1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
প্রবাসে কেবল মৃত্যু হলেই বিমার টাকা সহজে পায় অভিবাসী কর্মী
রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
এয়ার ইন্ডিয়া ট্র্যাজেডি : স্ত্রীর শেষ বিদায়ের পর নিজেই হারিয়ে গেলেন দূর আকাশে নাগরিকত্ব পেতে ৫ মিলিয়ন ডলারের ‘গোল্ড কার্ড’, ওয়েবসাইট চালু করলেন ট্রাম্প সিলেটে প্রত্যাশার চেয়ে পর্যটক কম, ৫০ শতাংশ হোটেল-মোটেলই খালি ভিয়েতনামের জনপ্রিয় দ্বীপ ফুঁককে এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৭ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি বিদেশি পর্যটক আহমেদাবাদে ২৪২ জন আরোহীসহ দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের শেয়ারে ৮% দরপতন টানা ছুটিতে বিনোদন কেন্দ্রে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস মালয়েশিয়ায় ক্রুজ পর্যটন বিদেশে বাড়ি কিনে Free Citizenship: এই পাঁচ দেশে স্বপ্ন পূরণ করুন সহজেই পাসপোর্ট কিনলেই পাবেন মাল্টার নাগরিকত্ব বিয়ে করলেই নাগরিকত্ব পাবেন যেসব দেশের

প্রবাসে কেবল মৃত্যু হলেই বিমার টাকা সহজে পায় অভিবাসী কর্মী

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪

বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দেশে ২০১৯ সালের শেষের দিকে বাধ্যতামূলক ‘প্রবাসী কর্মী বিমা’ চালু করে সরকার। জীবন বীমা করপোরেশনের হিসাব অনুসারে, তখন থেকে শুরু করে গত বছর পর্যন্ত ৩২ লাখ ২৪ হাজার ৩৪৩ কর্মী বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য গেছেন। এ সময় বিমার টাকা দাবি করেছেন ১ হাজার ৩৯৭ জন কর্মী বা তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।

প্রবাসে কর্মীর শুধু মৃত্যু হলেই আবেদন না করলেও বিমার টাকা তাঁর ব্যাংক হিসাবে চলে যায়। অন্য ক্ষেত্রে বিমার টাকা দাবি করতে হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনেক কর্মীই বিমার প্রক্রিয়া, টাকা পাওয়ার নিয়ম ও বিমানীতি সম্পর্কে জানেন না। এ অবস্থায় তাঁরা বিমার টাকা থেকে বঞ্চিত হন।

২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রবাসী কর্মী বিমা চালু করতে রাষ্ট্রীয় সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিমার উদ্বোধন করেন। শুরুতে বিমার মেয়াদ ছিল দুই বছর। ২০২৩ সালের ১২ মার্চ বিমার নতুন চুক্তি হয়। এতে বিমার অঙ্ক নির্ধারণ করা হয় ১০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদে (বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণের তারিখ থেকে) ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী বিদেশগামী কর্মীরা এ বিমার আওতায় আসবেন।

গন্তব্য দেশ থেকে মৃত্যুসনদে ‘আত্মহত্যা’ লিখে পাঠালে এ নিয়ে ওই কর্মীর পরিবারের সদস্যদের আর কিছু করার থাকে না। আত্মহত্যা, এইডস বা এ–সংক্রান্ত রোগে মৃত্যুকে বিমা–সুবিধার আওতায় আনার পাশাপাশি কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমার বিষয়ে দাবি তোলা হয়েছে।

শাকিরুল ইসলাম, চেয়ারপারসন, অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ)  

নতুন চুক্তি বলছে, বিমার মেয়াদের মধ্যে কর্মীর মৃত্যু, স্থায়ী পঙ্গুত্ব (অক্ষমতা), আংশিক স্থায়ী পঙ্গুত্ব, চাকরিচ্যুত হয়ে ছয় মাসের মধ্যে কর্মী দেশে ফেরত এলে বিমা–সুবিধা পাবেন। স্বাভাবিক মৃত্যুতে ও দুর্ঘটনার কারণে বিমার মেয়াদকালে বা মেয়াদোত্তীর্ণের পর ৯০ দিনের মধ্যে কর্মী মারা গেলে বিমার পুরো টাকা অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা পাবেন। চাকরিচ্যুত হয়ে ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফেরত এলে বিমার আওতায় ৫০ হাজার টাকা পাবেন। তবে নিয়োগকারীর সম্পূর্ণ খরচে কর্মী বিদেশে গেলে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।

তবে বিমার ঝুঁকি গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে আত্মহত্যা বা নিজের ক্ষতি করে মারা গেলে, এইচআইভি/এইডস বা এ ধরনের রোগে মৃত্যু বা অসুস্থতা, ঝুঁকিপূর্ণ খেলা অথবা দুঃসাহসিক কার্যকলাপে মৃত্যু হলে (মোটর রেসিং, মুষ্টিযুদ্ধ, স্কুবা ডাইভিং, ঘোড়দৌড়, পাহাড়ে আরোহণসহ অন্যান্য কাজ), মদ অথবা মাদকাসক্তির কারণে মৃত্যু হলে, যুদ্ধ বা দাঙ্গা, দুর্বৃত্তের হামলায় মৃত্যু ও আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কর্মী বিমার সুবিধা পাবেন না।

বিদেশগামী কর্মীকে বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য দেওয়া অন্যান্য ফির সঙ্গে প্রযোজ্য বিমা প্রিমিয়াম দিতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিমা বাধ্যতামূলক হলেও বিদেশে যাওয়ার আগে কর্মীদের এ বিষয়ে জানানো বা সচেতন করার বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিদেশে মৃত্যু ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে বিমা দাবি করার সংখ্যা তেমন বাড়েনি। এইচআইভি/এইডস বা আত্মহত্যায় মৃত্যুর মতো বিষয়গুলো বিমার আওতায় আনা আলোচনায় থাকলেও তার সুরাহা হয়নি।

কর্মীদের অনেকে বিমার কথা জানেন না

টাঙ্গাইলের শরিফুল ইসলাম গত বছরের অক্টোবরে ৫ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। যাওয়ার পর ২২ দিন কাজ করেছেন। পরে পুলিশের হাতে আটক হন। আউটপাস দিয়ে ডিসেম্বরে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। শরিফুল বলেন, ‘কেন দেশে পাঠায় দিছে, জানি না। আর যাওয়ার সময় বিমার জন্য কোনো টাকা জমা দিছি কি না, জানি না। দেশে ফিরেও এ নিয়ে কোনো জায়গায় আবেদন বা কিছু করি নাই বা কেউ কিছু করতে বলে নাই।’

জীবন বীমা করপোরেশনের প্রবাসী কর্মী বিমার ব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশ যাওয়ার আগেই কর্মীদের বিমা নিয়ে কীভাবে সচেতন করা যায়, তার জন্য সভা হয়েছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সময় যাতে শ্রমিকদের বিষয়টি জানানো হয়, তা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এবং রামরুর (রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, শুধু অভিবাসী কর্মীর মৃত্যুতে নয়, অসময়ে ফেরত আসাসহ বিভিন্ন কারণে শ্রমিকদের বিমার আওতায় আনার উদ্যোগ খুবই ভালো। তবে এ তথ্য যদি কর্মীদের জানানো না হয় বা তাঁদের সচেতন করা না হয়, তাহলে বিমা থাকলেও তা কাজে লাগবে না।

কেন দেশে পাঠায় দিছে, জানি না। আর যাওয়ার সময় বিমার জন্য কোনো টাকা জমা দিছি কি না, জানি না। দেশে ফিরেও এ নিয়ে কোনো জায়গায় আবেদন বা কিছু করি নাই বা কেউ কিছু করতে বলে নাই

টাঙ্গাইলের শরিফুল ইসলাম

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ২০২২-২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ওই অর্থবছরে ১১ লাখ ২৫ হাজার ৮৩৬ জন কর্মী বাধ্যতামূলক বিমার আওতায় এসেছেন। অর্থবছরটিতে ৮৬০ জন কর্মীর পরিবারকে মৃত্যুজনিত বিমা হিসেবে ৩১ কোটি ৭২ লাখ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

কল্যাণ বোর্ড ও জীবন বীমা করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, যাঁরা বিদেশে মারা যান, মরদেহ দেশে আসার পর বিমার জন্য কোনো আবেদন করার প্রয়োজন হয় না। মৃত কর্মীর ব্যাংক হিসাবে বিমার টাকা জমা হয়। তবে যাঁরা পঙ্গুত্ব নিয়ে ফেরেন বা ছয় মাসের মধ্যে ফিরে আসেন, তাঁদের কোনো তথ্য সরকারি সংস্থার কাছে নেই।

তিন শিশুসন্তানকে মায়ের কাছে রেখে কুয়েতে একটি বিদ্যালয়ে আয়া হিসেবে কাজের জন্য গিয়েছিলেন মাদারীপুরের সীমা। সেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। সীমার মা মঞ্জু বেগম বলেন, বিমার কথা জানতেন না। মেয়ের লাশ দেশে এলে বিমানবন্দরে ৩৫ হাজার টাকা ও পরে ৩ লাখ টাকা পান। এরপর বিমার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা পান। এখন মেয়ের তিন সন্তানকে লালন–পালন করছেন তিনি।

আত্মহত্যা ও এইচআইভি/এইডসে মৃত্যুকে বিমার আওতায় আনার দাবি

গত বছর বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রামরুর করা এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রবাসে দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যায় ৩১ শতাংশ নারী শ্রমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।

গত ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর প্রবাসীকল্যাণ ভবনে মেয়ের মৃত্যুতে পাওনা ৩ লাখ টাকা কবে পাবেন, জানতে এসেছিলেন নরসিংদীর হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে আমিরুন বেগম ২০২২ সালের নভেম্বরে সৌদি আরব যান। সেখান থেকে পাঠানো মৃত্যুসনদে লেখা আছে, আমিরুন গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুর দুই মাস পর তাঁর লাশ দেশে আসে।

প্রতিবেদকের সামনেই হারুনুর রশীদের কাছে থাকা মৃত্যুসনদ দেখে সেখানে কর্মরত একজন বললেন, ‘ওহ, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, তাই বিমার টাকা পাবে না।’ এ সময় হারুনুর রশীদ বলেন, ‘মেয়ে কেমনে মারা গেছে, তা তো আর আমরা বলতে পারব না।’

অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে অনেকে নানা কারণে আত্মহত্যা করেন। এ ছাড়া গন্তব্য দেশ থেকে মৃত্যুসনদে ‘আত্মহত্যা’ লিখে পাঠালে এ নিয়ে ওই কর্মীর পরিবারের সদস্যদের আর কিছু করার থাকে না। আত্মহত্যা, এইডস বা এ–সংক্রান্ত রোগে মৃত্যুকে বিমা–সুবিধার আওতায় আনার পাশাপাশি কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমার বিষয়ে দাবি তোলা হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com