ঈদ মানে আনন্দ আর ঘোরাফেরা। বন্ধু পরিজন কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে গেলে সেই আনন্দ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ঈদের ছুটিতে। ঈদের এই আনন্দ বাড়িয়ে দিতে সেজেছে বিনোদনকেন্দ্রগুলো। কেন্দ্রগুলোতেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। নির্বিঘ্নে আনন্দ উপভোগ করতে ইতিমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, এ বছর ঈদুল ফিতরে টানা ৯ দিনের ছুটিতে রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক লোকসমাগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদে ছুটি পর্যাপ্ত থাকায় বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীর ঢল নামবে। পছন্দের তালিকায় রয়েছে জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় চিড়িয়াখানা, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, হাতিরঝিল, বোটানিক্যাল গার্ডেন, উত্তরার দিয়াবাড়ী, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, জিয়া উদ্যান, শ্যামলীর শিশু মেলা খ্যাত ‘ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক’, আশুলিয়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম, সাভারের নবীনগরে নন্দন পার্ক, বুড়িগঙ্গা ইকো পার্ক, যমুনা ফিউচার পার্ক ইত্যাদি।
জানা যায়, জাতীয় চিড়িয়াখানায় এবার ১৬টি লাইন দিয়ে প্রবেশ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঈদের সময় এক-দেড় লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হয়। প্রতিদিনের মতোই চিড়িয়াখানা খোলা থাকবে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা ভেবে চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য এবার ১৪টি বুথে টিকিটি বিক্রি করা হবে। এর বাইরে ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার পার্কিংয়েও একটি বুথে টিকিট বিক্রি হবে।
চিড়িয়াখানার ভেতরে কোনো খাবার পাওয়া যায় না। খাবার বিক্রি করে শুধু পর্যটন করপোরেশন। গত বছর পর্যটন করপোরেশনের দুটি রেস্তোরাঁর আওতায় দুটি বিক্রয়কেন্দ্র বাড়ানো হয়। এবার আরেকটি অস্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বসানো হবে জিরাফের খাঁচার বিপরীত পাশে। পানীয় জাতীয় খাবারের জন্য দর্শনার্থীদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য অস্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে। ঈদের দিন থেকে শুরু করে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত এটি থাকবে।
ঈদ উপলক্ষ্যে দর্শনার্থীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে নানা প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর চিড়িয়াখানায় প্রবেশ যেন মসৃণ হয়, সেজন্য লাইনের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশপাশে যাতে যানজট না থাকে সেজন্য এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঙ্গে সমন্বয় মিটিং করা হয়েছে।
লালবাগ কেল্লা: লালবাগের কেল্লা বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রাচীন দুর্গ। এটি পুরান ঢাকার ভিড় ঠেলে কেল্লার সদর দরজা দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে পরী বিবির মাজার। খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের টিকিট লাগবে না।
আহসান মঞ্জিল: পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মোগল আমলের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহসান মঞ্জিল। খোলা থাকবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। ১২ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ১০ টাকা আর প্রতিবন্ধীদের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৩০০ টাকা ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য ৫০০ টাকা টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিশুমেলা: শিশু-কিশোরদের অন্যতম প্রধান বিনোদনকেন্দ্র রাজধানীর শ্যামলীর শিশুমেলা, যা বর্তমানে ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড নামে পরিচিত। সেখানে আছে ৪০টির মতো রাইড। পরিবারের সবার চড়ার মতো আছে ১২টি রাইড। শিশুমেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এটি। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা।
হাতিরঝিল: রাজধানীর হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে মনোরম এক বিনোদনকেন্দ্র। দিনে কিংবা রাতে যে কেউই ঘুরে আসতে পারেন হাতিরঝিলে। একটু সন্ধ্যা হলেই বেশি জমে ওঠে এই এলাকা। ভিন্ন ডিজাইনে করা ব্রিজের নিচ থেকে আলো যেন পুরো পরিবেশকে দিয়েছে অন্য রূপ। আর পুরো হাতিরঝিল ঘুরে দেখতে চাইলে রয়েছে বাসসার্ভিসও।