1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
ফ্রিল্যাসিংয়ের ভবিষ্যৎ কতদূর
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

ফ্রিল্যাসিংয়ের ভবিষ্যৎ কতদূর

  • আপডেট সময় শনিবার, ২২ মে, ২০২১

ফ্রিল্যান্সিংয়ের ভবিষ্যৎ কী? আশাব্যঞ্জক, না তেমন কিছু নেই? অনেকেই স্বাধীন এ পেশার পক্ষে বলেন। কেউ কেউ বলেন, যেখানে আয়েরই নিশ্চয়তা নেই, তা ভালো হয় কীভাবে? অনেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্যকে উৎসাহিত করেছেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মর্যাদার দিক থেকে কি চাকরিজীবীদের সমান ধরা হয় তাঁদের? বিয়ের বাজারে তাঁদের কদরই-বা কতটুকু?

সত্যি বলতে কি, যাঁরা আউটসোর্সিংয়ে জড়িত, তাঁদের কোনো বিচারেই ঘড়ি ধরে কাজ করা চাকরিজীবীর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কারণ, ফ্রিল্যান্সারের কাজ যখন-তখন। অনেকে তো রাত জেগে কাজ করেন। তবে তাঁদের মুক্ত এ স্বাধীন পেশায় করপোরেট জগতের কর্তৃপক্ষের চাপ নেই। কিন্তু কাজের চাপ একেবারে কম থাকে না। দেশে বা বিদেশে কাজের ক্ষেত্রে ‘আপওয়ার্ক’, ‘ফাইবার’ বা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে কাজের ক্ষেত্রে মান নিশ্চিত করতে হয়। প্রতিযোগিতা করতে হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের ক্ষেত্রে। কাজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে তবে ভালো পারিশ্রমিক মেলে। ফ্রিল্যান্সিং এমন এক পেশা, যেখানে প্রথাগত চাকরির আর দশটা নিয়মকানুন নেই। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে না করলে শর্টকাট সফলতার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশে এখন ঘরে বসে ইন্টারনেটে আয় বা অনলাইনে কাজ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চাকরির চেয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিয়ে অনেকেই এখন ঝুঁকছেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে। সম্প্রতি এক সেমিনারে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, বর্তমানে বিশ্বে আউটসোর্সিং তালিকায় বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে। এখানে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ লাখ কাজ করেন মাসিক আয়ের ভিত্তিতে। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ তরুণ। তাঁরা চাকরির বদলে ফ্রিল্যান্সিংকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন।

আমিনুর রহমান ২০১১ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। বই লিখেছেন ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং শুরু করেছি যেভাবে’ শিরোনামে। জানালেন, ফ্রিল্যান্সিং তাঁর কাছে ভালো লাগে। কারণ, এতে কাজের স্বাধীনতা আছে। ডলারে আয় করার সুযোগ আছে। পছন্দমতো কাজ বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে, যা বাঁধাধরা চাকরিতে নেই। এ কাজে চ্যালেঞ্জ আছে। কাজ বাছাই করা ও কাজটি ঠিকভাবে সম্পন্ন না করলে এখাতে সফল হওয়া যায় না। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রথাগত চাকরির চেয়ে ফ্রিল্যান্সারকে এগিয়ে রাখতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশে বসে কাজ করছেন আফরিন। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে তিনি জানান, এখন প্রতিযোগিতার বাজার। নতুনদের জন্য কাজ পাওয়া কঠিন। কিন্তু অভিজ্ঞতা আর নতুন দক্ষতা বাড়াতে পারলে এ ক্ষেত্রে সফল হওয়া যায়। কিন্তু কারও দীর্ঘমেয়াদি পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করা ঠিক হবে না। এর চেয়ে ক্রমাগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। কেউ যদি চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, তা করা ঠিক হবে না। কাজের দক্ষতা থাকলে চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য কিছু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞজনেরা ভালো করেন।

তথ্যপ্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং-বিষয়ক প্রশিক্ষণদাতা প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটির প্রধান নির্বাহী মনির হোসেন বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে কেউ ফ্রিল্যান্সিং করুক সেটি ভালো নয়। একটি সময় পর্যন্ত একা একা ফ্রিল্যান্সিং করা যেতে পারে বা দক্ষতা বাড়ানো যেতে পারে। এরপরই চাকরিতে ঢোকা উচিত। নিজের প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে হলে বা স্টার্টআপ দিতে হলেও কিছুদিন চাকরি করা উচিত। তা না হলে পেশাদার কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতাগুলো, বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা, দলগত কাজের বিষয়গুলো জানা উচিত। এতে আয় বাড়ে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিজের ব্যবসা শুরুর আগে বা পেশা হিসেবে নেওয়ার আগে কোম্পানির অভিজ্ঞতা জরুরি।

২০১২ সাল থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরিতে দলগতভাবে কাজ করছেন জাহরা জাহান। তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিং স্বাধীন কাজের সুযোগ বলে তাঁর পছন্দের। কিন্তু এখাতে দক্ষতা না হলে কাজ করা কঠিন। বর্তমান ফ্রিল্যান্সিং প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। দেশজুড়ে নামমাত্র প্রশিক্ষণে অনেকেই দক্ষ না হয়ে এ পেশায় আসছেন। কাজের মান ভালো না হওয়ায় কাজ পাওয়া যেমন কঠিন হচ্ছে, তেমনি কাজের দর পড়ে যাচ্ছে। দক্ষ না হয়ে ফ্রিল্যান্সিং করলে সবার ক্ষতি। তবে দক্ষ হয়ে দলগতভাবে কাজ করলে এ ক্ষেত্রে সফলতা আসবে।

কয়েকজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে যে-কেউ ফ্রিল্যান্সার হতে পারে। তবে কাজে দক্ষ হয়ে তবে এ পেশায় আসা উচিত। সরকার যে ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছে, তাতে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আরও সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। বিশেষ করে জেলা শহরগুলোতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করা এবং ইন্টারনেটের দাম সহনীয় রাখা। এ বিষয়গুলোয় জোর দেওয়া হচ্ছে বলে ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

সরকার ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বেসিস চাইছে, এই ফ্রিল্যান্সাররা এখন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠুক। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, আরও নতুন ফ্রিল্যান্সার আসবে। ফ্রিল্যান্সিংকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলে তা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। সরকার স্টার্টআপদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। ব্যাংকও এ খাতে কাজ করছে। অর্থাৎ বাজার তৈরি রয়েছে। বেসিস থেকে ফ্রিল্যান্সারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিংকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য সুবিধাও ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন ব্যাংক এশিয়া থেকে ফ্রিল্যান্সারদের সুবিধা দিতে বেসিসের সঙ্গে মিলে স্বাধীন নামে প্রি-পেইড কার্ড চালু করা হয়েছে। এ কার্ডের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা বিদেশ থেকে দেশে লেনদেন করতে পারবেন।

বেসিসের সভাপতি আলমাস কবীর জানান, ফ্রিল্যান্সারদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার পক্ষে তিনি। এ জন্য বেসিসের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দলগতভাবে বা এককভাবে (প্রোপ্রাইটরশিপ) বেসিসের সদস্য হওয়ার সুযোগ আছে। পুরো প্রক্রিয়াটা সহজ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সহজে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া, আইনি সহায়তা, ঋণ, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, বিপণন কৌশল ও ব্র্যান্ডিংয়ে সহায়তা করার বিষয়গুলো রয়েছে। এ ছাড়া দেশে যেসব হাইটেক পার্ক হবে, সেগুলোয় ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটি ফ্লোর রাখার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।

ঢাকার বাইরে জেলা শহরে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করা মুন্সী জাহাঙ্গীর জানান, এলাকা থেকে কাজ করতে পেরেই তিনি খুশি। তবে দ্রুতগতির ইন্টারনেট আর এর দাম কমাটা জরুরি। চাকরির পরিবর্তে ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। চাকরির খোঁজে ঢাকায় যাওয়া পছন্দ নয় তাঁর। ঢাকাসহ সারা দেশে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে যেসব সেমিনার হয়, সেখানে তরুণদের অংশগ্রহণ থাকে চোখে পড়ার মতো। দেশে ইতিমধ্যে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে।

সরকারিভাবে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠছে ফ্রিল্যান্সারদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বা স্টার্টআপ। এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকার স্টার্টআপদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। ব্যাংকও এ খাতে কাজ করছে। অর্থাৎ বাজার তৈরি আছে। তবে এ খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সারদের ‘আইডেনটিটি ক্রাইসিস’। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ সমস্যা কাটতে শুরু করেছে। অনেকেই এ খাতে ভালো করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। হয়ে উঠেছেন ‘ভিআইপি’। কারণ, ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে এখন সবখানেই আলোচনা চলছে। অনেকেই বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন। আইডেনটিটি ক্রাইসিস নয়, বাংলাদেশের পরিচয় তুলে ধরছেন।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com