1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
প্রবাসী শ্রমবাজার: যে সাতটি দেশে এখন বাংলাদেশি কর্মীরা সবচেয়ে বেশি যায়
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১০:১১ অপরাহ্ন

প্রবাসী শ্রমবাজার: যে সাতটি দেশে এখন বাংলাদেশি কর্মীরা সবচেয়ে বেশি যায়

  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ মে, ২০২৩

বাংলাদেশ থেকে একসময় অনেক দেশে বৈধভাবে কর্মসংস্থানের জন্য কর্মীরা গেলেও গত কয়েক বছরে সেই বাজার অনেকটাই সংকুচিত হয়ে উঠেছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে শ্রমবাজার আরো চাপে পড়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭২টি দেশে কাজ নিয়ে যায় বাংলাদেশিরা।

প্রতিবছর বাংলাদেশে থেকে সরকারিভাবে আট থেকে ১০ লক্ষ শ্রমিক বিদেশে যান। এদের বেশিরভাগই যান অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে।

তবে অন্যান্য ভিসা মিলিয়ে ২০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে যান বলে জানাচ্ছে বায়রা।

কোন দেশগুলোয় বাংলাদেশি শ্রমিকরা বেশি যান

বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক আতিকুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব।

এরপরেই রয়েছে ওমান, কাতার, বাহরাইনের মতো দেশগুলো। জর্ডান, সিঙ্গাপুর, রোমানিয়া, ইত্যাদি দেশেও অল্প কিছু করে কর্মী যাচ্ছেন।

কম বেশি মিলিয়ে আমাদের কাছ থেকে বৈধভাবে ১৭২টি দেশে বাংলাদেশি কর্মীরা যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

কুয়েত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালদ্বীপ এক সময় বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজার ছিল। এখনো এসব দেশে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন।

কিন্তু এসব দেশে বৈধভাবে এখন কর্মীরা যেতে পারছেন না।

বৈধভাবে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, বলিভিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা সম্প্রতি যেতে শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।

তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। তাদের অনেকে ছুটিতে এসেছেন, যাদের আবার যাওয়ার কথা রয়েছে।

কি কাজে বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাচ্ছেন

আতিকুর রহমান বলছেন, নতুন দেশগুলোয় যাওয়া কর্মীরা মূলক ক্যাটারিং, নার্স, কেয়ারগিভার ইত্যাদি ভিসায় যাচ্ছেন।

তবে ওমান, সৌদি আরবের মতো দেশে যাওয়া বেশিরভাগ শ্রমিক যাচ্ছেন অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে।

বাংলাদেশের অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”আমাদের যেসব দেশে সবচেয়ে বড় বাজার, সেসব দেশে যাওয়া বেশিরভাগই অদক্ষ শ্রমিক। তারা নির্মাণ খাতে, রেস্তোরাঁয়, দোকানে বা অন্যত্র বিভিন্ন ছোটখাটো কাজ করেন।”

তিনি বলছেন, এক লাখের বেশি কর্মী ভিসা লাগিয়ে অপেক্ষা করছেন, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে যেতে পারছেন না।

অনেকে ভ্রমণ ভিসায় বা স্বজনদের সাথে দেখা করার ভিসায় গিয়ে নানা দেশে থেকে যাচ্ছেন। অনেকে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অবৈধভাবে অবস্থান করতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি কর্মী যায়, সেইরকম সাতটি দেশের বর্তমান অবস্থান এখানে তুলে ধরা হলো।

সৌদি আরব

২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সৌদি আরবে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৯৭ জন কর্মী গিয়েছেন। যদিও ২০১৯ সালে দেশটিতে গিয়েছেন ৩ লাখ ৯৯ হাজার কর্মী।

আলী হায়দার চৌধুরী বলছেন, অনেক কর্মীর ভিসা লাগানো হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে যেতে পারেননি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সৌদি আরব। সৌদি এয়ারলাইন্স চলাচল করলেও বাংলাদেশ বিমান এখনো অবতরণের অনুমতি পায়নি।

অনেক শ্রমিক বাংলাদেশে ছুটিতে এসে আটকে পড়েছিলেন। তাদের নিয়োগ কর্মীরা জানাচ্ছেন, তাদের ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৌদি আরবে ফিরতে হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক হিসাবে যান
ছবির ক্যাপশান,বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক হিসাবে যান

ওমান

বাংলাদেশ থেকে এখন বেশি কর্মী যাওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওমান।

২০২০ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ওমানে ১৭ হাজার ৩৯৮ জন কর্মী গিয়েছেন।

আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৭২ হাজার ৬৫৪ জন।

মূলত নির্মাণ, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে এই কর্মীরা যাচ্ছেন বলে জনশক্তি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো জানিয়েছে।

দেশটিতে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের বড় অংশই বাংলাদেশি। সব মিলিয়ে এখানে প্রায় আট লাখ কর্মী রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তাদের মধ্যে অন্তত দেড় লাখ শ্রমিক অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন।

তবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, ওমানে যাওয়া বাংলাদেশিদের বড় অংশই ফ্রি ভিসায় সেখানে গেছেন। অর্থাৎ কোন মালিকের মাধ্যমে তারা সেখানে যাননি।

তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় ওমানের অর্থনীতিও কিছুটা চাপের মধ্যে পড়েছে। সেই কারণে সংকটে পড়েছেন অভিবাসী কর্মীরা।

করোনাভাইরাসের কারণে ছয়মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর পহেলা অক্টোবর থেকে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছে ওমান।

সিঙ্গাপুর

২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী যাওয়া দেশ হিসাবে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। এই বছরে দেশটিতে মোট ৯ হাজার ৪১৮ জন কর্মী গেছেন।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে গিয়েছেন ৪৯ হাজার ৮২৯ জন কর্মী।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর দেশটিতে থাকা অনেক বাংলাদেশি কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল আবার চালু হলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।

বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারে জোরেশোরে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও করোনাভাইরাসের কারণে সব থমকে গেছে।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারে জোরেশোরে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও করোনাভাইরাসের কারণে সব থমকে গেছে

কাতার

বাংলাদেশ থেকে ২০২০ সালে ৩ হাজার ৫০৩ জন কাতার গিয়েছেন।

আগের বছর দেশটিতে যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ২৯২ জন।

বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারে জোরেশোরে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও করোনাভাইরাসের কারণে সব থমকে গেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর কাতার নিষেধাজ্ঞা জারি করলে দেশটির সঙ্গে সব দেশের যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

তবে এখন দোহার সঙ্গে নিয়মিত বিমান চলাচল আবার শুরু হয়েছে। যদিও দেশটিতে গেলে কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

জর্ডান

এই বছরে সবচেয়ে বেশি যাওয়া কর্মীদের তালিকায় জর্ডান রয়েছে পঞ্চম নম্বরে।

মূলত পোশাক, আবাসিক ও নির্মাণ খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মীরা দেশটিতে যাচ্ছেন।

এই বছর মার্চ মাস পর্যন্ত ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে জর্ডান গিয়েছেন ৩ হাজার ৬৮ কর্মী।

২০১৯ সালে বাংলাদেশে থেকে যান ২০ হাজার ৩৪৭ জন কর্মী।

সেপ্টেম্বরের আট তারিখ থেকে দেশটি পুনরায় আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের অনুমতি দিয়েছে।

তবে বিদেশ থেকে আসা সকল যাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে হবে।

রিশাস

এই দেশটিতে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে কর্মীদের যাওয়া শুরু হয়েছে।

এই বছর দেশটিতে গিয়েছেন ২ হাজার শ্রমিক। আগের বছর গিয়েছেন সাড়ে সাত হাজার শ্রমিক।

গার্মেন্ট, পর্যটন, রেস্তোরাঁ আর নির্মাণ খাতে বেশি কর্মী যাচ্ছেন।

প্রবাসে কাজ করা নির্মাণ শ্রমিক

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
প্রবাসে কাজ করা নির্মাণ শ্রমিক

কুয়েত

একসময় বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য শ্রমিক কুয়েতে কাজ করতে গেলেও এখন সেখানে কর্মীদের যাওয়া অনেক কমে গেছে।

২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে গিয়েছেন ১৭৪৩ জন। আগের বছর দেশটিতে গিয়েছেন ১৭ হাজার ৩৯৮ জন।

ছয় মাস বন্ধ থাকার পর অগাস্ট মাসের শুরুতে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতের সঙ্গে বিমান চলাচল আবার শুরু হয়েছে। তবে এখনো নতুন কর্মী যাওয়া শুরু হয়নি।

অন্যান্য

বাংলাদেশ থেকে কম হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, লেবানন, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইটালি, মিশর, ব্রুনেই, জাপান, ইরাক ও যুক্তরাজ্যে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক যান।

যদিও এই বছর এ দেশগুলোর কোনোটিতেই যাওয়া কর্মীর সংখ্যা হাজারের ঘর ছুঁতে পারেনি।

বিশেষ করে মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আগে থেকেই অনেক বাংলাদেশি কাজ করছেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, এর বাইরে ভ্রমণ ভিসা, স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার ভিসা নিয়ে অনেকে গিয়ে অবৈধভাবে থেকে যান। এই তালিকায় তাদের হিসাব যোগ হয়নি।

বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com