কানাডার টরন্টোর অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সী ৩০ তরুণ নেতার তালিকায় স্থান পেয়েছেন কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি গবেষক ও উদ্যোক্তা নবনীতা নাওয়ার। এই তালিকায় একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে তিনি স্থান পেয়েছেন।
বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ‘ফোর্বস’ ৯ আগস্ট (বুধবার) এই প্রথমবারের মতো ৩০ তরুণ নেতার তালিকা প্রকাশ করেছে। পরবর্তী সিলিকন ভ্যালি টরন্টোকেন্দ্রিক প্রথম এই তালিকায় আর্থিক, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, ক্রীড়া ও কলা ক্ষেত্রে সফল তরুণদের নির্বাচিত করা হয়েছে।
এইচড্যাক্স থেরাপিউটিকসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশী নবনীতা নাওয়ার। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানটির আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা থাই বংশোদ্ভূত পিমুয়াপা মানসিয়ংকুলও স্থান পেয়েছেন ফোর্বসের এই তালিকায়। তিনি দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) হিসেবে। যেসব রোগের ওষুধ এখনো নেই, সেই সব ওষুধ আবিষ্কার করার উদ্দেশ্যে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান।
এইচড্যাক্স থেরাপিউটিকস সম্পর্কে ফোর্বস বলছে, ‘এই প্রথমবারের মতো পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির (পিএন) চিকিৎসা বা ওষুধের উন্নয়ন করছে, যা বিশ্বের তিন কোটির বেশি মানুষের কাজে আসবে। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য নেওয়া কেমোথেরাপি, ডায়াবেটিস, কোনো আঘাত বা জিনগত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুর কারণে ব্যথা, বোধহীনতা, পক্ষাঘাত ও চলনহীনতায় ভোগেন পিএন রোগীরা। এই রোগের এখনো কোনো ওষুধ নেই, যা এই রোগের বেড়ে ওঠাকে ঠেকাতে পারে। এইচড্যাক্স ২০২৫ সালের প্রথম দিকে রোগীদের আশা জাগানোর মতো ওষুধ তৈরি করার পথে রয়েছে।
নারী নেতৃত্বে চলা দলটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা পিএন রোগীদের জীবন রঙিন করে তুলতে পারে। ক্যানসার গবেষণার সেরা ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোতে পাঁচ বছরেরে গবষেণার পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এইচড্যাক্স। এটি পরিচালনা করছেন পিএচডি ডিগ্রিধারী উদ্যোক্তারা। নতুন ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এইচড্যাক্স এ পর্যন্ত আট লাখ মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে। নবনীতা নাওয়ার ও পিমুয়াপা মানসিয়ংকুল ছাড়া আরও দুজন সহপ্রতিষ্ঠাতা রয়েছেন এইচড্যাক্স থেরাপিউটিকসে। তাঁরা হলেন নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. রোমান ফ্লেক এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্যাট্রিক গানিং।’
কানাডায় এই মুহূর্তে ব্যবসা ও প্রযুক্তি জীবনের কেন্দ্রে টরন্টোর অবস্থান বলে ফোর্বসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এখানে তরুণেরা নানা উদ্ভাবনী ধারণা, উদ্ভাবনী উদ্যোগ (স্টার্টআপ) নিয়ে কাজ করছেন, যা ভবিষ্যৎ দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেবে। এজন্যই টরন্টোর জন্য ফোর্বস আলাদা তালিকা তৈরি করেছে।
এই তালিকা প্রকাশ করে ফোর্বস বলেছে, ৩০ বছরের কম বয়সী টরন্টোর ৩০ তরুণ নেতার কেউ সহায়তা করেন শহরে নিরাপদ ড্রোন চলাচলে, কেউ উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে বিকল্প প্লাস্টিক বানান, আবার কেউ লেখা শনাক্তকারী নির্মাণসামগ্রী তৈরি করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে।
নারায়ণগঞ্জে মাহবুবুর রহমান ও গুলশান পারভীনের ঘরে ১৯৯৪ সালের ১১ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন নবনীতা নাওয়ার। বাবা পেশায় একজন তৈরি পোশাক কারখানার মালিক এবং মা গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড় নবনীতা। ২০২১ সালে প্রকৌশলী ওয়াসিফ আজম চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
নবনীতা ঢাকার আগা খান স্কুল থেকে এ–লেভেল উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৩ সালে বায়োমেডিক্যাল কেমিস্ট্রি নিয়ে কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করেন মেডিসিনাল কেমিস্ট্রিতে। সেখানেই চলতে থাকে তার গবেষণা। ২০২১ সালে এইচড্যাক্স থেরাপিউটিকস নামক প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন। ফাঁকে মাঝেমধ্যে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সিজনাল লেকচারার’ হিসেবে অধ্যাপনাও করেন। ১০ বছর ধরে থেকে দেশটির পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পেয়েছেন এই গবেষক।
ফোর্বসের তালিকা প্রকাশের পর নবনীতা নাওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অসংখ্য মনোনয়ন থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে ফোর্বস যাচাই–বাছাই করেছে। এরপর কাজের বিস্তারিত জেনে ফোর্বস তালিকা চূড়ান্ত করেছে। এমন একটি সম্মানজনক তালিকায় নিজের নাম দেখে আমি খুবই আনন্দিত। আমার পরিবার, বন্ধু-স্বজন সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁদের সমর্থন না থাকলে কাজ করে যেতে পারতাম না। আমাদের লক্ষ্য পূরণে আরও কাজ করে যেতে চাই।’
এই গবেষক আরও বলেন, ‘লাইফ সায়েন্স নিয়ে আমার আগ্রহ ছিল সব সময়। তবে চিকিৎসক হতে চাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আর গবেষণা করতে করতে “ওষুধের জন্য রসায়ন” বিষয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠি। রসায়নবিজ্ঞান দিয়ে কীভাবে মানুষকে সহযোগিতা করা যায়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ আর সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলছে নবনীতাদের এইচড্যাক্স থেরাপিউটিকস।’