শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য হেরিটেজ পার্ক

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১

প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য হচ্ছে খাগড়াছড়ির হেরিটেজ পার্ক। সেখানে না গেলে বোঝা যাবে না প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কী? পার্ক থেকে খুবই সহজে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। এর একপাশে বহমান চেঙ্গী নদী। যা এই পার্কটিকে সৌন্দর্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রকৃতিকে করেছে আরো সুন্দর। এই পার্কে আমাদের দেশের মানচিত্র অবলোকন করা আছে।

প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গড়ে তোলা নৈসর্গিক হেরিটেজ পার্ক পর্যটকদের এখন এক নতুন ঠিকানা। অনেকে প্রকৃতির খুব কাছে একটু সময় কাটানোর স্থানটিকে বেছে নিচ্ছেন। তাদের হৃদয়, মন ছুঁয়ে যায় এখানকার নৈসর্গিক রূপ-লাবণ্যে।

হেরিটেজ পার্কে নতুনভাবে স্থাপিত হবে ছোট্ট একটি জাদুঘর। যেখানে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবনধারা স্বযত্নে সাজানো হবে। এখানে মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমা উপজাতিদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও বসতঘর তৈরি করে প্রকৃতির সঙ্গে আধুনিকতার প্রলেপ দিয়ে সাজানোর মহাপরিকল্পনা দ্রুত এগুচ্ছে। তখন শুধু দেশি নয় বিদেশি পর্যটকদের জন্যও নতুন মাত্রা এনে দেবে। তার ওপর তাঁবু বাসের মধ্যে রাত্রী যাপনের বিশেষ সুযোগ পেতে এখানে আসলে নিজেকে যুদ্ধের মাঠে অগ্র সৈনিক মনে হবে। যা এ পার্কের নতুন সংযোজন।

দূর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সর্পিল প্রবাহ নিয়ে বয়ে যাওয়া চেঙ্গী নদীর পারে জেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত হেরিটেজ পার্ক এখন অনেকের নতুন ঠিকানা, নতুন পর্যটন কেন্দ্র।

এখানকার প্রকৃতি ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা ও রাতে বসে রঙের মেলা। পাহাড় ঘেরা এ প্রকৃতিতে বসে চাঁদনী রাতের দৃশ্যপট ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। এখানে বসে জেলার সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়া আলুটিলা একপলকে দেখে সেখানে পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে যেতে ইচ্ছে হবে। এই পাহাড় চূড়ায় বসে দূর পাহাড়ের বুক চিরে সকালের মিষ্টি সূর্যোদয়, সন্ধ্যায় সব আলোকে ম্লান করে সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যি অপরূপ।

নীল আকাশে সাদা মেঘ, সবুজ পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে মেঘের ভেলা, চেঙ্গী নদীর লাল মাটির ঘোলা পানির টানে নিজেকে হারিয়ে যেতে নেই মানা। এখানকার প্রকৃতিতে গাঢ় সবুজ পাহাড়, কলকলে বয়ে যাওয়া নদী, দূরে ঝিরঝির শব্দের ঝর্না, ওপরে নীল আকাশ, মাঝে মাঝে সাদা মেঘ, বর্ষায় বৃষ্টির রিমিঝিমি শব্দ, রাতের আকাশে চন্দ্র-তারা ও দিনের আলোয় লাল সূর্য মিলেমিশে একাকার। হেরিজ পার্কের পেভিলিয়নে বসে চেঙ্গী নদী ও আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য মন ছুঁয়ে যায়।

এ কারণে কপোত-কপোতীদের ভিড় এখানে দিন দিন বাড়ছে। এখানে গার্ডেন ভেলি রেস্টুরেন্টে ৬০ ধরনের সুস্বাদু খাবার, গিরীনন্দন শপিং, সঙ্গীতের মূর্ছনায় হৃদয়ের সুকুমার বৃত্তিগুলো পরিস্ফুটিত হয়। এখানকার পরিত্যক্ত লাল মাটির জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়কে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে হেরিটেজ পার্ক গড়ে তুলতে বাহারি রঙের ফুলের বাগান সৃজন করা হয়েছে। হেরিটেজ পার্কের ভেতর প্রবেশের সময়ে আঁকা-বাঁকা নীচু থেকে উঁচুতে ওঠার সময়ে ইট বিছানো পথের দুধারে সবুজ ঘাসের মাঝে রঙিন ফুলের দোল খেলার দৃশ্যপট যে-কারো মনকে প্রফুল্ল করে। তার ওপর পাহাড়টির নীচে সমতল ভূমিতে ফলজ-বনজ বাগান সৃজন করা হয়েছে। সেখানে বাউকুল, আপেলকুল, লিচু, আম, আনারস ইত্যাদি ফলের বাগান অনেকের জন্য উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। এখানে উন্নত মানের চারা উৎপাদন ও বিপণন করা হচ্ছে।

খাগড়াছড়িতে স্থাপিত হেরিটেজ পার্ক প্রকল্প তার একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। যেখানে পাহাড়ি-বাঙালি সকলের মিলন মেলায় সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচিত হয়েছে। এ পার্কটি স্থাপনে খাগড়াছড়ি রিজিয়ন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহায়তা ও উৎসাহে এর কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সহায়তা প্রদান করেছে।

১০ একর ভূমিতে হেরিটেজ পার্কটি গড়ে উঠেছে। আনসার ও ভিডিপির জেলা খাগড়াছড়ি কমান্ডেন্ট ডক্টর মো. দিদারুল আলমের উদ্যোগে এ পার্কটি গড়ে উঠেছে। তিনি দেশে এই প্রথম কৃষি পর্যটন ধারণায় এই হেরিটেজ পার্ক গড়ে তুলেছেন। যা একেবারেই নতুন ধারণায়, নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যান তত্ত্বের ওপর এমএস পাস করে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অলংকারিক উদ্যান তত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করে বাস্তব জীবনে শিক্ষালব্ধ জ্ঞান বিকাশের অভিপ্রায়ে এ হেরিটেজ পার্ক গড়ে তুলেছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com