ফেসবুক কনটেন্ট তৈরি এবং মনিটাইজেশনের মাধ্যমে অনেকেই সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। কন্টেন্টের মধ্যে বিশেষ করে ভিডিও বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মতো ফেসবুক কন্টেন্টের মাধ্যমে এখন বেশ মোটা অংকের টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে।
এ ছাড়া ফেসবুক গত কয়েক বছর ধরে কনটেন্ট নির্মাতাদের পরিচর্যার পেছনে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে।
এই পথে সাফল্যের জন্য, আপনাকে আগে ঠিক করতে হবে আপনি কী ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করবেন। তারপর সৃজনশীলতা এবং কৌশলের মাধ্যমে লাগাতার কনটেন্ট তৈরি এ ক্ষেত্রে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তবে এর জন্য আপনাকে ফেসবুকের অ্যালগরিদম, মনিটাইজেশনের নিয়ম-নীতি, দর্শকের চাহিদা, কনটেন্ট বিশ্লেষণের মতো বিভিন্ন বিষয়গুলো বুঝতে হবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, ফেসবুকে কনটেন্ট নির্মাণে সাফল্যের জন্য মেটার ৫টি পরামর্শ সম্পর্কে।
এ ক্ষেত্রে আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হচ্ছে ফেসবুকের ক্রিয়েটর স্টুডিওর ইনসাইটস টুলটি। আপনি এখান থেকে আপনার কনটেন্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেখতে পারবেন।
কন্টেন্টের ক্লিক-থ্রু রেট, এনগেজমেন্ট, আপনার নিয়মিত দর্শক কতজন, কোন বয়সের বা কোন এলাকার মানুষ বেশি দেখছে, কারা ১ মিনিটের বেশি দেখছে, এরকম সূক্ষ্ম বিষয়গুলোও আপনি এখান থেকে দেখতে পারবেন। এগুলোর সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনি আপনার কন্টেন্টের পারফরম্যান্স সম্পর্কে সামগ্রিক একটি ধারণা পাবেন। কন্টেন্টে কী কী বিষয় রাখলে এবং কোন কনটেন্টগুলো মানুষ বেশি দেখছে তা এখান থেকে আপনি বুঝতে পারবেন। যা আপনাকে সেই অনুযায়ী কন্টেন্টগুলো সাজাতে সাহায্য করবে।
আপনার কন্টেন্টের দর্শক কারা তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার দর্শক কোন কোন কনটেন্টগুলো দেখবে কিংবা আপনি আসলে কাদের জন্যে কনটেন্ট তৈরি করবেন তা যদি না জানেন তাহলে একটি শক্তিশালী ফলোয়ার বেস তৈরি করতে পারবেন না।
তাই প্রথমে বিস্তৃত বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করুন। যে বিষয়গুলো আপনার দর্শকদের আগ্রহ তৈরি করে, তাদের কাছে পরিচিত এবং তাদের জীবনের সঙ্গে যায় সেগুলোর দিকে মনোযোগ দিন। যেমন ধরুন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আপনি যদি খাবার সম্পর্কিত কনটেন্ট তৈরি করেন তাহলে খাবার নিয়েই বিস্তৃত পরিসরের কনটেন্ট তৈরি করুন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশিদের ঘরে থাকা প্রতিদিনের বিভিন্ন সাধারণ পণ্য দিয়ে মজার মজার রেসিপি ভিডিও; রান্নাঘরের সরঞ্জাম সম্পর্কিত বিভিন্ন হ্যাকস কিংবা থালাবাসন পরিষ্কারের নতুন কোনো কার্যকরি কৌশল; ঢাকার সবচেয়ে দামি বার্গারের সঙ্গে সবচেয়ে সস্তা বার্গারের তুলনা; অর্থাৎ শুধু খাবারের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় নিয়েই আপনি বিস্তৃত ধরনের কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন।
তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, কনটেন্টগুলো যেন আপনার দর্শক তার জীবনের সঙ্গে সংযোগ করতে পারে। ধরা যাক আপনার বেশিরভাগ দর্শক বাংলাদেশি। তাদের জন্য অবশ্যই আপনি ব্রাজিলের মানুষের সঙ্গে যায় এরকম কনটেন্ট তৈরি করে সাফল্য পাবেন না। তাই আগে আপনার দর্শকদের চিনুন, তারা অধিকাংশ কোন জায়গার এবং কোন বিষয়ে আগ্রহী সে সম্পর্কে জানুন।
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, ফেসবুকের ক্রিয়েটর স্টুডিও আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। ক্রিয়েটর স্টুডিও আপনাকে নানাভাবে সঠিক দিক নির্দেশনা দেবে। আপনার কী করা উচিত, কোনদিকে যাওয়া উচিত সেগুলো আপনি এখান থেকেই বুঝতে পারবেন। ধরুন, কতজন আপনার ভিডিও ৫ সেকেন্ড দেখার পর ভিডিওটি ১ মিনিট পর্যন্ত দেখেছেন। এরকম সূক্ষ্ম বিষয়ও আপনি এর মাধ্যমে দেখতে পারবেন। যা থেকে আপনি বুঝবেন, আপনার ভিডিওর জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য আপনাকে সেই প্রথম ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই দর্শকের আগ্রহ ধরতে হবে। এ ছাড়া এতে আরও বিস্তৃত ধরনের অপশন রয়েছে। যেগুলো আপনাকে কৌশলগতভাবে নানারকম পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত কনটেন্ট পোস্ট করুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্রতিদিনই পোস্ট করতে পারেন। আপনার ফলোয়ারদের ধরে রাখার জন্য এবং ফেসবুক অ্যালগরিদমে আপনার কন্টেন্টের ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধির জন্যেও নিয়মিত পোস্ট করা উচিত। পাশাপাশি ফেসবুক রিল ব্যবহার করুন। রিলের কনটেন্টগুলো সাধারণত পেজে অনেক নতুন দর্শক নিয়ে আসে। যা আপনার ফলোয়ার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে, সাধারণ ভিডিওর তুলনায় ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে আপনি আরও বেশি আয় করতে পারেন। তাই নিয়মিত লাইভের ব্যবস্থাও রাখুন।
ধৈর্য রাখুন
এই পথে সফল হওয়ার জন্যে বেশ সময় লাগে। আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, এই ক্ষেত্রে সফলতা রাতারাতি আসবে না। এর জন্য কয়েক মাস এমনকি বছর লেগে যাওয়াও খুবই স্বাভাবিক। তবে সঠিকভাবে, আপনার সৃজনশীলতা ব্যবহার করে কৌশলগত উপায়ে নিয়মিত লেগে থাকলে সাফল্য অবশ্যই আসবে। তাই ক্রিয়েটর স্টুডিও ব্যবহার করুন, আপনার ভুলগুলো থেকে শিখুন, আপনার কনটেন্টগুলো ক্রমাগত উন্নত করুন এবং আপনার আগে যারা সফল হয়েছেন তাদের থেকে শিখতে থাকুন।
ফেসবুকে একজন কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে আপনার রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বিশেষ করে ফেসবুক রিলস আপনার কনটেন্ট আরও বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার একটি দুর্দান্ত উপায় হয়ে উঠেছে। কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য ফেসবুক ভবিষ্যতে আরও কী কী সুবিধা নিয়ে আসে তা এখন দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: মেটা