শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

প্রকৃতি ও রাষ্ট্রের কোলে সুখী ফিনল্যান্ডের মানুষ

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২

ইউক্রেন যুদ্ধ ফিনল্যান্ডের মানুষের মনেও এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে যে, নিরপেক্ষতা ঝেড়ে ফেলে সে দেশ ন্যাটোর সদস্য হতে চায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বের অন্যতম সুখী জাতি হিসেবে ফিনল্যান্ডের কিছু বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

ইউরোপের উত্তর প্রান্তে ফিনল্যান্ডের মানুষ নিজেদের জীবনযাত্রা নিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। তারাই নাকি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ। কন্টেন্ট ম্যানেজার সালা হোনকাভুয়োরি মনে করেন, ইচ্ছাশক্তি, প্রতিরোধের ক্ষমতা ও প্রকৃতির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধার কারণে ফিনল্যান্ডের মানুষ নিজেদের সুখী বলে মনে করেন।

সেই সঙ্গে সুস্বাদু খাদ্যও রয়েছে। সালা হোনকাভুয়োরি সপরিবারে লেকের ধারে বসে খাওয়াদাওয়া করেন। সন্ধ্যায় স্যামন মাছ ও কয়লার চুলায় সেঁকা সবজি খাওয়া হচ্ছে৷। আকানইয়েরভি হ্রদ ফিনল্যান্ডের একেবারে উত্তরে ল্যাপল্যান্ড অঞ্চলে অবস্থিত।

এই পরিবারের কাছে জায়গাটি স্বপ্নের মতো। সালা বলেন, ‘‘এই টিলা আমার খুবই পছন্দের। এই নিসর্গ আমার আত্মা ছুঁয়ে যায়। চূড়ার উপর দাঁড়ালে বিস্তীর্ণ প্রান্তর দেখতে পাই। নিজেকে অতি ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ মনে হয়। তখন দৈনন্দিন জীবনের সব সমস্যা ও দুশ্চিন্তাও তুচ্ছ মনে হয়।”

সে কারণে সালার পরিবারের একটি বাসনা রয়েছে। তারা ল্যাপল্যান্ডে নতুন বাসা গড়তে চায়। ৩৭ বছর বয়সি এই কন্টেন্ট ম্যানেজার আসলে ফিনল্যান্ডের দক্ষিণের মানুষ। স্বামী ও দুই সন্তান, আনি ও মিকলাসও শীঘ্র ল্যাপল্যান্ডে বসবাস করতে চায়। এই দম্পতির ইচ্ছা, দুই সন্তান যেন শহুরে পরিবেশ থেকে দূরে প্রকৃতির মাঝেই বেশি সময় কাটাতে পারে। সে কারণে এই পরিবার গোটা অঞ্চল ঘুরে বাসার জন্য যতটা সম্ভব নির্জন জায়গার খোঁজ করছে।

রাজধানী হেলসিংকি তাদের কাছে মোটেই আকর্ষণীয় নয়। বড় কোলাহল, প্রকৃতির বড়ই অভাব। ইউরোপের অন্যতম সবুজ ও আরামদায়ক রাজধানী হওয়া সত্ত্বেও তাদের সেটা মনে হয়। ফিনল্যান্ডের প্রকৃতির পাশাপাশি সে দেশের সরকারও নাগরিকদের সুখী রাখে।

হেলসিংকির আলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাংক মার্টেলা বলেন, ‘‘ফিনল্যান্ডে সংবাদ মাধ্যম ও মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। অবাধ নির্বাচন হয়। দুর্নীতির মাত্রা অত্যন্ত কম। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামাজিক সহায়তার নানা ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন শিশু, বেকার ও অবসরপ্রাপ্তদের জন্য ভাতা। এ সবের ফলে মানুষের মনে একটা অনুভূতি আসে, যে রাষ্ট্র তাদের দেখাশোনা করছে।”

কিন্তু স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এমন কল্যাণ রাষ্ট্রগুলি কি সেই সঙ্গে প্রয়োজনে নাগরিকদের সুরক্ষাও দিতে পারে? ফিনল্যান্ডের অনেক মানুষের মতো হোনকাভুয়োরি পরিবারের মনেও সেই দুশ্চিন্তা রয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ স্থল সীমান্ত রয়েছে। ইউক্রেনের উপর হামলা চালানো এমন খামখেয়ালি প্রতিবেশীর পাশে বাস করা অস্বস্তির কারণ বৈকি। সালা বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি অবশ্যই আমাকে ভাবাচ্ছে। কিন্তু সে কথা না ভাবার চেষ্টা করছি এবং দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছি। আমি মোটেই বিচলিত হতে চাই না৷ সেটা করলে মন খারাপ হয়ে যাবে।”

এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও হোনকাভুয়োরি পরিবার বেশ শান্ত রয়েছে। আপাতত খেলাধুলা নিয়ে তারা ব্যস্ত। মা হিসেবে সালা স্নোবোর্ডের মাধ্যমে নিজের সন্তানদের মধ্যে ল্যাপল্যান্ডের প্রতি ভালোবাসা আরও জাগিয়ে তুলছেন।

অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় ছয় মাস স্কি-র মৌসুম চলে। কিন্তু সাউনা-র মৌসুম বলে কিছু নেই, গোটা বছরই মানুষের সেটা পছন্দ। উইন্টার স্পোর্টসের পাশাপাশি সাউনাই অবসর সময়ে মানুষের সেরা আকর্ষণ।

সালা হোনকাভুয়োরি মনে করেন, ‘‘সাউনার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আমরা প্রায়ই সাউনায় যাই। কখনো বড়দিন উৎসব বা মিডসামার উৎসবের মতো বিশেষ উপলক্ষ্যেও যাই। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা–কোনো সময়ই অসময় নয়। একসঙ্গে দেখা করার এটাই বড় সুযোগ। তাছাড়া সাউনা শরীর ও আত্মা শুদ্ধ করে।”

সেইসঙ্গে সালা হোনকাভুয়োরির কাছে ব্যক্তিস্বাধীনতারও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তিনি একবার সন্তানদের নিয়ে ইউরোপের বাকি অংশ ভ্রমণ করতে চান। তারপর আবার ল্যাপল্যান্ডে পছন্দের হ্রদের ধারে সুখের জীবনে ফিরে আসতে চান।

সূত্র: ডয়চে ভেলে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com