সুমো কুস্তিগিরদের ওজন যে সাধারণ পাঁচ-দশটা মানুষের চেয়ে বেশি, তা বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তাই বলে তাঁদের ওজনের কারণে বাড়তি উড়োজাহাজের ব্যবস্থা করতে হওয়াটা একটু বাড়াবাড়িই মনে হবে। কিন্তু এটাই করতে বাধ্য হয় জাপান এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য জানা যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে।
নিজেদের দুটি উড়োজাহাজ ওজনের সীমা অতিক্রমের ঝুঁকিতে আছে বুঝতে পেরে দ্রুত একটি অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে হয় জাপান এয়ারলাইনসকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে, এগুলোতে মালপত্রের পরিমাণ বেশি ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এমনটি হওয়ার কারণ যাত্রীর তালিকায় বেশ কিছু সুমো কুস্তিগিরের উপস্থিতি।
জাপান এয়ারলাইনস (জেএএল) গত সপ্তাহে বেশ কয়েকজন সুমো কুস্তিগিরকে তাড়াহুড়ো করে ব্যবস্থা করা বিশেষ ফ্লাইটে স্থানান্তরের ‘খুবই অস্বাভাবিক’ এক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। কারণ যে দুটি উড়োজাহাজে তাঁদের ভ্রমণের কথা, সেগুলো ওজন বহনে সীমাবদ্ধতার কারণে পর্যাপ্ত জ্বালানি বহন না করতে পারার আশঙ্কা দেখা দেয়।
জাপানি সংবাদমাধ্যমে ইয়োমিউরি শিম্বান সংবাদপত্র জানিয়েছে, সুমো কুস্তিগিরদের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ফ্লাইটে টোকিওর হানেদা বিমানবন্দর এবং ওসাকার ইতামি বিমানবন্দর থেকে দক্ষিণের দ্বীপ আমামি ওশিমায় যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে তাঁদের একটি ক্রীড়া উৎসবে অংশ নেওয়ার কথা।
ইয়োমিউরি জানায়, উড়োজাহাজ দুটি প্রয়োজনীয় জ্বালানি ধারণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়, যখন কর্মীরা বৃহস্পতিবার জানতে পারেন যে যাত্রীদের তালিকায় সুমো কুস্তিগিররাও আছেন। তাঁদের অনুমান, সুমো কুস্তিগিরদের গড় ওজন ১২০ কেজি, যা জাপানিদের গড় ওজন ৭০ কেজির চেয়ে অনেক বেশি।
সংবাদপত্রটি জানায়, আমামি বিমানবন্দরের রানওয়েতে আরও বড় উড়োজাহাজের জায়গা দেওয়াটা কঠিন। তাই জাপান এয়ারলাইনসকে ২৭ জন কুস্তিগিরের জন্য একটি অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে হয়, যাঁদের মধ্যে ১৪ জনকে বিশেষ ফ্লাইটটিতে ভ্রমণের জন্য ইতামি থেকে হানেদা উড়ে যেতে হয়।
‘এই উড়োজাহাজের ওজন সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা অত্যন্ত অস্বাভাবিক এক ঘটনা।’ স্থানীয় সংবাদপত্র মিনামি-নিপ্পন শিম্বানকে বলেন জেএএলের একজন মুখপাত্র।
জাপানি মিডিয়ার সূত্রে জানা যায়, গত রোববার প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পরে কুস্তিগিরদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্যও অতিরিক্ত ফ্লাইট রাখা হয়েছিল।
এই প্রথমবার ভ্রমণে থাকা সুমো কুস্তিগিরেরা আলোচনায় এলেন তা নয়; ২০১৪ সালে একটি উড়োজাহাজে গাদাগাদি করে থাকা সুমো কুস্তিগিরদের ছবি ভাইরাল হয়। টোকিওতে অবস্থিত সুমো কুস্তিগিরদের প্রশিক্ষণ শিবির হাক্কাকু থেকে আসা এই কুস্তিগিরদের পরে গ্রীষ্মকালীন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যাওয়ার সময় একটি বাসেও একই রকমভাবে ঠেসেঠুসে অবস্থান করতে দেখা যায়।
একজন সুমো কুস্তিগির হওয়ার জন্য ওজনের কোনো সীমা নেই। তবে প্রাচীন এই খেলায় সব সময় প্রভাব বিস্তার করে এসেছেন ভারী শরীরের কুস্তিগিররাই। রাশিয়ায় জন্ম নেওয়া এবং ২০১৮ সালে অবসরে যাওয়া সুমো কুস্তিগির অরোরা এ ক্ষেত্রে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁর সর্বোচ্চ ওজন ছিল ২৯২ দশমিক ৬ কেজি।