বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ ফ্রান্সের খ্যাতি পৃথিবী জুড়ে। উন্নত জীবনযাত্রা ও শিক্ষাব্যবস্থা, শক্তিশালী অর্থনীতি এসব কারণে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরাও উৎসাহী হয়ে উঠেছেন এদেশে উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য।
শিক্ষা ও গবেষণায় ফ্রান্সের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য। ফ্রান্সের জাতীয় বাজেটের এক পঞ্চমাংশেরও বেশী ব্যয় হয় শিক্ষা খাতে। সারা বিশ্বে খুব কম দেশই আছে যারা ফ্রান্সের মতো শিক্ষা ও গবেষণায় এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে। ফ্রান্সের এ বিশাল বিনিয়োগ যে বিফলে যাচ্ছে না তা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং দিকেই তাকালেই বোঝা যায়। টাইমস হাইয়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির রেটিং ২০১৮ অনুযায়ী, বিশ্বের সেরা পাঁচশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পাঁচশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪ টি ফ্রান্সের। এর মধ্যে প্যারিসেই রয়েছে ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়।
স্টাডি ইন ফ্রান্স ম্যাগাজিন সূত্রে জানা যায়, ফ্রান্সে বর্তমানে প্রায় তিন লাখের মতো বিদেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে।
ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা, ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট কোর্স, পিএইচডিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কোর্স করার সুযোগ রয়েছে।
ইকোনমিক্স, সোশ্যাল এডমিনিস্ট্রেশন, আর্টস, হিস্ট্রি, জিওগ্রাফি, হেরিটেজ অ্যান্ড ট্যুরিজম, ল, কম্পিউটার সায়েন্স, জিওলজি, বায়োলজি, ফিজিক্স, লিটারেচার, মেডিক্যাল সায়েন্স, ফার্মেসি, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সায়েন্স, ইনফরমেশন সায়েন্স, ফিলোসফি, মিউজিক, আরবান প্ল্যানিং, বিজনেস স্টাডিজ, ইলেকট্রনিক্স, এনাটমি, রেডিওলজি, ফার্মাকোলজি, ভিডিও অ্যান্ড মিডিয়া, বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ আরো অনেক বিষয়ে এদেশে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ রয়েছে।
সাধারণত ব্যাচেলর কোর্সের মেয়াদ ৪ বছর, মাস্টার্স কোর্সের মেয়াদ ১ বছর ও অন্যান্য কোর্স বিভিন্ন মেয়াদে পরিচালিত হয়। উচ্চশিক্ষার্থে এদেশে নিজ দেশ ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা প্রায় সমপর্যায়ের।
ফ্রান্সে প্রত্যেকটি কোর্সের সঙ্গে ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক, যার ফলে আপনি প্রত্যেকটি বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তবজ্ঞানও অর্জন করতে পারবেন।
ফ্রান্সে যাওয়ার আগে ফ্রান্সের ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। এজন্য অলিয়ঁস ফ্রঁসেজে যোগাযোগ করতে পারেন। বাংলাদেশে ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ও পরিচিতির জন্যই অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার প্রতিষ্ঠা। এটি ফরাসি রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে।
এখানে ফ্রেঞ্চ ভাষা শেখানো ছাড়াও পাশ্চাত্য নৃত্য, বাদ্যযন্ত্র প্রভৃতির উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এখানে ফরাসী চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী ও কনসার্ট আয়োজন করা হয়।
এবার চলুন জেনে নিই, কীভাবে বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করবেন,
ফ্রান্সে কয়েক ধরণের স্টুডেন্ট ভিসা রয়েছে,
শেনঞ্জেন স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ তিন মাস পর্যন্ত থাকে। বিশেষ করে আপনি যদি ফ্রান্সে কোনো কোর্স বা গবেষণা কাজের জন্য যেতে চান, তাহলে শেনঞ্জেন স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
আপনি যদি ফ্রান্সের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চান তাহলে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। আপনি যদি পরীক্ষায় পাস করেন তাহলে পরবর্তীতে আপনার ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারবেন। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বিভাগে অথবা ফ্রান্স দূতাবাসে যোগাযোগ করতে পারেন।
ফ্রান্সে আপনার পড়াশোনার মেয়াদ যদি ছয় মাসের জন্য হয়ে থাকে তাহলে টেম্পোরারি লং স্টে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
আপনি যদি ব্যাচেলর বা মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য ফ্রান্সে যেতে চান, যেগুলোর মেয়াদ এক থেকে চার বছরের জন্য হয়ে থাকে তাহলে আপনি লং স্টে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
১। আপনার সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
২। এমব্যাসির কালচারাল অ্যাটাচির (Cultural attaché) সাথে ই-মেইলে যোগাযোগ করে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
৩। নির্ধারিত দিনে সকল ডকুমেন্টস নিয়ে এম্বেসিতে সঠিক সময়ে উপস্থিত থাকতে হবে।
৪। ঐদিনই দূতাবাস থেকে আপনাকে একটি দ্বিতীয় ঐচ্ছিক এপোয়েন্টমেন্ট দেয়া হবে।
৫। পর্যালোচনা শেষে ভিসা দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে।
পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে প্রায় তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে।