আমাদের পৃথিবী কতটা প্রাচীন, তা ঠিকভাবে বলা কঠিন। পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যকার সভ্যতা তৈরি হয়েছে। তবে কোন কিছুই রাতারাতি হয় নি। অনেক সভ্যতা যেমন গড়ে উঠেছে, ঠিক তেমনি অনেক সভ্যতা বিলীন হয়ে গেছে। অনেক কিছু ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু তাও কি মানুষ থেমে আছে? না, কেউই আমরা থেমে নেই। আমরা সৃষ্টি করছি, ধ্বংস ও করছি প্রয়োজনে। অনেক প্রাচীন নিদর্শন এখনো রয়ে গেছে, যা দেখলে আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই সব দিনের কথা, সেই সব সভ্যতার কথা, সেই সব মানুষদের কথা যারা এইসব তৈরি করেছিলো। আজকে আমরা কথা বলবো, এমনি একটি অতি প্রাচীন নগরী – পেত্রা নগরী সম্পর্কে।
পেত্রা নগরী ছিল সুরক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। পেত্রা নগরী মূলত একটি সুরক্ষিত দুর্গ ছিলো। এটি বিখ্যাত সাধারনত এর অসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভগুলোর জন্য। শহরটি তৈরি করা হয়েছিলো পাথর কেটে ডিজাইন করে। অনেক গুহা আছে এই নগরীর আনাচে কানাচে। আসলে এই গুহা গুলোই চলাচল করার রাস্তা। গুহার পাশেই রয়েছে কঠিন পাথরের দেয়ালের গায়ে গ্রথিত সেই প্রাচীন দালানগুলো। যার মধ্যে সব থেকে বিখ্যাত হলো “খাজনেত ফিরাউন” নামক মন্দিরটি। মন্দিরটি ফারাওদের ধনভাণ্ডার নামেও পরিচিত। এখানে আরও একটি অর্ধ-গোলাকৃতির নাট্যশালা আছে, যা ৩০০০ দর্শক ধারন করতে পারে। তাছাড়া মরুভূমির উপর দিয়ে পারস্য উপসাগরে যাওয়ার প্রধান সব বাণিজ্যিক পথগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো এই পেত্রা নগর।
পেত্রা নগরী খুঁজে বের করেছিলো বারখাট। সুইচ পরিব্রাজক “জোহান লুডিগ বারখাট”। ১৮১২ সালে বারখাট পেত্রা নগরী খোঁজার জন্য বেড়িয়ে পরে। কিন্তু পেত্রা নগরী যে ঠিক কোন জায়গায় আছে তার সঠিক হুদিস তার কাছে ছিলো না। আর সব থেকে বড় কথা, যে জায়গায় অনুমান করা হয়েছিলো যে এখানে পেত্রা থাকতে পারে সেখানে যাওয়ার জন্য লোকাল গাইডের প্রয়োজন হতো। কিন্তু সে তো ঐ অঞ্চলের ছিলো না যে অনায়াসে যেতে পারবে। তাছাড়া ধরা পরলে গুপ্তচর বলে জেলেও পাঠাতে পারে। অনেক ভাবার পর বারখাট একটা অভিনব বুদ্ধি বের করলো। সে নিজের দাড়ি বড় করতে শুরু করলেন। যাতে তাকে দেখতে স্থানীয়দের মতন মনে হয়। তারপর সে অনায়াসে গাইড পেয়ে গেলেন, আর শুরু করলেন পেত্রা উদ্দেশ্যে যাত্রা।
দিনের পর দিন হেঁটে যেতে লাগলো তারা। তারপর একদিন তারা মরুভূমি থেকে দেখতো পেলো একটি গিরিখাত। সেই গিরিখাতের দুই পাশে উঁচু উঁচু সব পাহাড়, মাঝ দিয়ে রাস্তা। সেখান দিয়ে হাঁটতে এক সময় বারখাটের চোখে পরলো একটা পাথরের ভবন। তা দেখেই বারখাট বুঝে গেলো তারা এসে পরেছে পেত্রা, আর খুঁজে পেয়েছে সে ইতিহাসে বিলীন হয়ে যাওয়া সেই নগরটিকে। তিনি ফিরে এলেন আর ফিরে এসেই বিশ্ববাসীকে জানানেল তার আবিষ্কারের কথা। কিন্তু মরুভূমির ঠিক কোন জায়গায় সেই গিরিখাত, কোন জায়গায় সেই ভবন আর কোন জায়গায় ই বা সেই নগরী তার কোনটাই সঠিকভাবে বলতে পারলো না বারখাট।
বর্তমান জর্ডানের দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্রাম ওয়াদি মুসা’র ঠিক পূর্বে হুর পাহাড়ের পাদদেশে এর অবস্থান। যদি সময় আর সুযোগ হাতে পান তাহলে ঘুরে আসতে পারেন এই পেত্রা নগরী থেকে। হয়তো আপনার জন্যই এখনো টিকে আছে এই হাজার বছরের পুরনো শহরটি।