বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণীদের নিকট সবচেয়ে আকর্ষণীয় পেশা মডেলিং। আবার অনেকে মডেলিং শব্দটি শুনলে অনেকেই নাক সিটকায়, ভ্রু কুচকায়। কিন্তু আমরা এও জানি মুদ্রার যেমন এপিঠ রয়েছে তেমনি ওপিঠও রয়েছে। প্রায়শই বিতর্কিত কিছু মানুষ এই ক্ষেত্রটিকে কলুষিত করে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে এই পেশায় রয়েছে যথেষ্ট সম্ভাবনা। নিজেকে উপস্থাপন, বাচনভঙ্গি, অন্যকে নিজের প্রতি আকৃষ্টকরণই মডেলিং। এ পেশায় সুনাম, সুখ্যাতি তো আছেই। আরো আছে উন্নত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা। আমাদের দেশে নব্বইয়ের দশকের আগেও মডেলিং-এর ব্যাপকতা দেখা যায়নি। বর্তমানে মডেলিং একটি স্বাভাবিক বিষয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও টিভি চ্যানেল বেড়ে যাওয়ার ফলে মডেলিংয়ের ব্যাপকতাও বেড়েছে। মডেলিং শব্দটি এসেছে ইংরেজি মডেল থেকে। শব্দটি ষোড়শ শতকে ইতালীয় ‘মোদেল্লা’ থেকে ফরাসি ‘মোদেল’ হয়ে ইংরেজি মডেল (Model) হয়েছে।
মডেলিং এর শ্রেণিবিভাগ:
অনেকেই মডেলিং করতে চায়। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে সে মডেলিং করতে চায় তা সে ঠিকমতো জানে না। আপাতদৃষ্টিতে তিন ধরনের মডেলিং রয়েছে। যেমন র্যাম্প মডেলিং, অডিও ভিজ্যুয়াল মডেলিং ও প্রিন্ট মডেলিং।
র্যাম্প:
র্যাম্প মডেলিং বলতে বোঝায় প্রতিষ্ঠানের নতুন পোশাক পড়ে র্যাম্পে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে হাটার মাধ্যমে পোশাকের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা। বর্তমান জনপ্রিয় সব মডেলদের বেশিরভাগই মডেলিং শুরু করেছিল র্যাম্প মডেলিং এর মাধ্যমে। নিজস্ব ব্যক্তিত্বকে তার এই হাঁটাচলার মধ্যে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয়। এজন্য র্যাম্প মডেলদের অবশ্যই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মেয়ে র্যাম্প মডেলদের চেহারা কিছুটা লম্বা হয় এবং দৈহিক উচ্চতাও সাড়ে পাঁচ ফুটের উপরে হয়। আর ছেলেদের ক্ষেত্রে সুঠামদেহী তো অবশ্যই হতে হবে। পাশাপাশি লম্বায় গড়ন হতে হবে ছয় ফুট বা তার বেশি। একজন র্যাম্প মডেলের চেহারা কোনো বিষয় নয়। দেহের গঠনের সাথে মানানসই চেহারা হলেই র্যাম্প মডেলিংয়ে উত্তরোত্তর উন্নতি করা যায়।
অডিও ভিজ্যুয়াল:
অডিও ভিজ্যুয়াল মডেলিং বলতে বোঝায় কোনো একটি বিজ্ঞাপনে চরিত্র অনুযায়ী শব্দের সাথে সাথে মিলিয়ে অভিনয় করা। এই ক্ষেত্রটিতে সুন্দর চেহারা, ফিগার, বয়স কোনো বিষয়ই নয়। পণ্যের ধরন ও গল্প অনুযায়ী মডেল নির্বাচন করা হয়। তাই এক্ষেত্রে অভিনয়টাই মূল বিষয়। যে যতো নিখুঁত অভিনয়ে পারদর্শী সেই এই মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে পারেন।
প্রিন্ট:
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের পুরোটাই জুড়ে একজন ব্যক্তিকে তুলে ধরা হয়। এটিই প্রিন্ট মডেলিং হিসেবে পরিচিত। এখানেও সুন্দর চেহারা, ফিগার, বয়স কোনো বিষয়ই নয়। যে বিষয়টা এখানে উপস্থাপন করা হবে সেদিক বিবেচনা করেই মডেল নির্বাচন করা হয়।
মডেল হতে চাইলে:
মুখে মডেল হতে চাই বললেই যে কেউ মডেল হতে পারে না। একজন মডেল হতে প্রয়োজন একটি পরিপূর্ণ পোর্টফোলিও। এ ক্ষেত্রে একজন পেশাদার ফটোগ্রাফারকে দিয়ে একটি পোর্টফলিও বানাতে হবে। সাধারণ একটি পোর্টফোলিওতে থাকে মডেলের নানা অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছবি। সুন্দর ছবি তুলে পরিপূর্ণ পোর্টফলিও তৈরি হয়ে গেলে বিভিন্ন অ্যাজেন্সিতে ছবি পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশ্ন জাগতে পারে ছবি পাঠাবেন কোথায়? সোজা উত্তর বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। বিশেষ করে নামকরা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোতে। আরও পাঠাতে পারেন বিভিন্ন বুটিক হাউসে এবং পত্রিকা অফিসগুলোতে। প্রয়োজনে বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। যেমন, মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এমন ফটোগ্রাফার, মেকাপ, আর্টস, ফ্যাশন হাউস অর্গানাইজার এমন কারও সঙ্গে। পোর্টফোলিওর সঙ্গে একটি সুন্দর পরিপূর্ণ সিভি জমা দিতে ভুলবেন না। দেশের কয়েকটি মডেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগের তথ্য – মডেল জোন, হাউজ : ২১০, রোড : ২০, নতুন ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা। ফোন : ০১৬৭০ ০৬১৯৩০; এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশন লিমিটেড, এশিয়াটিক সেন্টার, হাউজ : ৬৩, রোড : ৭, বি ব্লক, বনানী, ঢাকা। ফোন : ৯৮৯২৭৬৮; বেঞ্চমার্ক লিমিটেড, হাউজ : ৬৯, রোড : ২৭, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২। ফোন : ৮৮১৩৬৪৮; অ্যাডকম লিমিটেড, হাউজ : ৭-এ, রোড : ৪১, গুলশান-২, ঢাকা। ফোন : ৮৮৫৩২২২, ৯৮৮৭৬৬৫।
চেহারা কোনো বিষয়:
আগেও বলেছি এখনও বলছি মডেল হতে হলে সুন্দর চেহারা কোনো মুখ্য বিষয় নয়। বর্তমান সময়ের এমন অনেক জনপ্রিয় মডেল আমাদের সামনে উদারণ হিসেবে রয়েছে। একজন সফল মডেল হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন হয় সুন্দর বাচনভঙ্গি, চলাফেরা, অভিনয় দক্ষতা, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন।
বিশেষ সতর্কতা:
অনেক দুষ্ট চরিত্রের লোক নামে-বেনামে অসংখ্য ভুয়া মডেল এজেন্সি খুলে বসে আছে। সহজ সরল তরুণ-তরুণীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা তাদের সাথে প্রতারণা করছে। এরা বিভিন্ন ভাবে ব্রেন ওয়াশ করে তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। তাই এই দিকটি একটু বিশেষ সতর্কতার সাথে দেখে শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মডেলিং এর কিছু টিপস: