ফেসবুকে আমরা সবাই আসক্ত হয়ে পড়ছি। অনেকে বলছেন কিংবা বিশ্বাস করছেন, ফেসবুক মানেই সময় নষ্টের জায়গা, ফেসবুক মানেই বর্তমান যুগে সব কুকর্মের স্থান। ফেসবুক মানেই হলো তরুণ ছেলেমেয়েদের বিপথে যাওয়ার জায়গা। কথাগুলো কিন্তু মিথ্যা নয়। আসলে এ ঘটনাগুলো এখন ফেসবুকের মাধ্যমেই ঘটছে।
পড়ালেখা বাদ দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম বয়সী ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে সময় নষ্ট করছে। কিন্তু এ ফেসবুকের মাধ্যমে ভালো ভালো ঘটনাও ঘটছে, অনেক অপরাধীকে পাকড়াও করা, রক্ত জোগাড় করা, বিভিন্ন জনের বিপদে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে টাকা উঠিয়ে তার চিকিৎসা করানোসহ আরও অনেক ভালো কাজের উদাহরণ রয়েছে, যা ফেসবুক থাকার কারণেই হয়েছে।
সব কিছুর ভালো এবং খারাপ দুটো দিকই রয়েছে। সচেতনতার অভাবে আমরা হয়তো খারাপ কাজেই বেশির ভাগ সময় ফেসবুককে ব্যবহার করছি, কিন্তু যারা অনলাইন প্রফেশনাল, তারা ফেসবুককে বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ মনে করছে।
বিশ্বের সব জায়গার এত মানুষ এখন ফেসবুকে রয়েছে, এত মানুষকে খুব সহজেই ফেসবুকের মাধ্যমে টাচ করা যায়। পৃথিবী এখন সত্যিকারের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে ফেসবুকের কল্যাণে। ফেসবুকের কল্যাণে এখন বাংলাদেশে বসে আমেরিকার একজনের বন্ধুত্ব হচ্ছে, আমেরিকার প্রতিটা মুহূর্তের আপডেট জেনে যাচ্ছি।
ফেসবুকের মাধ্যমে যেহেতু আমেরিকার একজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হচ্ছে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, ফেসবুক কত ছোট করে ফেলেছে দুনিয়াটাকে। এই সুবিধাটা কাজে লাগিয়ে কেউ বিষয়টিকে কাজে লাগাচ্ছে। আর কেউ হয়তো আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করছে।
আপনি কীভাবে কাজে লাগাবেন, সেটি আপনার সিদ্ধান্ত। এ বইটা মূলত তৈরি করেছি, যারা ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে এই নেশাটাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রফেশনালি কাজে লাগাতে পারে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে ফেসবুক, সেটি যাতে কাজে লাগিয়ে নিজেও স্বাবলম্বী হতে পারে, সেই ব্যাপারেই গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করছি পুরো বইটাতে।
আমরা সবাই ফেসবুক ব্যবহারটা জানি। এখানে আর কিছু বিষয় জেনে নিলে ফেসবুক থেকে মাসে ভালো একটা ইনকাম করা সম্ভব। আগে জেনে নেই, ফেসবুক ব্যবহার জেনেই কীভাবে ইনকাম করতে পারবেন?
১) এফ-কমার্স: ফেসবুকে পেজ খুলেই বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করা যায়। যেটা ইদানীং সবাই ফেসবুকে দেখছেন। যারা এভাবে কাজ করছেন, যারা এভাবে কাজ করছেন, তাদের মাসিক আয় হচ্ছে ১০,০০০ টাকা – ৩০,০০০ টাকা। কারও কারও ভালো ইনভেস্ট থাকার কারণে আরও বেশি ইনকাম হচ্ছে। সেটা ১ লাখ থেকে ২ লাখও হতে পারে। প্রোডাক্ট: শাড়ি, মেয়েদের ড্রেস, গিফট আইটেম ইত্যাদি। চ্যালেঞ্জ: ছোট ইনভেস্ট, প্রোডাক্ট সিলেক্ট, প্রোডাক্ট ডেলিভারি, মার্কেটিং
২) টি-শার্ট অ্যাফিলিয়েশন:বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয় ইনকাম সোর্স হচ্ছে টি-শার্ট অ্যাফিলিয়েশন। এ অ্যাফিলিয়েশনের জন্য শুধুমাত্র ফেসবুককেই ব্যবহার করা হয়। এভাবে মাসে ১০,০০০ টাকা থেকে ১ লাখ টাকা ইনকাম করা সম্ভব। প্রোডাক্ট: টি-শার্ট, মগ, হুডি ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ: নিশ সিলেক্ট, অডিয়েন্স টার্গেট, মার্কেটিং
৩) হোস্টিং অ্যাফিলিয়েশন: হোস্টিং অ্যাফিলিয়েশনের জন্য শুধুমাত্র ফেসবুক মার্কেটিং করে ইনকাম করা যায়। ইনকাম কয়টা সেল করেছেন, সেই অনুযায়ী বাড়তে থাকে। ইনকাম মাসে ৫০০০ টাকা – ৮০,০০০ টাকা হতে পারে। তবে হোস্টিং অ্যাফিলিয়েশনকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়া সম্ভব না। কারণ নিয়মিত ইনকাম সম্ভব হবে না। প্রোডাক্ট: বিভিন্ন কোম্পানির হোস্টিং চ্যালেঞ্জ: কনটেন্ট ডেভেলপ, সম্ভাব্য কাস্টমার খুঁজে বের করা, মার্কেটিং
৪) লোকাল ব্যবসা: লোকাল যে কোন ব্যবসার প্রফিট বৃদ্ধির জন্য এখন ফেসবুক মার্কেটিংকে সবাই ব্যবহার করছে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে আরও অন্যান্য ব্যবসাতেও ফেসবুকে মার্কেটিং করেই ইনকাম বৃদ্ধি করতে হয়। প্রোডাক্ট: সার্ভিস, ট্রেনিং, প্রোডাক্ট ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ: ইনভেস্ট, প্রোডাক্ট বাছাই, দক্ষ ব্যক্তি, মার্কেটিং
৫) লোকাল চাকরি: যে কোনো ব্যবসাতে যেহেতু ফেসবুক মার্কেটিং এখন বড় একটি ফ্যাক্ট। সুতরাং, প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে এ কাজটি করার জন্য ফেসবুক মার্কেটিংয়ের এক্সপার্ট লোকজনের চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা বেতনে এ সেক্টরে চাকরিতে নিচ্ছে। প্রোডাক্ট: সার্ভিস, ট্রেনিং, প্রোডাক্ট ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ: রিয়েল কাজের অভিজ্ঞতা, ব্যবসাতে প্রফিট বৃদ্ধি করা
৬) সাইটে ট্রাফিক আর সেখান থেকে অ্যাডসেন্স: একটা সাইটে যত বেশি ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারবেন, তত সাইটের অ্যাডভার্টাইজ থেকে ইনকাম বৃদ্ধি পাবে। ইনকাম ৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ হতে পারে। প্রোডাক্ট: একটা ব্লগ সাইট চ্যালেঞ্জ: নিশ সিলেকশন, সাইট প্রস্তুত, কনটেন্ট ডেভেলপ, মার্কেটিং
৭) নিজের দক্ষতাকে ব্রান্ডিং: আপনি যদি নিজেকে দক্ষ মনে করেন, কিন্তু কোথাও তারপরও চাকরি হচ্ছে না, তাহলে সেক্ষেত্রে বলব, আপনি আপনার দক্ষতাকে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রমোশন চালান। তাহলে ফেসবুকের মাধ্যমেই অনেকে দক্ষতার ব্যাপারে জানতে পারলে আপনার কাজের অভাব হবে না। কাজ আপনাকে খুঁজে বের করবে। তখন কাজ করে শেষ করতে পারবেন না। প্রোডাক্ট: নিজের দক্ষতা চ্যালেঞ্জ: কনটেন্ট ডেভেলপ, দক্ষতা সম্পর্কিত গ্রুপগুলোতে অ্যাক্টিভ থাকা, মার্কেটিং
৮) ফাইভারের গিগ সেল বৃদ্ধি: ফাইভারে গিগের যত বেশি প্রমোশন চালাবেন, ততই গিগ সেল বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু ফেসবুক প্রমোশন চালাতেও সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। সঠিক জ্ঞান ছাড়া গিগ প্রমোশন চালালে ফাইভারে ইনকাম বাড়বে, উল্টো ফাইভার অ্যাকাউন্টটাই নষ্ট হয়ে যাবে। প্রোডাক্ট: ফাইভার গিগ চ্যালেঞ্জ: অডিয়েন্স টার্গেট করতে পারা, কনটেন্ট ডেভেলপ করতে পারা, মার্কেটিং
৯) মার্কেটপ্লেসে কাজ: ফেসবুক যেহেতু মার্কেটিংয়ের অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম, সেহেতু মার্কেটপ্লেসে এখন প্রচুর কাজ পাওয়া যাচ্ছে এ সম্পর্কিত। মাসে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারেন। প্রোডাক্ট: বায়ার রিকোয়েরমেন্ট অনুযায়ী সার্ভিস চ্যালেঞ্জ: কাজের পূর্বঅভিজ্ঞতার প্রমাণ, বায়ার কনভেন্স করতে পারা এবং রিপোর্টিং।
ফেসবুকের মাধ্যমে ইনকাম করবেন বলেছি, কিন্তু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে পারেন কিংবা বিভিন্ন গ্রুপে গিয়ে লিংক শেয়ার করতে পারেন কিংবা পেজে লাইক বৃদ্ধি করতে পারেন দেখে ফেসবুক মার্কেটার হয়ে গেছেন ভেবে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার দরকার নেই।
নিচের দক্ষতাগুলোকে ফেসবুক মার্কেটিংয়ের দক্ষতা ভাববেন না- ১) ফেসবুকে স্ট্যাটাসে কিছু লিখতে পারা ২) অন্যের পোস্টে কমেন্ট করতে পারা ৩) ভালো লেখালেখি করতে পারা ৪) অন্য গ্রুপে পোস্ট করতে পারা ৫) ফেকলাইক বৃদ্ধি করতে পারা ৬) অন্যের গ্রুপে কিংবা অন্যের পোস্টে গিয়ে লিংক শেয়ার করা
ফেসবুক মার্কেটার হিসেবে যে যে দক্ষতা থাকতে হবে-
১) লিড সংগ্রহ: ফেসবুকে লাইক বৃদ্ধি করে ব্যবসার জন্য লাভ নেই। লিড বৃদ্ধি করতে হবে। ওজন কমানোর কোনো ওষুধ বিক্রি করার জন্য পেজ খুলছেন। সে পেজে ১০ হাজার লাইক রয়েছে, যার মধ্যে ৯ হাজার ৯৯৯ হচ্ছে চিকন মানুষের লাইক। তাহলে তাদের কাছে জীবনে ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। যারা মোটা এবং মোটা নিয়ে চিন্তিত তাদেরই আপনার পেজে নিয়ে আনা উচিত। এদেরকেই পেজে নিয়ে আনাকে লিড সংগ্রহ বলে।
২) লিড পরিচর্যা: পেজে যখন লিড তৈরি হলো তাদের জন্য সচেতনতামূলক পোস্ট দিয়ে দিয়ে মোটা থেকে চিকন হওয়ার গুরুত্বমূলক, সচেতনতা তৈরি মূলক পোস্ট তৈরি করতে হবে। এগুলো দেখে সেই পেজের মানুষজনের মধ্যে চিকন হওয়ার প্রোডাক্ট কেনার আগ্রহ তৈরি হবে। একেই বলে লিড নার্সিং বা লিড পরিচযা।
৩) সেলস ফানেল: আমরা মার্কেটিং করার সময় সব সময় প্রোডাক্টি কেনা সম্পর্কিত পোস্টটাই দিয়ে থাকি। প্রোডাক্টের মূল্য, প্রোডাক্ট কেন ভালো এ টাইপ পোস্ট প্রতিনিয়ত দিয়ে থাকি। এটা করলে একটা পর্যায়ে সেল বন্ধ হয়ে যায় কিংবা সেল ভালো পাওয়া যায় না। কিন্তু দেখা যায় পরিশ্রম প্রচুর করা হচ্ছে। এটাকে সহজ একটা ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি।
বাসাবাড়িতে পানির ট্যাংকি থাকে। ঘরের ভেতরে কল ছেড়ে রেখে দিয়েছেন। পানি পড়তে পড়তে একসময় ট্যাংকি খালি হয়ে যাবে। যে রকম কল ছেড়েছেন, সে রকম মোটর চালিয়ে নিয়মিত ট্যাংকিতেও পানি ভরতে হবে।
মোটর চালিয়ে পানি উঠাবেন, এটাকে লিড সংগ্রহ বলে। ট্যাংকিতে পানি ভরেছে, সেটাকে লিড পরিচর্যা বলে। পরে কল ছেড়েছেন, সেটা হচ্ছে সেল শুরু হয়েছে। আর পুরো প্রক্রিয়াটিকে সেলস ফানেল বলে। সেলস ফানেল নিয়ে একটি অধ্যায় করা হয়েছে, সেখানেই আরও বিস্তারিত বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
৪) কনটেন্ট ডেভেলপ: কনটেন্ট বলতে আর্টিকেল, কোনো লিখার লিংক, গ্রাফিক, ভিডিও সবকিছুকে কনটেন্ট বলে। কনটেন্ট ডেভেলপের ক্ষেত্রে প্রোডাক্ট সেল করা বিষয়টি মাথাতে রেখেই পরিকল্পনা করতে হবে। লিড সংগ্রহ, লিড নার্সিং, সেলস ফানেল তৈরির চিন্তা করে কনটেন্ট ডেভেলপ করতে হবে।
৫) সম্ভাব্য কাস্টমারের আচরণ বোঝা: সম্ভাব্য কাস্টমারের বয়স, সেক্স, তাদের কেনার ক্ষমতা, কেনার অভ্যাস, তাদের আচরণ বুঝতে হবে, সেই অনুযায়ি কনটেন্ট ডেভেলপ করতে হবে। সম্ভাব্য কাস্টমারদের ডাটা কালেক্ট করা এবং তাদের আচরণটা অ্যানালাইস করা জানতে হবে।
৬) নিউজ ফিড অ্যালগরিদম: ফেসবুকে কার ওয়্যালে কোন পোস্ট দেখাবে এটা একটা অ্যালগরিদম মেইনটেইন করে চলে, যেটাকে EDGE Rank বলে। আর এ অ্যালগরিদমের কারণেই আপনাকে ফ্রেন্ড লিস্টের সবার পোস্ট আপনি দেখেন না, আপনার পোস্টও সবাই দেখে না। এটা না বুঝে মার্কেটিং করেন দেখেই কোনো উপকার পাচ্ছেন না। আপনি ১০০ গ্রুপে হয়তো মার্কেটিং করছেন, কিন্তু আসলে আপনার পোস্টকে ফেসবুক কারও ওয়্যালে শো করতেছে না শুধুমাত্র এ অ্যালগরিদমটার কারণে।
৭) সঠিক অডিয়েন্স টার্গেট করা: সঠিক অডিয়েন্স খুঁজে বের করে শুধুমাত্র তাদের কাছেই মার্কেটিং করেন। এ সঠিক অডিয়েন্স কারা সেটা বোঝার জন্য অনেক টুলস রয়েছে যার ব্যবহার না জেনে অন্ধের মতো মার্কেটিং করলে সময়টাই নষ্ট হবে। ইনকাম আর হবে না।
৮) পেইড অ্যাডভার্টাইজিং: ফেসবুকে পেইড অ্যাডভার্টাইজিং চমৎকার একটা মার্কেটিং সলিউশন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে মনে করে ১ ডলার খরচ করে কত বেশি মানুষের কাছে রিচ করতে পারলাম, তত আমি বড় মার্কেটার হয়ে গেছি। আসলে কত বেশি মানুষ পোস্টটা দেখল, সেটাতে আপনার স্বার্থকতা না, কতজন আপনার প্রোডাক্টটি কিনল, সেটাতে মার্কেটিংয়ে সফলতা। সে জন্য সঠিক পেইড মার্কেটিংয়ের সঠিক পদ্ধতিগুলো শিখতে হবে।
৯) রিমার্কেটিং টেকনিক: ফেসবুক পেইড মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কোন প্রোমোশন যদি একই ব্যক্তির কাছে বারবার নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে প্রোডাক্টটি ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। এজন্য অডিয়েন্স ধরে রাখা, তাদের কাছে বারবার মার্কেটিং করে মেসেজ পৌঁছে দেয়াটাই হচ্ছে রিমার্কেটিং। এই টেকনিকটি বিক্রির জন্য অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
১০) ইনফ্লুয়েন্সার হওয়া: কোন বিষয়ে নিজেকে এক্সপার্ট হিসেবে অনলাইনে মানুষের ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে পারাকে ইনফ্লুয়েন্সার বলে। ইনফ্লুয়েন্সার হলে মার্কেটিং করার কষ্ট কমে যায়। অল্প কষ্টে বেশি লাভ করা যায়। এ ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার টেকনিক জানা থাকতে হবে। মার্কেটিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্ট এটি।
১১) মাসিক মার্কেটিং রিপোর্ট পযবেক্ষণ: প্রতিটা মার্কেটিংয়ের প্রতিটা ফলাফল দেখার ব্যবস্থা রয়েছে ফেসবুকের কিছু টুলসে। সেগুলো অ্যানালাইস করতে না জেনে মার্কেটিং করলে কোনো লাভ নেই। সেগুলো না জেনেই মার্কেটিং করলে অন্ধের মতো সমুদ্রে সাঁতরানো হবে। ক্লায়েন্টকে রিপোর্টটি করার জন্য এবং রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পরিকল্পনার সাজানোর জন্য একজন মার্কেটারকে অবশ্যই রিপোর্ট বের করার টেকনিক জানা গুরুত্বপূর্ণ।
১২) রিপোর্ট অনুযায়ী মার্কেটিং প্লান তৈরি: মাসিক রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী মাসের মার্কেটিং প্লানটা সাজাতে হয়। কোন ধরনের কনটেন্ট মানুষকে আকর্ষণ করছে, কোন সময়ে মানুষজন অনলাইনে বেশি থাকে সেগুলো জেনে মার্কেটিং করলে পরিশ্রম অনেক কমে যাবে, ইনকামটাও বাড়বে।
১৩) কম্পিটিটরদের অ্যানালাইস করা: আপনার যারা কম্পিটিটর তাদের অ্যানালাইস না করে মার্কেটিংয়ে নামলে মার্কেটিং করে তো কোনো লাভ হবে না। হতাশাটাই শুধু পাবেন। কম্পিটিটিরদের অ্যানালাইস করলে তাদের ক্লায়েন্টদের চাহিদা সম্পর্কে জানতে পারবেন, তাদের দুর্বলতা, শক্তির দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন। কম্পিটিটরদের ডাটা অ্যানালাইস করেই আপনার মার্কেটিং প্লান সাজালে সফলতার দেখা পাবেন।
ফেসবুক পেজ থেকে কীভাবে ইনকাম করতে হয়? আসুন, ফেসবুকের মাধ্যমে ইনকামগুলো দেখি: ইনকাম-১: ধরি, আপনার পেজ থেকে নারীদের জন্য ড্রেস বিক্রি করবেন। কী করবেন?: একটা পেজ তৈরি করবেন। তারপর সেই পেজে নিয়মিত সুন্দর সুন্দর ড্রেসের ছবি আপলোড করবেন। আপনি যেই ড্রেস বিক্রি করবেন, আমি শুধু সেই ড্রেসের কথা বলছি না।
যে কোনো সুন্দর সুন্দর ড্রেসের ছবি আপলোড করেন। আর সাজগুজ সম্পর্কিত পোস্ট পেজে আপ করতে থাকেন। এবার এ পেজে যে পোস্টগুলো রয়েছে সেটা সবাইকে জানানোর জন্য সেই পোস্টগুলোর লিংক অন্যগ্রুপে শেয়ার করতে পারেন। একদম বেসিক পযায়ে এটা বললাম। বাকি বিস্তারিত পরে আলোচনা করেছি।
তাহলে এত সুন্দর সুন্দর পোস্ট আপনার পেজটিতে আসে জেনে যারা আপনার পেজে নিজের ইচ্ছাতে লাইক দেবে, তারাই এখানে লিড। যারা লাইক দিল, বোঝা যাবে, এরা সুন্দর ড্রেস দেখতে পছন্দ করে। এবার কিছুদিন পর থেকে পেজে যদি আপনি নিজের ড্রেস বিক্রি করতে চান, সেটি পোস্ট দিলে এ পেজের মানুষজন ড্রেস কিনার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।
যা করবেন না: ক) কাউকে লাইক দিতে রিকোয়েস্ট পাঠানোর দরকার নেই। খ) পেজে সেলসম্যানের মতো প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য সারাক্ষণ বিক্রির পোস্ট দিবেন না। ইনকাম-২: ধরি, অ্যাফিলিয়েশন কিংবা সিপিএর মাধ্যমে ইনকাম করবেন। এবার ধরি, অ্যাফিলিয়েশন কিংবা সিপিএ মাধ্যমে ইনকামের জন্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোনো পেজ খুললেন। ধরি, আপনি ওয়েট লস প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবেন।
কী করবেন: পেজে নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনামূলক পোস্ট করবেন। পোস্ট হতে পারে, ওজন কমানোর বিভিন্ন টিপস নিয়ে। কিংবা ওজন বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে। ইনফ্রোগ্রাফিক, ভিডিও পোস্টগুলো বেশি ইফেকটিভ হবে। সেই পোস্টগুলোর লিংক, কিংবা ইমেজটি কিংবা ভিডিওটি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আমেরিকা কিংবা ইউরোপ ভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করুন।
সেখানে নিয়মিত পেজের এত ভালো ভালো পোস্টগুলো পেলে আপনার পেজে লাইক দিতে আগ্রহী হবে। যেহেতু আপনি স্বাস্থ্য কমানোর টিপস নিয়ে পোস্টগুলো শেয়ার করছেন, সে জন্য আপনার পেজে লাইক যারা দেবে, তারা অবশ্যই ওজন বেশি নিয়ে চিন্তিত। ওজন কমানোর ব্যাপারে আগ্রহী দেখেই আপনার পেজে গিয়ে লাইক দেবে।
এবার পেজে সিপিএ লিংক কিংবা অ্যাফিলিয়েশন লিংক দিয়ে সেখান থেকে সেল পাবেন এবং অবশ্যই ভালো ইনকাম করতে পারবেন। যা করবেন না: ক) ফেক লাইক বাড়াবেন না। তাতে প্রোডাক্ট সেল হবে না। খ) উদ্দেশ্যহীনভাবে কোনো পোস্ট পেজে করবেন না। এখানে ২টি উপায়ে ইনকাম নিয়ে বিস্তারিত লিখেছি।
আগের অধ্যায়ে ৯টি উপায়ে ইনকামের কথা বলেছি। তাছাড়া ফেসবুক মার্কেটিংয়ের দক্ষতা থাকলে লোকাল বিভিন্ন কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরির সুযোগও রয়েছে। ফেসবুকের বিশাল জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে এখন মানুষ প্রচুর ইনকাম করছেন। যদিও কিছু খারাপ দিকও আছে। এ ইনকামের কথা জেনে, মানুষ ফেসবুকের বুকে মার্কেটিং করে পুরো পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে। এভাবে মার্কেটিং করে ইনকাম সম্ভব হয় না।
ফেসবুকের মাধ্যমে ই-কমার্স (এফ কমার্স) ব্যবসা করার বিস্তারিত টিপস: ফেসবুকে সারা দিন বিনা কারণে আমরা প্রচুর সময় নষ্ট করি। কিন্তু ফেসবুকে ব্যয় করা এ সময়টুকু ব্যয় করে ঘরে বসেই অনেক বড় ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব। ঘরে বসেই সম্ভব প্রচুর আয় করা।
ইতিমধ্যে আমার কয়েকজন নারী স্টডেন্ট সেই অনুযায়ী কাজ করে সফল হয়েছে। আপনাদের জন্য বিস্তারিত গাইডলাইন তৈরির চেষ্টা করছি, চেকলিস্টের মতো করে লেখার। এফ কমার্স: ফেসবুকের মাধ্যমে যে ব্যবসা তাকে, এফ কমার্স বলে। টাকা খরচ করে ওয়েবসাইট তৈরির প্রয়োজন নেই এক্ষেত্রে। শুধুমাত্র ফেসবুকে একটি পেজ খুলেই ব্যবসা শুরু করা যাবে। ইতিমধ্যে দেশে অনেকেই করছেন এ রকম কিছু।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি আমার চোখে পড়েছে, সেই অনুযায়ী বলতে পারি, এখন পর্যন্ত রাজশাহীর খাঁটি আম, সুন্দরবনের খাঁটি মধু, জামদানি শাড়ি, কক্সবাজার ই-শপ বিভিন্ন গিফট আইটেম, ড্রেস সম্পর্কিত প্রোডাক্ট নিয়ে অনেকে ব্যবসা শুরু করেছেন। এই এফ কমার্স ব্যবসা করার জন্য শুরুতে কম খরচেই শুরু করতে পারবেন।
প্রথম ধাপ (ব্যবসা সম্পর্কিত সঠিক নাম বাছাই করে ফেসবুক পেজ তৈরি): ফেসবুকে ব্যবসা সম্পর্কিত একটি পেজ তৈরি করতে হবে। পেজের নামটি হবে ব্যবসার নাম। লং টাইম ব্যবসা করার টার্গেট করেই নামটা ঠিক করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ (প্রফেশনাল লোগো তৈরি): ব্যবসা সম্পর্কিত একটি সুন্দর লোগো ডিজাইন করে নিতে হবে। প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে লোগোটা ডিজাইন করাবেন। কারণ লোগোটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। তৃতীয় ধাপ (পেজের জন্য ব্যবসা সম্পর্কিত কভার ছবি তৈরি): সুন্দর এবং অবশ্যই প্রফেশনাল একটি ফেসবুক কভার ডিজাইন করিয়ে নিন।
চতুর্থ ধাপ (পেজে About সেকশনে ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্য যুক্ত করা): ফেসবুক পেজটির About পেজটিতে ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্যগুলো ভালোভাবে পূরণ করুন। উদাহরণ- https://www.facebook.com/JamdaniVille/ এ পেজের About পেজটি দেখতে পারেন। সেখান থেকে আইডিয়া নিয়ে ভালো কিছু লিখতে পারেন।
পঞ্চম ধাপ (পেজে প্রাথমিকভাবে মেম্বার যুক্ত করা): পেজটি প্রস্তুত। ওপরের ৪টি ধাপের প্রস্তুতির জন্য সময় ২ দিনের বেশি ব্যয় করা মোটেই উচিত হবে না। তাহলে শুরুতেই আপনার পদক্ষেপ ভুল হবে। পঞ্চম ধাপটিতে, পেজের মেম্বার বাড়ানো শুরু করতে হবে। সবার প্রথমে নিজের ফ্রেন্ড লিস্টের সবাইকে, নিজের কাছের কোনো বন্ধুকে অনুরোধ করে, তার ফ্রেন্ডলিস্টের সবাইকে এ পেজে যুক্ত করে নেয়ার জন্য ইনভাইট করুন। এ পদ্ধতিতেই চেষ্টা করুন পেজে ১০০০টা লাইক যুক্ত করার।
ষষ্ঠ ধাপ (পেজে অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি): এ ধাপটিতে এসেই অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি শুরু করতে হবে। অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি শুরু করলে, পেজ মেম্বারও নিয়মিত বৃদ্ধি পাবে।
কেন অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি করতে হবে? মার্কেটপ্লেসের বাইরে গিয়ে অনলাইনে এসব ব্যবসার ক্ষেত্রে, যে ক্রেতা, তার কাছে আপনি (ব্যবসার মালিক) একদম অপরিচিত এবং অবিশ্বস্ত। সুতরাং, ক্রেতা কখনও প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগে আপনাকে পেমেন্ট করতে সাহস পাবে না। আবার আপনি নিজেও পেমেন্ট পাওয়ার আগে অপরিচিত একজনকে প্রোডাক্ট দিতে রিস্ক নিবেন না।
যদি ক্রেতা আপনার পরিচিত হতো, তাহলে ক্রেতা আপনাকে বিশ্বাস করত,সেক্ষেত্রে প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগেই পেমেন্ট দিতে তার আপত্তি থাকত না। তেমনি আপনি নিজেও পেমেন্ট বাকি রেখে তাকে প্রোডাক্ট দিতে হয়তো আপত্তি করবেন না।
তাহলে দেখা গেল, পরিচিত হওয়াটাই আসল। অনলাইনের মাধ্যমেই এখন মানুষের বন্ধুত্ব তৈরি হয়। আর এ বন্ধুত্ব তৈরির জন্যই অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। আর অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি হলেই বিশ্বাস এবং আস্থা তৈরি হবে। তখনই ক্রেতা প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগেই পেমেন্ট দিতে আপত্তি করবে না।
লেখক: মো. ইকরাম, পরিচালক, নেক্সাস আইটি।
তথ্যসূত্র: যুগান্তর।