ফিলিপাইন ৭,১০৭টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম ম্যানিলা। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সব জায়গা থেকেই প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক আসে ফিলিপাইনের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে। ফিলিপাইন ভ্রমণ করার জন্য আপনি ৩ মাসের সিঙ্গেল এন্ট্রি অথবা ৬ মাস থেকে ১ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে কিভাবে ফিলিপাইন টুরিস্ট ভিসাকরাবেন সেই ভিসা প্রক্রিয়া নিয়েই আজকের এই আলোচনা।
আগেই বলে রাখা ভালো যে ফিলিপাইন ভিসা করাতে হলে আপনাকে কোন এজেন্সির সহায়তা নিতে হবে কারন ফিলিপাইন সরাসরি ভিসা এপ্লিকেন্টের কাছ থেকে ভিসা ফাইল সংগ্রহ করে না, ফিলিপাইন এম্বাসি কর্তৃক অনুমদিত ট্রাভেল এজেন্টই কেবল পারে আপনার ফাইলটি জমা দিতে।
অনুমদিত ট্রাভেল এজেন্ট এর লিস্ট নীচে দেয়া আছে
ট্রাভেল এজেন্টের কাছে যে কাগজপত্র জমা দিতে হবে সেগুলো আপনাকেই তৈরি করতে হবে তাই কাগজ পত্র সব ঠিকভাবে তৈরি করতে হলে নীচে দেয়া ভিসা ডকুমেন্ট লিস্টটি ভালোভাবে পড়ে সঠিকভাবে তৈরি করুন।
আপনাকে নির্ভুল তথ্য দিয়ে ভিসা এপ্লিকেশন ফর্মটি পুরন করতে হবে এবং ফর্মে নির্ধারিত স্থানে পাসপোর্ট অনুযায়ী সাক্ষর করতে হবে।
নূন্যতম ৬ মাস মেয়েদ সম্পন্ন একটি পাসপোর্ট থাকতে হবে।
অনেক সময় দেখা যায় আপনি যেদিন ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন ঠিক সেদিন থেকে পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে ফলে ভিসা পেতে পেতে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে কমে যায়, এমন হলে অনেক সময় এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন সমস্যা করে। সে ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে কিছুদিন বেশি থাকলে খুবই ভালো হয় যেন ভিসা পাওয়ার পরও পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে।
পাসপোর্টে অবশ্যই অন্তত দুটি পাতা ফাঁকা থাকতে হবে যাতে করে ভিসা স্টিকার এবং ইমিগ্রেশন ষ্ট্যাম্প ওই পাতাতে দেয়া যায়। সেই সাথে সকল পুরাতন পাসপোর্টও জমা দিতে হবে।
২ কপি ল্যাব প্রিন্ট ছবি (সাইজ হবে ২ ইঞ্চি X ২ ইঞ্চি) লাগবে।
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হবে সাদা। অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড, ছবির সঠিক মাপ এবং ৩ মাসের আগে তোলা ছবি গ্রহনযোগ্য হবে না। আর সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ছবির পিছনে আপনার সাক্ষর করে দিতে পারেন।
ফিলিপাইন টুরিস্ট ভিসা পেতে হলে আপনার প্রফেশনের একটি প্রমানপত্র দিতে হবে। সেক্ষেত্রে
আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার এন ও সি (নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট), ও ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
এন ও সি (নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট) অবশ্যই অফিসের প্যাডে অফিস কর্তৃপক্ষের সত্যায়িত করা থাকতে হবে এবং আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার এন ও সি তে উল্লেখ করা থাকতে হবে। নো অব্জেকশন সার্টিফিকেটের স্যাম্পল কপি এখান থেকে দেখে নিতে পারবেন।
আপনি যদি ব্যবসায়িক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার নাম স্পষ্ট অক্ষরে আছে এমন ট্রেড লাইসেন্সের কপি এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
প্রপ্রাইটরশিপ বিজনেস হলে ট্রেড লাইসেন্স, লিমিটেড কম্পানি হলে ট্রেড লাইসেন্সের সাথে মেমরেন্ডাম কপি জমা দিতে হবে যেখানে আপনার নাম স্পষ্ট করে লেখা আছে।
আপনি যদি ডাক্তার হয়ে থাকেন তাহলে বি এম ডি সি (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) সার্টিফিকেট অথবা আপনার হাসপাতালের প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
আপনি যদি আইনজীবী হয়ে থাকেন তাহলে বার কাউন্সিল সার্টিফিকেট অথবা আপনার চেম্বারের প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট (আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার সহ) এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনার স্কুল / কলেজ / ইউনিভার্সিটির প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট (আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার সহ) অথবা বৈধ আই ডি কার্ডের কপি দিতে হবে।
বি দ্রঃ উপরের কোন ডকুমেন্ট বাংলায় দেয়া যাবে না যদি বাংলায় থাকে তাহলে ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোটারি করে জমা দিতে হবে।
ভ্রমণের সক্ষমতা প্রমানের জন্য আপনাকেব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সল্ভেন্সি সার্টিফিকেটের মূল কপি জমা দিতে হবে।
ব্যাংক স্টেটমেন্টটি হতে হবে বিগত ৬ মাসের লেনদেনের উপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট পারসনাল অথবা স্যালারি একাউন্ট ও হতে পারে।
আপনি একা ট্রাভেল করলে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে অবশ্যই ন্যূনতম ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অবশিষ্ট থাকতে হবে। আর যদি আপনি ফ্যামিলি নিয়ে ট্রাভেল করেন তাহলে প্রতিজনের জন্য ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকা করে স্টেটমেন্টে অবশিষ্ট থাকতে হবে।
আমরা জানি যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের মেয়াদ ৬ মাস থাকে কিন্তু ফিলিপাইন ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার প্রথম মাসের মধ্যেই ভিসা আবেদন করে ফেলতে হবে তাছাড়া আপনার ভিসা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। আর ১৭ বছরের নীচে কারো জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন হবে না।
আপনার ব্যাংকর এক কপি ব্লাঙ্ক চ্যাক জমা দিতে হবে ফিলিপাইন টুরিস্ট ভিসা আবেদনের সাথে।
ফিলিপাইনে আপনি কোথায় কোন হোটেলে থাকবেন তার একটি বুকিং কপি আপনার ভিসা আবেদনের সাথে দিতে হবে। শুধু বুকিং কপি হলেই হবে কনফার্ম করার প্রয়োজন নেই। যদি আপনার ভিসা হয়ে যায় কেবল তখনি আপনি বুকিং কনফার্ম করতে পারেন। হোটেল বুকিং আপনি নিজে নিজে করতে পারেন অথবা কোন ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতাও নিতে পারেন।
ঢাকা ফিলিপাইন ঢাকা রিটার্ন এয়ার টিকেটের বুকিং কপি আপনার ভিসা আবেদনের সাথে দিতে হবে। ভিসা হয়ে যাবার পর টিকিটটি কনফার্ম করে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রেও আপনি ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতা নিতে পারেন।
ভিসা ফি | ভিসার মেয়াদ | কতদিন থাকা যাবে |
৪,২০০ টাকা সিঙ্গেল এন্ট্রি | ৩ মাস | ৬০ দিন |
১৩,০০০ টাকা মাল্টিপল এন্ট্রি | ৬ মাস | ৬০ দিন |
ভিসা ফির সাথে ট্রাভেল এজেন্সির সার্ভিস চার্জ যোগ করতে হবে।
বি দ্রঃ ভিসা প্রসেসের জন্য প্রদত্ত যেকোনো ডকুমেন্টস ভূয়া অথবা জাল প্রমাণিত হলে, আপনার ভিসার আবেদনটি নিশ্চিতভাবে প্রত্যাখ্যান হবে, এমনকি আপনি উক্ত এম্বাসির কালো তালিকাভুক্ত হতে পারেন। এবং ইহা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। সুতরাং, এধরনের অভিপ্রায় থেকে বিরত থাকুন।
উপরের সব কাগজপত্র ঠিকভাবে তৈরি করার পর আপনার ডকুমেন্টস, ভিসা ফি এবং সার্ভিস চার্জ আপনার ট্রাভেল এজেন্টের কাছে জমা দিবেন। এম্বাসিতে আপনার ফাইলটি জমা হওয়ার ৭ থেকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আপনি আপনার পাসপোর্ট হাতে পাবেন।
কোন কারনে যদি ভিসা না হয় তাহলে আপনার প্রদানকৃত টাকা ফেরতযোগ্য নয়। তাই দেখে শুনে বুঝে ট্রাভেল এজেন্ট নির্বাচন করুন।