সব কনটেন্ট নির্মাতাই চান নিজের কনটেন্ট অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাক। কনটেন্ট আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রথমে ফেসবুকের ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বা কোন প্রক্রিয়ায় কনটেন্টের প্রচার বা বিতরণ করা হয় সে সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখা দরকার।
ফেসবুকে সবাই সব ধরনের কনটেন্ট পছন্দ করেন না। প্রত্যেকের আলাদা পছন্দ রয়েছে। কোনো ব্যবহারকারীরা যে ধরনের কনটেন্ট আকর্ষণীয় মনে করেন, ফেসবুক তাদের কাছে সেই ধরনের কনটেন্টই পৌঁছে দেয়। আর এই পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়াটি হচ্ছে ফেসবুকের ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম।
চলুন এই সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে নেওয়া যাক এবং আপনার কনটেন্ট আরও বেশি মানুষের কাছে কীভাবে পৌঁছাবেন তার উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে ফেসবুক সাধারণত ৪টি বিষয় বিবেচনায় রাখে।
ব্যবহারকারীর নিউজফিডে বন্ধুরা, অন্যান্য কনটেন্ট নির্মাতারা এবং পেজগুলো থেকে আরও কী কী কনটেন্ট পোস্ট করা হয়েছে তা ফেসবুক যাচাই-বাছাই করে থাকে। তারপর সেগুলোর মধ্যে কোনগুলো তাকে আগে দেখাবে তা তারা ঠিক করে।
আগেই বলা হয়েছে, সব কনটেন্ট সবাই পছন্দ করেন না। তাই একজন ব্যবহারকারী কোন কনটেন্ট পছন্দ করতে পারে তা ফেসবুক কয়েকটি বিষয়ের মাধ্যমে যাচাই করে। যেমন, কনটেন্টটি কে পোস্ট করেছে, কখন এটি পোস্ট করা হয়েছিল, এর বিষয়বস্তু কী ছিল, ব্যবহারকারীর অতীতের আচরণ, ইত্যাদি দিয়ে যাচাই করে থাকে।
ফেসবুক আগে থেকেই পূর্বানুমান করার চেষ্টা করে, একজন ব্যক্তির আপনার পোস্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার এবং এটিকে অর্থপূর্ণ মনে করার সম্ভাবনা কতটুকু। অর্থাৎ, আপনার কনটেন্টটি কেউ দেখবে কি না সেটি তারা আগে থেকেই অনুমানের চেষ্টা করে। তারা প্রতিটি কনটেন্টের জন্য এরকম অনেকগুলো পূর্বানুমান বা ভবিষ্যদ্বাণী তৈরি করে রাখে।
ব্যবহারকারীর কাছে কোনো একটি কনটেন্ট নিয়ে আসলে তাতে তারা আগ্রহী হবে কি না, সেটি ফেসবুক বের করার চেষ্টা করে। এখানে পোস্টগুলোর সব ডেটার ওপর ভিত্তি করে, কোন কনটেন্টগুলোকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তা ঠিক করা হয়।
ফেসবুক কনটেন্টগুলো ডিস্ট্রিবিউট বা বিতরণ করার আগে এসব বিষয় হিসেব করে। কেউ যখন তার ফেসবুক একাউন্ট খোলে, তখন ফেসবুক প্রত্যেকের জন্য, প্রতিটি কন্টেন্টের জন্য এই ধাপগুলো অনুসরণ করে তার সামনে কনটেন্ট উপস্থাপন করে।
মোটাদাগে ২টি উপায়ে ফেসবুক কনটেন্টগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়।
যারা আপনাকে ফেসবুকে ফলো করে কিংবা আপনার সঙ্গে যারা ফেসবুকে সংযুক্ত আছে। তারা যখন আপনার পোস্ট দেখতে পায়, তখন সেটি হয় কানেকটেড ডিস্ট্রিবিউশন। অর্থাৎ, আপনার ফ্রেন্ড লিস্টের বন্ধুরা কিংবা পেজে লাইক করা ফলোয়াররা যে উপায়ে আপনার কনটেন্ট দেখতে পায় সেটি হচ্ছে কানেকটেড ডিস্ট্রিবিউশন। ফেসবুকে এরাই আপনার মূল দর্শক।
আনকানেকটেড ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে, যারা আপনার পোস্টগুলো দেখে তারা আপনাকে ফলো করে না কিংবা আপনার পেজে তাদের লাইক নেই। কিন্তু আপনার কন্টেন্টে তারা আগ্রহী। এই ধরনের ডিস্ট্রিবিউশন কয়েকভাবে হতে পারে। যেমন, অন্যান্য ব্যবহারকারীরা আপনার পোস্ট শেয়ার এবং রিশেয়ার করার মাধ্যমে কিংবা ফেসবুকের ‘সাজেস্টেড ফর ইউ’ বিভাগের রিকমেন্ডেশনের মাধ্যমে এটি হতে পারে।
শুরুর দিকে ফেসবুক প্রধানত ব্যবহারকারীর বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার একটি উপায় হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। অর্থাৎ, এখানে মূলত কানেকটেড ডিস্ট্রিবিউশন হতো।
তবে এখন, আপনি চাইলে আপনার সরাসরি চেনা মানুষের পরিমণ্ডলের বাইরেও আরও বিস্তৃত দর্শকের কাছে আপনার কনটেন্ট পৌঁছে দিতে পারবেন। যা আনকানেকটেড ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
যেহেতু কানেকটেড ডিস্ট্রিবিউশনের সুবিধা আপনি যেকোনো কনটেন্ট পোস্ট করলে এমনিতেই পাবেন। সে ক্ষেত্রে, আপনার কনটেন্ট আরও নতুন নতুন মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে আনকানেকটেড ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবহার করতে হবে।
আপনার কনটেন্টকে আনকানেকটেড ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য উপযুক্ত করতে কিছু বিষয় পালন করতে হবে। যেমন-
কনটেন্ট নির্মাতারা সবচেয়ে বেশি ডিস্ট্রিবিউশন পায় যখন তারা নিজেরাই সবকিছু তৈরি করে কনটেন্ট পোস্ট করে। অর্থাৎ কনটেন্টে যখন নির্মাতার নিজের তৈরি ভিডিও, অনন্য কণ্ঠ এবং তার অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি থাকে তখন সেটি সবার কাছে বেশি পৌঁছায়। তাই কনটেন্ট হতে হবে মৌলিক। মৌলিক কনটেন্টগুলো স্বতন্ত্র, আকর্ষণীয় এবং অনেক ব্যবহারকারীরা এগুলো পছন্দ করে।
এমন কনটেন্ট তৈরি করুন, যেগুলো অন্য ব্যবহারকারীরা শেয়ার করতে চাবেন। অর্থপূর্ণ কথোপকথন তৈরি করে, সম্মানজনক আলোচনার জন্ম দিবে এবং আরও লাইক বা প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসবে, এরকম কনটেন্ট তৈরি করুন। এগুলো শেয়ার এবং রিশেয়ার হবে, যা আপনার কনটেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন অনেকাংশে বাড়াবে।
আপনি ফেসবুকের ভিডিও অপশনে কিংবা নিউজফিড স্ক্রল করার সময় অনেক রিকমেন্ডেড বিভিন্ন ভিডিও দেখতে পাবেন। যেগুলো ফেসবুক অ্যালগরিদম নিজে থেকেই করে থাকে। এগুলো আপনাকে সবচেয়ে বেশি নতুন দর্শক এনে দেয়। তাই রিকমেন্ডেড কনটেন্ট হওয়ার জন্য নিশ্চিত করুন যে, আপনার কন্টেন্ট ফেসবুকের সব নিয়ম-কানুন বা গাইডলাইন মেনে চলছে। এই গাইডলাইনগুলো থেকে বোঝা যায় ফেসবুক কী কী তাদের রিকমেন্ডেশনে রাখবে এবং কী কী রাখবে না।
এ ছাড়া বর্তমানে আরও নতুন নতুন মানুষের কাছে পৌঁছানোর একটি দুর্দান্ত উপায় হচ্ছে ফেসবুক রিলস। যা আপনার জন্য নতুন নতুন ফলোয়ারও নিয়ে আসতে পারে।
সবশেষে, অরিজিনাল বা মৌলিক কনটেন্ট তৈরি করুন, যেগুলোয় আপনার দর্শকরা সম্পৃক্ত হতে পারে। মৌলিক, আকর্ষণীয় এবং অর্থপূর্ণ কনটেন্ট আপনাকে নতুন মানুষের কাছে পৌঁছাতে এবং আপনার দর্শক বাড়াতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, কোন কোন কৌশল কাজ করছে এবং আপনি কোথায় উন্নতি করতে পারেন, সেগুলো দেখতে ঘন ঘন আপনার ক্রিয়েটর স্টুডিওর ফলাফলগুলো পরিমাপ করুন।
তথ্যসূত্র: মেটা