সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন

প্রবাস জীবনের একাকিত্ব

  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

সেদিন বেগুন ভাজিটা অসাধারণ লাগছিল। বেগুন ভাজা আমার সবচেয়ে প্রিয় বলে নয়, সেদিনের ক্ষুধাটা ছিল অসাধারণ! মধ্যবিত্তের জীবনে যেমন কিছু ক্ষুধার্ত প্রহর আসে যখন শিশুর দামি দুধের খরচ জোগাতে মা-বাবা একবেলা দুপুরের না খাওয়ার দোষ ক্ষুধামান্দ্যর ঘাড়ে চাপিয়ে দেন। তারই মতো দুপুরের রং ছড়িয়ে যাচ্ছে সেদিনের তুমুল নীল অস্ট্রেলীয় আকাশ।

পাশের বাসার প্রতিবন্ধী এক প্রৌঢ় মাথা নিচু করে হেঁটে চলেন এলিস স্ট্রিটের কিনারা ধরে। বারান্দার দরজার কাছে বসে একনলা ভাত মুখে নিই, কী অসাধারণ! বেগুন ভাজার দুর্দান্ত স্বাদ ছাপিয়ে ভেসে ওঠে ক্ষুধার অভূতপূর্ব সৌন্দর্য।

প্রবাস জীবনের একাকিত্বটা আলাদা রকম। অনেকের কাছেই এটিকে ‘ভড়ং’ বলে মনে হয়। আমারও মনে হতো। এখনো হয়, কখনো কখনো। জীবন ছোট বলেই হয়তো এত রহস্যময়। একজীবনে মনোজগতের খুব বেশি জানা যায় না। সে যা হোক, আজ আর বেশি মনস্তাত্ত্বিক আলোচনা নাই বা করি। ছোট্ট একটা ঘটনা বলি, এখানকার গৃহহীন মানুষের ঘটনা। এরা এখানে হোমেলস নামেই পরিচিত। সেদিন বাসায় আসছিলাম। একজন হোমেলস মেয়েকে দেখলাম, তার ছেলেবন্ধুও তারই মতো হোমলেস।

সেন্ট্রাল স্টেশনের পাশে একটা সুপারশপ। তার ঠিক সামনেই তাদের অস্থায়ী ঠিকানা। ছেলেটি গান গায়, পাশে বসে আছে বাদামি রঙের একটি পিটবুল (পোষা কুকুর)। তার পাশে মেয়েটি বসা, কী যেন লিখছে একটি ডায়েরিতে। মাথা নিচু করে লিখেই চলেছে। ছোট ছোট হাতের লেখা। রুলারের মতো সোজা সোজা লাইন। অন্য কোনো দিকে মনোযোগ নেই কিংবা দিতে চাইছে না। কিছুটা বিব্রতকর এই জীবন হয়তো তারও ভালো লাগে না! কিছুটা বললাম এ কারণে যে, গৃহহীন হয়ে রাস্তায় থাকা মানুষ এখানে বেশ স্বাভাবিক।

সংখ্যায় কম হলেও মাঝে মাঝেই দেখা যায়। লিখেই চলেছে মেয়েটি। পাশে পড়ে থাকা কয়েকটা পিৎজার টুকরা এতক্ষণে হয়তো ঠান্ডা হয়ে লোহা হয়ে গেছে। ভাত আর বেগুন ভাঁজার স্বাদ যে এক কিংবদন্তির মতো, তা এদের পাশ কাটিয়ে আসার সময় মনে পড়ে গেল। সময়মতো আসা ট্রেনগুলো সময়েই ছেড়ে যায় এখানে। আমি দ্রুত হেঁটে চলি স্টেশনের দিকে।

কিছুদিন হলো আমার কাজ নেই। কর্ম শূন্যতাকে উপভোগ করার তেমন কোনো সুযোগ নেই এখানে। তারপরও হুমড়ি খেয়ে পড়তে থাকা হতাশাগুলোকে সামলে এগিয়ে যাই। এতটা হতাশ আগে কখনো হইনি কিন্তু এত হতাশ হওয়ার তো কিছু নেই! আমার তো এখনো একটা ঘর আছে, ঠান্ডা পিৎজা খেতে হয় না অন্তত। হতাশাগুলোকে সামলে নিয়ে এগিয়ে যাই। যৌবনের প্রারম্ভে করা ভুলের সমুদ্র থেকে নিজেকে খুঁজে পেতে চাই একটা সাজানো দ্বীপে।

আমিতো বুড়ো হয়ে যায়নি। বয়স না হয় হয়ে গেছে তিরিশ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু সাঁতরে পাড় খোঁজার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলিনি আমি। আমার ঠিকানা হারিয়ে যাবে না তো? না। নিজেকে সামলে নিই, ট্রেন এসে গেছে। বাসায় যেতে হবে, অনেক কাজ বাকি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com