিবদের দিয়ে। তারাই মূলত পলিসি নির্ধারণ করেন। বাণিজ্যিকভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সংস্থাটি পরিচালিত হয়। আগে পেশাদার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে নিয়োগ দেওয়া হলেও এখন সেখান থেকেও মুখ ফিরিয়েছে সরকার। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত ১৩ জুনের বৈঠকে পরিচালনা পর্ষদ নতুন এমডি ও সিইও মো. জাহিদুল ইসলাম ভূঞার সাথে পরিচিত হয়েছে। যে বৈঠকে ঢাকা ম্যানচেস্টা রুটে ধারাবাহিক লোকসান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিমান পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান আবু হেনা, মো. রহমাতুল মুনিম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন, অর্থবিভাগ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মো. খুরশেদ আলম, সিভির এভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান (সদ্য অবসরে যাওয়া), সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ ইফতেখার আনিস, ব্যরিস্টার তানজিবুল আলম, দি কম্পিউটার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যারিস্টার তানজিবুল আলম।
বিমানের কর্মকর্তারা বলছেন নানা বিষয়ে বিমানে কৃচ্ছতা সাধন করছে। কিন্তু ঢাকা ম্যানচেস্টার রুটে লাগামহীন লোকসান দিচ্ছে। এই রুটে ফ্লাই করলেই লোকসান হচ্ছে।