শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ন
Uncategorized

ফের ডানা মেলতে চায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

টানা সাড়ে পাঁচ বছর অপারেশন বন্ধ থাকার পর আবারও বাংলাদেশের আকাশে ডানা মেলতে চায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। এ বিষয়ে সম্প্রতি তারা বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বেবিচকের পাওনা অর্থের মোটা একটি অংশ ‘মওকুফ’ চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বেবিচককে ফ্লাইট চালুর অনুমতির বিষয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

বেবিচক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে বেবিচকসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের দেনা-পাওনার হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা উড়োজাহাজগুলো মেরামত করে তা দিয়েই ফ্লাইট চালুর কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

তবে, সর্বশেষ ২২ আগস্ট পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ওই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে ২৬০ কোটির বেশি টাকা পাওনা রয়েছে বেবিচকের। পাওনা পরিশোধ করে আদৌ কি ফ্লাইট পরিচালনা করতে সক্ষম ইউনাইটেড— জানতে চাইলে সংস্থাটির নবগঠিত পরিচালনাপর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বেবিচকের কাছে আমাদের প্রকৃত দেনা ৫৬ কোটি টাকার মতো। বাকি টাকাগুলো (প্রায় ২০০ কোটি) সারচার্জ। সারচার্জকে দেনা বলা যায় না। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে অর্থায়নের জন্য আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা অর্থায়নে রাজি হয়েছে। এখন আমরা বেবিচকের সঙ্গে আলোচনার অপেক্ষায় আছি।’

dhaka post
বেবিচক বলছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে তাদের  পাওনা প্রায় ২৬০ কোটি টাকা / ফাইল ছবি

‘ইউনাইটেডের যে দায়-দেনা, একটি এয়ারলাইন্সের জন্য এটি তেমন কোনো ব্যাপার নয়। আমাদের (ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ) কাছে ব্যাংক তেমন কোনো টাকা পায় না। তবে, বেবিচক ও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কিছু টাকা পায়। সবমিলে একটি ওয়ার্কিং প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। আমরা দেনাগুলো ক্লাসিফাইড করে পরিশোধের উদ্যোগ নেব।’

বেবিচকের কাছে আমাদের প্রকৃত দেনা ৫৬ কোটি টাকার মতো। বাকি টাকাগুলো (প্রায় ২০০ কোটি) সারচার্জ। সারচার্জকে দেনা বলা যায় না। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে অর্থায়নের জন্য আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা অর্থায়নে রাজি হয়েছেইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নবগঠিত পরিচালনাপর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম

কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, আমাদের বর্তমান যে অবস্থা, সেখান থেকে ফ্লাইট অপারেশনে আসা সহজ নয়। তবে, অসম্ভবও নয়। এখন আমরা বিজনেস মডেলটা চিন্তা করছি। কীভাবে এবং কী করলে আমরা লাভজনক হতে পারব— এজন্য বেবিচকের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করব।

দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর বন্ধ থাকা ইউনাইটেডের ভাগ্যে কী আছে— জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। এ অবস্থায় আদৌ তারা অপারেশন পরিচালনা করতে পারে কি না। তাদের অনেক বকেয়া আছে, উড়োজাহাজগুলোও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তারপরও তারা ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে।’

‘সমস্যা হচ্ছে, ইউনাইটেডের উড়োজাহাজগুলো সব নষ্ট। সেগুলো আমরা নিলামে তুলতে চেয়েছিলাম। তারা বলছে, নিলাম না করে সেগুলো মেরামত করা যায় কি না। আমরা আপাতত নিলাম করছি না। তারা উড়োজাহাজগুলো মেরামত করতে চায়। কিন্তু, সেগুলো যাত্রীদের জন্য কতটুকু নিরাপদ হবে, এ বিষয়ও বিবেচনা করা হচ্ছে।’

উড়োজাহাজগুলোর ৫০ শতাংশ যন্ত্রাংশ ‘ভালো’, দাবি ইউনাইটেডের

ব্যাংক ঋণ ও পাওনা পরিশোধ না করায় বেসরকারি চারটি এয়ারলাইন্সের ১২টি উড়োজাহাজ বাজেয়াপ্তের ঘোষণা দিয়ে সেগুলো নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় বেবিচক। ১২টির মধ্যে আটটি উড়োজাহাজ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ছিল। নিলামের সংবাদ শুনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ‘দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’ উল্লেখ করে বেবিচককে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর সেই নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।

dhaka post
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নতুন পরিচালনাপর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম / ফাইল ছবি

নিলাম বন্ধের বিষয়ে ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে বেবিচককে বলা হয়, দীর্ঘদিন উড়াল না দিলেও ইউনাইটেডের উড়োজাহাজগুলোর ৫০ শতাংশ যন্ত্রাংশ এখনও ভালো আছে। এগুলো নিলামে তুললে বেবিচকের বকেয়া উঠে আসবে না। উল্টো উড়োজাহাজগুলো নষ্ট হবে। তাই আমরা বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সবগুলো উড়োজাহাজ অডিট করে দেখব কোনটার কতটুকু মেরামত দরকার। এরপর সেগুলো আকাশে উড়তে পারবে— এমন দাবি করা হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

বেবিচকের কাছে লেখা চিঠিতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ আরও জানায়, দেনার বিষয়ে আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য সমাধানের একটি পথ খুঁজে বের করবে তারা।

ইউনাইটেডকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে চায় নতুন পর্ষদ

২০১৬ সালে ফ্লাইট অপারেশন বন্ধের পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডের বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন অপারেশন বন্ধ রাখা, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়া এবং নানা অনিয়মের কারণে চলতি বছরের (২০২১ সাল) জানুয়ারি মাসে পুঁজিবাজার থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তালিকাচ্যুত করা হয়। পাঠিয়ে দেওয়া হয় ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে।

গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনাপর্ষদ ভেঙে স্বতন্ত্র সাত পরিচালক বসায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই সাতজনের মধ্যে এভিয়েশন ও ভ্রমণবিষয়ক সাময়িকী ‘বাংলাদেশ মনিটর’ সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলমকে পরিচালনাপর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়।

dhaka post
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান / ফাইল ছবি

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিএসইসির সঙ্গে কোনো আলোচনা করবেন কি না— জানতে চাইলে কাজী ওয়াহিদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা এখনই চাই না যে ইউনাইটেড মূল পুঁজিবাজারে আসুক। এখন আসলে কিছু মানুষ ফায়দা লুটে চলে যাবে। কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা প্রথমে ইউনাইটেডকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে চাই। এরপর বিএসইসির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব।’

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের পক্ষে কাজ করতেই আমাদের এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন পর্ষদের কারও এক টাকারও শেয়ার নেই এ প্রতিষ্ঠানে। আমাদের বসানোর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, শেয়ারহোল্ডারদের টাকা যাতে নিরাপদ থাকে। তাদের মূলধন যেন ঠিক থাকে। আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি।’

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ২০০৭ সাল থেকে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। সংস্থাটি অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও ঈশ্বরদী এবং দেশের বাইরে জেদ্দা, মাস্কাট, দোহা, কুয়ালালামপুর, কাঠমান্ডু, ব্যাংকক ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট চালায়।

dhaka post
শাহজালাল বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজগুলো / ফাইল ছবি

২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পরিচালন ব্যয় জোগান দিতে না পারায় ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দেয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। দুদিন পর আবারও তারা ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, ২০১৬ সালে একসঙ্গে কয়েকটি উড়োজাহাজে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তারা ফ্লাইট অপারেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকে আর চালু হয়নি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।

বন্ধ হওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের বহরে থাকা ১০টি উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। ওই সময় তাদের হাতে তেমন টাকাও ছিল না। দুই সপ্তাহ পর ফিরে আশার কথা বললেও গত পাঁচ বছরেও ফিরতে পারেনি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।

dhaka post
দুই সপ্তাহ পর ফিরে আশার কথা বললেও গত পাঁচ বছরে আর ফিরতে পারেনি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ / ফাইল ছবি

এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জায়গা দখল করে আছে প্রতিষ্ঠানটি আটটি উড়োজাহাজ। সবমিলে তাদের কাছে বেবিচকের পাওনা প্রায় ২৬০ কোটি টাকা। কয়েক বছর ধরে পাওনা আদায়ের চিঠি দিলেও কোনো টাকা পায়নি বেবিচক।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com