আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সমুদ্রের নীলাভ জলরাশির পাশে বিস্তীর্ণ সৈকতে গা এলিয়ে দিতে ভালোবাসেন, আবার কেউবা পছন্দ করেন পাহাড় আর অ্যাডভেঞ্চার। ছুটিতে ভ্রমণে ঘুরতে যেতে চাইলে আমাদের কাছে এ যুগে বিকল্পের কোনো শেষ নেই।
তবে জানেন কি, অবকাশে আমাদের ঘোরাঘুরির যে প্রবণতা তা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চর্চা করে আসছেন। কাজের ফুরসতে বিশ্রামের জন্য তারা ভ্রমণের জন্য বেছে নিতেন একেক গন্তব্য।
প্রাচীন মিশরে এর প্রমাণ মিলেছে। মিশরের অভিজাত শ্রেণী, যেমন ফারাও এবং রয়্যাল কোর্টের সদস্যরা নীল নদের বদ্বীপ অঞ্চল ঘেঁষা স্থানগুলোতে ছুটি কাটাতে যেতেন। এ সময় গরমের মৌসুমের তীব্র উত্তাপ এবং শহুরে ব্যস্ততা থেকে তারা দূরে থাকতেন। মাছ ধরে, নৌকায় চড়ে ও সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সময় কাটাতেন তারা। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা বিশালাকৃতির ভ্যাকেশন ভিলার খোঁজ পেয়েছেন, যেখানে মিশরের এলিট বা অভিজাত শ্রেণির মানুষেরা ছুটিতে একত্রিত হতেন।
নথি অনুযায়ী, প্রাচীন রোমের বাসিন্দারাও ভ্রমণে খুব উৎসাহী ছিলেন। সম্পদশালীরা ছুটিতে বিলাসবহুল রিসোর্ট টাউনগুলোতে সময় কাটাতে যেতেন। এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে পম্পেই নগরীর কথা বলা যায়, যেখানে ইতালির প্রত্নতাত্ত্বিকেরা একটি সমৃদ্ধ হোটেলের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে ঘর উষ্ণ রাখার সিস্টেম এবং প্রাইভেট স্পা’র ব্যবস্থা থাকায় একে আধুনিক পাঁচতারকা হোটেলের সঙ্গে তুলনা করেছেন তারা।
ইতালির আরেক শহর নেপলস থেকে ৩০ কি.মি. দূরবর্তী বাইয়া শহরটি ‘রোম সাম্রাজ্যের লাস ভেগাস’ নামে পরিচিত ছিল। বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত রোমান অভিজাতদের কাছে শহরটির খুব পছন্দের ছিল। সপ্তাহান্তে জৌলুসে ঘেরা বাইয়া শহরে সময় কাটাতে ভিড় করতেন ক্ষমতাশালী আর বিত্তবান রোমানরা।
রোমের পর্যটকদের ঘোরাফেরা শুধু ইতালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। মিশরের গিজার পিরামিড, আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর, এমনকি আলেকজান্ডারের সমাধিতেও তাদের পরিদর্শনের প্রমাণ মিলেছে। কেউ কেউ এসব স্মৃতিস্তম্ভে নিজেদের অস্তিত্বের জানানও দিয়ে এসেছেন। যেমন, পিরামিড পরিদর্শন শেষে এক রোমান খোদাই করে লিখে এসেছেন, ‘আমি এখানে ঘুরেছি এবং সারকোফ্যাগাস (পাথরের কফিন) ব্যতীত আর কিছুই আমার ভালো লাগেনি।’
ভ্রমণের জন্য প্রাচীন আমলে রোমানদের আরেকটি প্রিয় গন্তব্য ছিল ইংল্যান্ডের বাথ শহর। সেখানকার অত্যাশ্চর্য ল্যান্ডস্কেপ ও জলাশয় অভিজাতদের আকৃষ্ট করত। এদের অনেকের সমাধিও মিলেছে বাথে।
তথ্যসূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া