শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ অপরাহ্ন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ এই বিছানাকান্দি

  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩

লেখাপড়া ও কর্মব্যস্ততা প্রত্যেকের জীবনকেই একঘেয়ে করে তোলে।  শরীর ও মন যেন আর চলতে চায় না। তাই দুটোকেই সুস্থ রাখার জন্য চাই বিনোদন। বিশেষ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে যেতে চায় সবাই। কিন্তু সময় ও সুযোগের অভাবে অনেকেরই সম্ভব হয় না শহরের বাইরে ঘুরতে বা একটু খোলা প্রকৃতিতে বেড়িয়ে আসার। অনাড়ম্বর কর্মজীবনের ব্যস্ত সময়কে পেছনে ফেলে দুই রাত একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এলাকা সিলেটের রাতারগুল জলাবন বা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ও বিছনাকান্দি থেকে।

বিছানাকান্দি

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত জলপাথরের বিছানার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ এই বিছানাকান্দি। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির ঢল ছোট-বড় পাথরের সাথে খেতে খেতে বয়ে চলা অগভীর একটি নদী। ইচ্ছে হবে শত শত পাথরের ওপর দাপাদাপি করতে। না পারলেও শীতল পানিতে আপন মনে গা ভিজিয়ে নিতে পারবেন অনায়াসে। পায়ের নিচে হাঁটু সমান পানিতে ডুবন্ত পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে মেঘালয় পাহাড়ে সবুজের রাজত্ব আপনার চোখে জড়িয়ে থাকা ভ্রমণক্লান্তি মুহূর্তের মধ্যে গায়েব করে দেবে। ওপারে ভারত অংশে উঁচু-নিচু পাহাড়ের সারি যেন সবুজ পোশাকের পড়ে একে অপরের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আপনাকে ঘিরে রেখেছে। তাদের মাঝে আপনি দাঁড়িয়ে। শীত মওসুমে বিছানাকান্দির আসল সৌন্দর্য পাওয়া যায় না। বর্ষা বা বর্ষার শেষ মুহূর্তে এর নৈসর্গিক প্রকৃতি উপভোগ করে আসুন।

রাতারগুল

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলাবন বা ভাসমান বন। পানিসহিষ্ণু বড় গাছপালায় একটা বনের রূপ নিয়ে জলার জঙ্গল পরিণত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বাইরে অন্যান্য জায়গার সোয়াম্প ফরেস্টগুলো সব সময় জলে প্লাবিত না থাকলেও বর্ষায় এই বনের গাছগুলো আংশিক জলে ডুবে থাকে। উত্তরে গোয়াইন নদী, দক্ষিণে বিশাল হাওর, মাঝখানে ‘জলার বন’ রাতারগুল। এই ফরেস্টকে বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির ভাসমান বন হলেও ভুল হবে না। লোনা পানির ভাসমান বন হিসেবে সুন্দরবন উল্লেখযোগ্য। বর্ষাকালে ভারতের পাহাড় বেয়ে ঢল নামার ফলে রাতারগুলের পানির উচ্চতায় কখনো এক অবস্থায় থাকে না। বৃষ্টির পরিমাণের উপরে এর উচ্চতা নির্ভর করে। বৃষ্টিপাত অনুযায়ী রাতারগুলের বনে ১৫ থেকে ২৫ ফুট পর্যন্ত পানি উঠলে অবাক হবেন না।

যা দেখতে পাবেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে

সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে এই জলাবনের অবস্থান। কাঁচের মতো স্বচ্ছ পানি, সেই পানিতে সাপ-ব্যাঙ ও মাছের আনাগোনা, হঠাৎই মাথার ওপর গাছের ডালে জড়িয়ে থাকা শাপ চোখের সামনে দেখে হয়তো আঁতকে ওঠবেন। ডাল পালার আড়ালে একটু সাবধানে থাকাই ভালো, কারণ শাপ তো আর দাঁত মাজে না!

বানর, পাখি আর মাকড়শাও প্রচুর দেখা যায় সেখানে। হয়তো এটাই আপনার অ্যাডভেঞ্চারের জন্য উপযুক্ত এই সোয়াম্প ফরেস্ট। বিশাল বনের গাছগাছালির বেশির ভাগ ভাগই বছরে চার থেকে সাত মাস থাকে পানির নিচে। তাই ভ্রমণে নৌকার বিকল্প নেই। এই বনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার আঁকা বাঁকা বা জিগজ্যাগ স্টাইলের হিজল ও করচ গাছ। গাছগুলোর শিকড় দুইভাবে বিভক্ত। শিকড়ের মূল অংশ মাটির নিচে, আরেক অংশ গাছের মাঝামাঝিতে। গাছগুলোর জন্মই বুঝি পানির উপরে ভেবে বর্ষাকালে নতুন কোন ভ্রমন পিয়াসু হয়তো ধোঁকা খেয়ে যাবেন।

যেভাবে যাবেন

আপনি যদি দুই রাত-এক দিনের রাতারগুল এবং বিছনাকান্দি ঘুরে আসতে চান, তাহলে আপনাকে সকাল আটটার আগেই সিলেট শহরে থাকতে হবে। অর্থাৎ, শাহজালাল (র.) মাজারের কাছে থাকতে হবে। তাই আপনাকে আগের দিন রাতেই ঢাকা ছাড়তে হবে। মোটামুটিমানের বাস অথবা ট্রেনের আসনের খরচ পড়বে ৫০০ টাকার মতো। ঢাকা-সিলেট-ঢাকা যাতায়াতে জনপ্রতি এক হাজার টাকার মতো পড়বে। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী লম্বা সফরের ভাড়া কম-বেশি করতে পারেন। ভোরে সিলেট নেমে সেখান থেকে শহরের শাহজালাল (র.)-এর মাজারের সামনে থেকে সিএনজি রিজার্ভ যোগে বের হবেন রাতারগুল অথবা বিছানাকান্দির উদ্দেশে।

সিলেট শহর থেকে ভাড়া

আপনি যদি শুধুই বিছনাকান্দি যেতে চান তাহলে সিএনজি রিজার্ভ সর্বোচ্চ ১৩০০ বা ১৪০০ টাকা। একটা সিএনজিতে পাঁচজন যেতে পারে। তাই ঢাকা থেকেই পাঁচজনের গ্রুপ করে গেলে সাশ্রয় হবে। অথবা সিলেট শহর থেকে লোকাল গাড়িতে বিছনাকান্দি জনপ্রতি ১৪০ টাকায় (কম-বেশি) যেতে পারবেন। তবে সিএনজিতে গেলে কম সময়ে যেতে পারবেন এবং ঘুরার জন্য কিছু সময় বেশি পাবেন। তবে যদি রাতারগুল ও বিছনাকান্দি একসাথে যেতে চান, তাহলে পুরো দিন সিএনজি রিজার্ভ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা লাগবে। কয়েকটা সিএনজি যাচাই করে নেবেন।

গোয়াইনঘাট বাজারের পাশেই নৌ-ঘাট। সেখান থেকে রাতারগুল যাওয়া-আসার জন্য নৌকা রিজার্ভ করতে হবে। মনে রাখবেন, এই নৌকায় করে রাতারগুল বনের ভেতরে ঢোকা যাবে না। বনে ঢুকতে হবে আলাদা ডিঙি নৌকায় চেপে। বনে ঢোকার আগে সকালের নাস্তাটা সেরে নিন। সঙ্গে নিয়ে নিন দুপুরের হালকা খাবার। অথবা গোয়াইনঘাট বাজারে সময় করে গিয়ে খাবার খেয়ে নিতে পারেন।

নৌকা ভাড়া

বিছনাকান্দির মূল পয়েন্টে যেতে তিনটা নৌকাঘাট আছে। এর মধ্যে দুটি ঘাটে পূর্বনির্ধারিত ভাড়া কিছুটা বেশি। একটু বুঝেশুনে ঘাটে গিয়ে মুলামূলি করবেন, তাতে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে নৌকা পেয়ে যাবেন। এই টাকার মধ্যেই ‘বিছানাকান্দি-পান্থামুই ও লক্ষণছড়া’ তিনিটি এলাকা ঘুরিয়ে আনার শর্ত রাখতে ভুলবেন না। ছোট একটা নৌকায় ১০ জন যেতে পারে। সেখানেও পাঁচজনের গ্রুপ থাকলে আপনার খরচ কিছুটা কমছে। বন্ধু বা পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। সারাদিনের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ শেষে সিলেট শহরে ফিরে আবার রাতের গাড়িতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়ে পরদিন সকালেই পৌঁছে যাবেন ঢাকায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com