নেপালের নাম শুনলেই মানসপটে ভেসে ওঠে মাউন্ট এভারেস্ট, অন্নপূর্ণা মাউন্টেন রেঞ্জ কিংবা প্রাচীন শহর কাঠমান্ডুর কথা। প্রাচীন মন্দির, হিমালয়ের চূড়া এবং প্রাণবন্ত সংস্কৃতির মিলনমেলায় অংশ নিতে সারা বিশ্বের অসংখ্য ভ্রমণকারীদের ভ্রমণে আহ্বান করে নেপাল। ভারত এবং চীনের মধ্যে অবস্থিত এ আকর্ষণীয় দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধ্যাত্মিক তাৎপর্য এবং দুঃসাহসিক সব অভিযানের মনোমুগ্ধকর এক একটি মুহূর্ত রচনা করে যেন।
কাঠমান্ডুর ব্যস্ত রাস্তা থেকে শুরু করে অন্নপূর্ণা এবং এভারেস্ট অঞ্চলের নির্মল ভূদৃশ্য অভাবনীয় অভিজ্ঞতার প্রতিশ্রুতি দেয়। যা আপনাকে বিস্মিত করবে এবং তার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত করবে।
বাংলাদেশ থেকে খুব সহজে ও কম খরচে ভ্রমণ করা যায় যেসব দেশে তাদের মধ্যে নেপাল অন্যতম। স্থলপথে ভারত হয়ে নেপালে যাওয়া গেলেও করোনা সংক্রমণের পর থেকে ট্রাঞ্জিট ভিসা বন্ধ থাকায় আকাশপথই একমাত্র মাধ্যম। আর ভিসা? সেটা কোনো ব্যাপারই নয়। সার্কভুক্ত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য বছরে একবার বিনামূল্যে ৩০ দিনের জন্য অন এরাইভাল ভিসা দিয়ে থাকে নেপাল। আপনি চাইলে বাংলাদেশ থেকে স্টিকার ভিসা নিয়েও নেপাল ভ্রমণ করতে পারেন।
এছাড়া নেপালে ভ্রমণসংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকলে আশা করছি অনলাইনে খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তর।
বিশ্বের প্রাচীনতম শহরের একটি কাঠমান্ডু। ত্রিভুবন অন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার সময় আপনার একটু অন্যরকম অনুভূতি হতেই পারে, কারণ চারদিক পাহাড়ে ঘেরা একটি ভ্যালির মাঝখানে আপেক্ষাকৃত ছোট জায়গা নিয়ে অবস্থিত এ বিমানবন্দর। তবে বাংলাদেশ বিমানের ৭৩৭ বোয়িং বিমানের ল্যান্ডিং ছিল খুবই মসৃণ।
ইমিগ্রেশন শেষ করে মোবাইলের সিম কিনে চাইলে পাঠাও কিংবা উবার ডেকে পেয়ে যাবেন আপনার বাইক কিংবা ট্যাক্সি। সেটা না চাইলে বিমানবন্দর থেকেও ট্যাক্সি নিয়ে চলে যেতে পারেন আপনার হোটেলে।
কাঠমান্ডু শহরের যে কোনো স্থান থেকে ডলার ভাঙিয়ে নিতে পারেন। কারণ বিমানবন্দরে এক্সচেঞ্জ রেট বাইরের থেকে কম। তবে অল্প কিছু ডলার ভাঙিয়ে নিতে পারেন বিমানবন্দরের ভেতর থেকে।
পৃথিবীর যেসব শহরে মানুষ অনেককাল আগে থেকে বসবাস করে আসছে তার মধ্যে কাঠমান্ডু অন্যতম। প্রায় ২ হাজার বছর ধরে মানুষ এ শহরে বসবাস করে আসছে। এ শহরের অলিগলি ঘুরলে তার প্রমাণ মেলে। পুরো শহরটা এক ধরনের খোলা জাদুঘর বললেও ভুল হবে না। খুব অল্প দূরত্বে কাঠমান্ডুর সব দর্শনীয় স্থান। যার ফলে স্বল্প সময়ে সব ট্যুরিস্ট স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন।
কাঠমান্ডু ভ্যালি, ভক্তপুর এবং পাটান-এ তিন জায়গায় রয়েছে প্রাচীন কালের ঐতিহ্যের সাক্ষী দরবার স্কয়ার। দরবার স্কয়ার হচ্ছে রাজাদের দরবার হল বা ক্যাপিটাল সিটি। এসব জায়গায় এলে আপনি চলে যাবেন ঠিক হাজার বছর আগে। এখানকার যেসব প্যাগোডা আর মন্দির আছে তা ইতিহাসের অন্যতম নিদর্শন। ইউনেস্কো এগুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ঘোষণা করেছে।
নেপাল একটি পাহাড়বেষ্টিত দেশ। এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা মূলত সড়ক ও আকাশ পথকেই কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। নেপালের প্রধান প্রধান শহরে রেল সেবা নেই। আকাশপথে প্রায়ই দুর্ঘটনার কারণে সড়কপথই প্রধান ভরসা।
ট্রেকারদের মিলনমেলা পোখারা শহর। বিশ্বের বড় বড় পর্বতগুলোর অধিকাংশই নেপালে অবস্থিত। আর অন্নপূর্ণা মাউন্টেন রেঞ্জ তাদের মধ্যে অন্যতম। এ পর্বতগুলোয় ট্রেকিং করতে হলে পোখারা থেকেই যেতে হয়। তাই বিশ্বের সব দেশ থেকেই পর্বত আরোহীরা ভিড় করে এ শহরে।
এছাড়া পোখারা শহর নিজেই সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কাঠমান্ডুর মতো পোখারার চার পাশে রয়েছে উঁচু উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের পাশঘেঁষে বয়ে চলেছে ফেউয়া লেক। আর রৌদ্রজ্জ্বল বিকালবেলায় লেকের সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। আর এ শহরের নীরবতা, পরিচ্ছন্নতা ও স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা আপনাকে বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইবে এখানে।
পোখারা থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩২১০ মিটার ওপরে অবস্থিত এ অন্নপূর্ণা ভিউ পয়েন্ট। ৩ দিনের এ ট্রেকিংয়ে আপনি পেয়ে যাবেন মনোরম পাহাড়ি পরিবেশ, ছোট ছোট পাহাড়ি গ্রাম, নৈসর্গিক ঝর্ণা, পাহাড়ি নদীর কল কল স্রোতধ্বনী, বৃষ্টি, মেঘ ও রোদের অপূর্ব সব মিলনমেলা।