ব্যাপক আর্থিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত বড় কিছু প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিচ্ছে পাকিস্তান সরকার। এর মধ্যে রয়েছে দেশটির পতাকাবাহী উড়োজাহাজ পরিষেবা সংস্থা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ)। ফার্স্ট পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সংস্থাটির জন্য বিদেশী ক্রেতা খোঁজা হচ্ছে। সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে এরই মধ্যে কাতার ও আবুধাবির নাম এসেছে।
কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবেলা করছে পাকিস্তান। সংকট উত্তরণে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিত্র দেশের শরণাপন্ন হয়েছে দেশটি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তিতে রয়েছে আর্থিক পুনর্গঠনের শর্ত। এসব শর্ত পাকিস্তানকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পুনর্গঠন বা বিক্রি করতে বাধ্য করেছে। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে লোকসানি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে বেসরকারীকরণের কৌশল। এতে পিআইএর মালিকানার হাতবদল হতে যাচ্ছে বড় পদক্ষেপগুলোর একটি।
দেশটির গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, কাতার পিআইএ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং এর মূল্য হতে পারে ২০০ কোটি ডলারের বেশি। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং দুই সরকারের মধ্যে (জিটুজি) চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনার নেতৃত্বে রয়েছেন পকিস্তানের বেসরকারীকরণ বিষয়ক মন্ত্রী ফাওয়াদ হাসান।
গত এপ্রিলে এক দফা পিআইএ বিক্রির প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়, যেখানে একমাত্র প্রস্তাবটি ন্যূনতম মূল্য থেকে ৮ দশমিক ৫ গুণ কম ছিল।
বিক্রির প্রক্রিয়াটি তদারকি করছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সমর্থিত বোর্ড স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিল (এসআইএফসি)। তারা চলতি মাসের শেষ নাগাদ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক আগ্রহ পত্র বা ইওআই আহ্বান করতে পারে।
বছরের শুরুর দিকে ৮০টির বেশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিক্রির পরিকল্পনা নেয় পাকিস্তান সরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল দুই দশকে প্রায় ৩৬০ কোটি ডলার লোকসান দেয়া পিআইএ। সংস্থাটি কার্যকর রাখতে সরকারি অর্থের ওপর নির্ভরশীল ছিল। সম্প্রতি পিআইএর কিছু ঋণ সরকারি খাতে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা এয়ারলাইনটিকে সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে।
পাকিস্তান সরকার আরো জানিয়েছে, পরবর্তী বিক্রি প্রক্রিয়ার সময় তারা এয়ারলাইনসটিকে সম্পূর্ণরূপে ঋণমুক্ত করতে পারে।
প্রথম দফা বিক্রি প্রচেষ্টায় পিআইএর মোট ঋণের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বা ৮৩ হাজার কোটি রুপি (প্রায় ৩০০ কোটি ডলার) সরকারি খাতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। ওই সময় পাকিস্তান ছয়টি স্থানীয় গ্রুপকে নিলামে অংশগ্রহণের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে শুধু ব্লু ওয়ার্ল্ড প্রস্তাব দাখিল করে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় আরো ছিল এয়ার অ্যারাবিয়ার স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফ্লাই জিন্নাহ।
পাকিস্তান প্রায় এক দশক আগেও ৮০ বছরের পুরনো এ উড়োজাহাজ পরিষেবা সংস্থা বিক্রির চেষ্টা করেছে। তবে তখন সফল হয়নি। ২০১৬ সালে পিআইএর বেসরকারীকরণের ঘোষণা দিলে কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করেন, এতে এক সপ্তাহ ফ্লাইট স্থগিত ছিল। পরে ওই উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয় সরকার।