নীল নদের যে শাখাটি খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা সেটির নাম ‘আহরামাত’। আরবিতে ‘আহরামাত’ শব্দের অর্থ পিরামিড। নদীর ওই শাখাটি খুব সম্ভবত ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২০০ থেকে ৭০০ মিটার প্রশস্ত ছিল।
সেই চার হাজার বছরের বেশি সময় আগে কীভাবে তৈরি হয়েছিল মিশরের পিরামিড এবং কীভাবে এগুলো এত বছর ধরে টিকে আছে সেই রহস্য ভেদ করা সম্ভব হতে চলেছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিবিসি জানায়, নর্থ ক্যারোলিনা উইলমিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক আবিষ্কার করেছেন যে মিশরের পিরামিডগুলো নীল নদের বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একটি প্রাচীন শাখা ধরেই হয়তো নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর যে শাখাটি এখন মরুভূমি এবং কৃষিজমির নিচে চাপা পড়ে গেছে।
জগৎ বিখ্যাত গিজা কমপ্লেক্সসহ মিশরের বিশাল বিশাল পিরামিডগুলো কীভাবে তৈরি হয়েছে? কোন প্রযুক্তির বলে প্রাচীন আমলে এত বিশাল এই স্থাপনাগুলো নির্মাণ সম্ভব হয়েছে তার রহস্য ভেদ করতে বহু বছর ধরেই কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।
আর অনেক আগে থেকেই প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করছেন, কাছের কোনো নদীপথ ধরেই প্রাচীন মিশরীয়রা বড় বড় পাথরখণ্ডসহ পিরামিড তৈরির উপকরণ বহন করেছেন এবং নদীর উপরই সেগুলো নির্মিত হয়েছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত ‘কেউই নিশ্চিত হয়ে সেই নদীর অবস্থান, আকার, আকৃতি অথবা নদীটি কতটা বড় ছিল সেটা নিশ্চিত হতে পারেনি’ বলে জানান নর্থ ক্যারোলিনা উইলমিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের একজন অধ্যাপক এমান গোনাইম।
গবেষকরা ভূউপগ্রহের ছবি, ঐতিহাসিক মানচিত্র, ভূ-পদার্থগত জরিপ, পলল কোরিং এর মাধ্যমে নদীর ওই শাখার মানচিত্র তৈরি চেষ্টা করেছেন। নদীর যে শাখাটি বহু বছর আগে বড় ধরণের খরা ও ধুলাঝড়ের কারণে মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে।
দ্য জার্নাল নেচার এ এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, গবেষক দলটি ‘রেডার প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে ‘বালির পৃষ্ঠে প্রবেশ করে এবং লুকানো বৈশিষ্ট্যের ছবি তৈরি করতে সক্ষম হয়’।
অধ্যাপক গোনাইম বলেন, “এই বৈশিষ্টগুলোর মধ্যে ছিল মাটির নিচে চাপা পড়া নদী এবং প্রাচীন কাঠামো। প্রাচীন মিশরীয় পিরামিডগুলোর বেশিরভাগই যেখানে অবস্থিত তার পাদদেশ দিয়ে ওই নদী প্রবাহিত হয়েছে।”
আরেক গবেষক ড. সুজান অন্সটিয়েন বিবিসিকে বলেন, “নদীর প্রকৃত শাখাটির অবস্থান এবং আমাদের হাতে যে তথ্য রয়েছে তাদের দেখা যাচ্ছে সেখানে একটি জলপথ ছিল। ভারি ব্লক, সরঞ্জাম, শ্রমিকসহ সবকিছু বহনে ওই জলপথটি ব্যবহার করা হয়েছে। যেটি পিরামিডের নির্মাণ কৌশলের ব্যাখ্যা করতে আমাদের সত্যিই খুব সাহায্য করবে।”
এবং ৩১টি পিরামিডের চারপাশ দিয়ে সেটি বয়ে গিয়েছিল। যে পিরামিড গুলো ৪,৭০০ থেকে ৩,৭০০ বছর আগে তৈরি।
প্রাচীন মিশরীয়রা শ্রমিকদের পরিবর্তে নদীর স্রোতকে কাজে লাগিয়ে ভারি ভারি পাথরখণ্ড বহন করেছে বলেও মনে করেন ড. অন্সটিন।
বলেন, “এতে পরিশ্রম অনেক কম হয়েছে।”
প্রাচীন মিশরের প্রাণশক্তি ছিল নীল নদ। বর্তমান মিশরের উপরও যে নদীর প্রভাব একই রয়েছে।