ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অভিযানে গত ৫ মাসে এক লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ গ্রেপ্তারের সংখ্যায় সন্তুষ্ট না হওয়ায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অভিযানের গতি বাড়াতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সর্বশেষ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও আইস কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দৈনিক ৩ হাজার জন অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারের লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেছে। এজন্য তারা আদালত ও বিভিন্ন সংবেদনশীল স্থান থেকেও ব্যাপক আটক অভিযান চালাচ্ছে।
ইতিমধ্যে অনেকেই আদালতে শুনানী হাজিরা দিতে গিয়ে আইসের গ্রেপ্তারের শিকার হোন। তাদের অনেকের কোন ক্রিমিনাল রিপোর্টও নেই। আর এতে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে অভিবাসী ও তাদের আইনজীবিসহ ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিদের মধ্যে।
এদিকে আটককৃতদের আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না দেওয়া তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে অভিবাসন সুরক্ষায় জড়িত মানবাধিকার সংগঠনগুলো। অপরাধে জড়িত না এমন অভিবাসীদেরকে আটকের নিন্দা জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন রাইটস সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দ। এরকম অভিযানে শুধুমাত্র ভয়ভীতি সৃষ্টি করা হ্েচ্ছ বলে জানান তারা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার ২ হাজার ২০০ জনের বেশি অভিবাসীকে আটক করেছে। বুধবার ২ হাজারের বেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এ দুই দিন আটকের সংখ্য যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সর্বোচ্চ।
এনবিসি নিউজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত মে মাসে হোয়াইট হাউস থেকে নির্দেশনা দেয়া হয় আইস প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে। এজন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে। যারা বিকল্প আটক কর্মসূচির আওতায় অর্থ্যাৎ জিপিএসের মাধ্যমে নজরদারীতে রয়েছেন এমনঅভিবাসীদের গণ-এসএমএসের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের আগেই আইস অফিসে আসতে বলা হয়েছিল। তারা উপস্থিত হলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আইনজীবীরা জানান, সাতজন অভিবাসীকে আইস অফিসের বাইরে হাতকড়া পরিয়ে সাদা গাড়িতে তুলে নিতে দেখা গেছে।
আটককৃতদের মধ্যে ৩০ বছর বয়সী এক কলম্বিয়ান ব্যক্তির আইনজীবী মার্গারেট কারগিওলি, যিনি ইমিগ্র্যান্ট ডিফেন্ডার্স ল সেন্টারের পরিচালক, জানান যে তার মক্কেল নিয়মিতভাবে আইস-এর সব নির্দেশ মেনে চলতেন এবং খুবই সহযোগী ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে অভিবাসীরা এখন উভয় সংকটে পড়েছেন।
এছাড়া আদলতে নিয়মিত শুনানীতে হাজিরা দিতে যাওয়া অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করছে আইস।
দ্য গার্ডিয়ান শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আইস এর শীর্ষ কর্মকর্তারা তাদের অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা অভিবাসন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট নেই এমন অনিবন্ধিত অভিবাসীদেরও গ্রেপ্তার করতে, যদি তারা অন্যদের গ্রেপ্তারের সময় সামনে পড়ে যান। এই ধরনের ব্যক্তিদের “কোল্যাটেরাল” বলা হচ্ছে।
গত ২১ মে’র এক বৈঠকে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোওম র নির্দেশ দেন যে গ্রেপ্তারের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়াতে হবে। প্রতিদিন ৩,০০০ জন এবং বছরে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার করতে হবে।
এই হঠাৎ চালানো ধরপাকড়ের ফলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভুলবশত আটক করা হয়েছে, এবং আটক কেন্দ্রগুলো মারাত্মকভাবে অতিরিক্ত ভিড়ে পড়েছে, যা পুরো ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে তুলছে।
বর্তমানে অভিবাসী আটক কেন্দ্রে ধারণ ক্ষমতার বেশি প্রায় ৫৩ হাজার জন আটক রয়েছেন। আটক কেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নতুন কেন্দ্র খোলার বিষয়ে জোর পদক্ষেপ চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ফেডারেল সরকারের কাছে অর্থ চাওয়া হয়েছে নতুন ও আটক কেন্দ্রে বেড সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য।
Like this:
Like Loading...