ফিনল্যান্ডকে বলা হয় হাজার হ্রদের দেশ। ইউরোপের অন্যতম উন্নত এবং সমৃদ্ধ দশ এটি। এখানে রয়েছে কর্মসংস্থান এবং পড়াশোনার সুযোগ।
ফিনল্যান্ড; ইউরোপের অন্যতম উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশ, যা উচ্চ জীবনমান, আকর্ষণীয় কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। এটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মধ্যে একটি যেখানে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, ইঞ্জিনিয়ারিং, হসপিটালিটি এবং বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর চাকরির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অনেকে ইউরোপে যেতে চান কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ জার্মানি, সুইডেন বা নেদারল্যান্ডসের কথা ভাবেন—ফিনল্যান্ড নয়। অথচ এই দেশটিতেও রয়েছে অসাধারণ ক্যারিয়ার ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ।
কেন ফিনল্যান্ড এত জনপ্রিয়?

উন্নত জীবনযাত্রা – বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ দেশ।

উচ্চ বেতন – গড়ে মাসিক বেতন €২২০০ – €৩০০০ (বাংলাদেশি টাকায় ৩ – ৫ লাখ)।

কর্মসংস্থানের সুযোগ – দক্ষ জনবলের প্রচুর চাহিদা, বিশেষ করে IT, ইঞ্জিনিয়ারিং, স্বাস্থ্যসেবা ও রেস্টুরেন্ট সেক্টরে।

ইংরেজির প্রচলন – সরকারি ভাষা ফিনিশ হলেও কর্মক্ষেত্রে ইংরেজির ব্যবহার জনপ্রিয়। দীর্ঘমেয়াদে ফিনিশ ভাষা শেখা ক্যারিয়ারে ব্যাপক সুবিধা দেয়।

ফ্রি ও কম খরচে উচ্চশিক্ষা – ফিনল্যান্ডে পড়াশোনার পর সহজেই ওয়ার্ক পারমিট ও PR পাওয়ার সুযোগ।
বাংলাদেশিদের জন্য ফিনল্যান্ডে কী সুযোগ রয়েছে?
১. চাকরির সুযোগ
ফিনল্যান্ডে IT, ইঞ্জিনিয়ারিং, হসপিটালিটি, স্বাস্থ্যসেবা, কনস্ট্রাকশন ও ডেলিভারি সেক্টরে প্রচুর চাকরির সুযোগ রয়েছে।

IT ও প্রযুক্তি: সফটওয়্যার ডেভেলপার, ডাটা সায়েন্টিস্ট, ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ার

স্বাস্থ্যসেবা: নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট

ইঞ্জিনিয়ারিং: ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার

হসপিটালিটি: হোটেল ম্যানেজার, শেফ, ওয়েটার

ডেলিভারি ও লজিস্টিকস: ফুড ডেলিভারি, ট্রাক ড্রাইভার, ওয়্যারহাউস অপারেটর

কনস্ট্রাকশন ও কারিগরি কাজ: ওয়েল্ডার, ইলেকট্রিশিয়ান, মেশিন অপারেটর

মজুরি কেমন?

ন্যূনতম বেতন: €১৮০০- ২,৫০০ (প্রায় ৩ লাখ টাকা)

দক্ষ কর্মীদের বেতন: €২৮০০ – €৪২০০ (প্রায় ৪.৫ – ৬ লাখ টাকা)
২. উচ্চশিক্ষার সুযোগ
ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা ইউরোপের অন্যতম সেরা এবং এখানে ফ্রি বা কম খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।

টিউশন ফি: €৬,০০০ – €১৫,০০০ (বাংলাদেশি টাকায় ৮ – ২০ লাখ)

স্কলারশিপ: ফিনিশ সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন স্কলারশিপ রয়েছে

স্টুডেন্ট পার্ট-টাইম জব: সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি রয়েছে
৩. স্থায়ী বসবাসের সুযোগ (PR & Citizenship)
কীভাবে ফিনল্যান্ডে PR পাওয়া যায়?

৪ বছর বৈধভাবে কাজ করলে PR-এর জন্য আবেদন করা যায়।

PR থাকলে পরিবারের সদস্যদেরও নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে।

৫ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়।
কীভাবে ফিনল্যান্ডে যাওয়া যায়?

১. স্টুডেন্ট ভিসা
যারা পড়াশোনার মাধ্যমে ইউরোপ যেতে চান তাদের জন্য এটি সেরা উপায়। পড়াশোনা শেষে সহজেই চাকরি ও ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়।

২. ওয়ার্ক ভিসা
যদি ইউরোপের কোনো কোম্পানি থেকে চাকরির অফার থাকে, তাহলে Finnish Work Permit বা EU Blue Card নিয়ে ফিনল্যান্ড যেতে পারেন।

৩. জব সিকার ভিসা
পড়াশোনা শেষে ১ বছরের Job Seeking Permit নেওয়া যায়।

৪. ট্র্যাভেল বা বিজনেস ভিসা
যারা ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে ফিনল্যান্ডে আসতে চান, তারা শেনজেন ভিসা নিতে পারেন।
ফিনল্যান্ডে কীভাবে চাকরি খুঁজবেন?

শীর্ষ জব পোর্টাল:

সরাসরি কোম্পানির ওয়েবসাইটে আবেদন করুন।
যারা ইউরোপে ভালো ক্যারিয়ার ও বসবাসের সুযোগ খুঁজছেন তাদের জন্য ফিনল্যান্ড হতে পারে একটি দারুণ গন্তব্য। এখানে উচ্চ বেতন, উন্নত জীবনযাত্রা ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ রয়েছে।
একটা সময় এই রকম অবস্থা থাকলেও ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। বর্তমান বাস্তবতা:
* ফিনল্যান্ডে বর্তমানে বেকারত্বের হার ৯%।
* রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ফিনল্যান্ডের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধাক্কা লাগে।
* ফিনল্যান্ডে ১ লক্ষাধিক ইউক্রেনীয় অভিবাসী আছেন, যার ফলে অন্যান্য অভিবাসীদের জন্য চাকরির সুযোগ কমে গেছে।
* ফিনিশ ভাষা জানা না হলে ফিনল্যান্ডে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
* পরামর্শকরা ফিনল্যান্ডে চাকরি বাজার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে আসার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন।
* ইউরোপ ইউক্রেনীয়দের চাকরি দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার ফলে অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরির সুযোগ কমে যাচ্ছে।