মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক হোটেল পরিষেবায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থায়ন সংকটে নতুন হোটেল নির্মাণ বা সংস্কারে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এর প্রভাবে স্বতন্ত্র হোটেল ও বৃহৎ চেইনগুলোর মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তির পরিমাণ বেড়েছে। খবর রয়টার্স।
ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তির কারণে দুই পক্ষই উপকৃত হচ্ছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। এর মাধ্যমে হোটেল চেইনগুলো দ্রুত নতুন আউটলেট খোলার সুযোগ পাচ্ছে। ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে বিনিয়োগের পথ সহজ হচ্ছে ও বুকিং বাড়ছে। একই কারণে নন-ব্র্যান্ড স্বতন্ত্র হোটেলগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তিতে আগ্রহী হচ্ছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্যাট্রিক স্কোলস ট্রুইস্ট ইকুইটির এক বিশ্লেষক জানান, চেইন হোটেলে সম্প্রতি যুক্ত হওয়া নতুন কক্ষগুলোর প্রায় ৪০ শতাংশই ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তির মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান আউটলেট থেকে যুক্ত হয়েছে ১০-২০ শতাংশ।
২০২৩ সালে ফরাসি বহুজাতিক আতিথেয়তা কোম্পানি অ্যাকোর নতুন চালু করা আউটলেটের অর্ধেকই ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তির মাধ্যমে প্রাপ্ত। রূপান্তরের এ উচ্চহার আতিথেয়তা শিল্পের নতুন প্রবণতাকে তুলে ধরছে।
নতুন হোটেল নির্মাণের চেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লাভজনক বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক চেইন ম্যারিয়টের সিইও অ্যান্থনি ক্যাপুয়ানো। ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে নতুন হোটেল তৈরির জন্য ঋণ পাওয়া বেশ কঠিন। তাই বিদ্যমান হোটেলগুলোকে চেইনের আওতায় নিয়ে আসা ব্যবসা সম্প্রসারণের উল্লেখযোগ্য একটি উপায়।’
কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া খাতের অন্যতম পর্যটন শিল্প। এ শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর পথে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অন্যদিকে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ঋণ নির্ভর ছোট হোটেল পরিচালনা আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এ কারণে তারাও ফ্র্যাঞ্চাইজির চুক্তির দিকে ঝুঁকছে।
হোটেল ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সংস্থা লজিং ইকোনমেট্রিকসের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ১ হাজার ৯৮০টি নতুন হোটেল চালু হয়েছে। যার পরিমাণ ২০১৯ সালে ছিল ২ হাজার ৭৩০টি।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ও লাইসেন্স ফি থেকেই হোটেল চেইনগুলোর আয়ের বড় একটি অংশ আসে। ২০২২ সালের এ বাবদ হিলটনের আয় বেড়েছিল ৩৮ দশমিক ৫, পরের বছর ছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে ম্যারিয়টের আয় বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৪০ ও ১৩ শতাংশ।
আতিথেয়তা পরিষেবাবিষয়ক সংস্থা এইচভিএসের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের পরিচালক ফার্নান্দা এল হপিটাল জানান, মহামারী-পরবর্তী সময়ে একাধিক হোটেল তাদের ঋণ পরিশোধে সমস্যার সম্মুখীন হয়, এতে বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকার হোটেলগুলোয় অর্থায়ন সীমিত হয়েছে।
ইউবিএস ইকুইটির বিশ্লেষক রবিন ফ্যারেল বলেন, ‘ব্র্যান্ডেড হোটেলের মালিকরা ঋণ পুনঃঅর্থায়নের জন্য সহজে আবেদন করতে পারেন।’
২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী হোটেল খাতে ঋণের প্রায় ২১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পরিশোধের সময় পার হয়ে যাবে। সে ঋণ পুনঃঅর্থায়নের সুবিধা নেয়া বড় ব্র্যান্ডের জন্য অনেক সহজ।
আবাসন খাতে ঋণদাতা আভানা ক্যাপিটালের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শিভান পেরেরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ব্র্যান্ডেড হোটেলগুলোর ক্ষেত্রে সুদহার ৬ দশমিক ৭৫ থেকে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে, যা মহামারীর আগে ৫-৬ শতাংশের মধ্যে ছিল। ব্র্যান্ডবিহীন হোটেলগুলোর ক্ষেত্রে সুদহার সাধারণত ৭-৯ শতাংশের মধ্যে থাকে।
এইচভিএস লন্ডনের হেড অব ডেট অ্যাডভাইজরি টিম বারব্রুক জানান, ইউরোপে আবাসন খাতে সুদহার ৬-৮ শতাংশ মধ্যে রয়েছে, যা প্রাক-মহামারীর আগে ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে ছিল।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপ অনুসারে, স্বতন্ত্র হোটেলগুলোর তুলনায় ব্র্যান্ডেড হোটেলগুলোর নগদ প্রবাহ নিয়ে ঝুঁকি কম। লয়ালিটি প্রোগ্রাম ও রিজার্ভেশন সিস্টেমের মতো পরিষেবা এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালো পারফরম্যান্স তৈরিতে সহায়তা করে। ফ্র্যাঞ্চাইজির আওতায় সে সুবিধা ভোগ করে স্বতন্ত্র হোটেলগুলো।