শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

পায়ে হেঁটে ল্যুভর আবুধাবি জাদুঘরে

  • আপডেট সময় শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

গেল উইক-এন্ডে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বসলাম আমরা। তার একদিন আগে আল মারিয়া আইল্যান্ড পর্যন্ত মোট ৮ কিলোমিটারের বেশি হাঁটার সময় সঙ্গী সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদকে বললাম- চলেন ভাই, একবার ল্যুভর মিউজিয়াম পর্যন্ত যাই।

যদিও তখনও ধারণা নিই নাই যে আসলে তা কতদূর। পরে দেখা গেল এটা আবুধাবি সিটি সেন্টার থেকে ৮.৫ কিলোমিটার  দূরত্বে। তার অর্থ যাওয়া আসা মিলিয়ে ১৭ কিলোমিটার। আদৌ কি সম্ভব?

সম্ভব। মোর্শেদ বললেন। একই পরিমাণ দূরত্ব তো আমরা এর আগে পাড়ি দিয়েছি। সো আগে যাই, গিয়ে অবস্থা বুঝে রিটার্ন পথ আমরা আসার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা হবে। যদিও পরে বুঝেছি এটা ছিল একটা টোপ! বন্ধু ও ওয়াকিং পার্টনার মইন উদ্দিনও রাজি হলেন। ঠিক হল ম্যাক্সিমাম বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে আমরা অভিযানে বেরিয়ে পড়বো।

কিন্তু বেরোবার পথে ১০ মিনিটের সময় নিয়ে মঈন ভাই কয়েকটা ইমার্জেন্সি টিকেট ইস্যু ডিল করতে গেলেন তার কর্মস্থলে। উনি নিলেন এক ঘণ্টারও বেশি সময়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে রওয়ানা হলাম আমরা, তার আগে মোর্শেদ ভাই ধরিয়ে দিলে হোম মেইড এনার্জি ড্রিংক। আমরা ট্যুরিস্ট ক্লাব এরিয়া পেরিয়ে সাদিয়াত আইল্যান্ডের দিকে জনমানবহীন ফুটপাথ ধরে হাঁটছি তো হাঁটছি, সামনে কোথাও মসজিদ নেই। রাস্তায় সাঁ সাঁ করে কেবল ছুটছে হেভি ও লাইট ভেহিকলের সারি।

উপায় না দেখে ফুটপাতে মাগরিবের নামাজের জন্য থামলাম। মোর্শেদ আর মঈন ভাই ধারে-পাশে ওজুর পানির কোন সন্ধান না পাওয়ায় তায়াম্মুম করে দাঁড়িয়ে গেলেন সঙ্গে। নামজটাতো এমনই, যে অবস্থায় যেখানে আছো যখন, আকাশ ভ্রমণে, যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা রোগশয্যায় আদায় করে নিতে হবে তা। কিছু হাঁটার পর শেষ হল ফুটপাত, এবার রাস্তার ধারের এবড়ো-থেবড়ো ভাঙ্গাচোরা কংক্রিটের কিংবা স্রেফ মাটি বালির নির্মাণাধীন হাঁটা পথ।

যাত্রা শুরুতে আমরা

যাত্রা শুরুতে আমরা

বিশাল ফ্লাইওভার, এরপর আসছে এগিয়ে এক কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ মিনা ব্রিজ। আমাদের ধার ঘেঁষে যখন বিশেষ করে বড় বড় ট্রেইলারগুলো যাচ্ছে তখন যেন আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হবার যোগাড় হচ্ছে। পথ আর শেষ হয় না। শত গল্প কথায়ও পথের ক্লান্তি কাটে না, পণ করেছে যেন তা কাটবেই না। তাও কি আবার ধুলোবালি উড়ানো বন্ধুর পথ। কিছুটা রক্ষে হল মুখে করোনাভাইরাসের মাস্ক থাকায়। বাইরে কখনো লু হাওয়া, কখনও অসহিষ্ণু হিউমিডিটি। তা ডিঙিয়ে মিনা ব্রিজের দীর্ঘ চড়াই বেয়ে উঠতেই- ওইতো ওই দেখা যায় ল্যুভর মিউজিয়াম!

কিন্তু দেখা যাওয়া আর ওই স্থাপনার কাছে পৌঁছার মাঝে যে দুস্তর মরু। জানি তা লঙ্ঘিতে হবে। বুকে তাকদ আর মনে বল নিয়ে তাই হাঁটছি তো হাঁটছিই। আমরা হাঁটতে থাকি আর তার ফাঁকে আপনারা জেনে নিন আবুধাবি কালচারাল ডিস্ট্রিক্টে ফরাসি সৌরভে ধন্য এই ল্যুভর আবুধাবি মিউজিয়াম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।

ল্যুভর আবুধাবি একটি শিল্প ও সভ্যতার জাদুঘর, এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি শহরে অবস্থিত। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সিন নদীর তীর ঘেঁষে জাদুময় জাদুঘর আদি ল্যুভরের অবস্থান। কাচের তৈরি পিরামিড দিয়ে  নির্মিত ল্যুভর মিউজিয়াম হাজার হাজার বছরের পুরনো মানব সভ্যতার নিদর্শন ও ইতিহাস। ল্যুভর এর আবুধাবি সংস্করণ ৮ নভেম্বর ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

জাদুঘরটি সাদায়াত আইল্যান্ড কালচারাল ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত। এটি প্রায় ২৪ হাজার বর্গমিটার আয়তনের, সঙ্গে ৮ হাজার বর্গমিটার গ্যালারি নিয়ে আরব উপদ্বীপে এটি বৃহত্তম শিল্প জাদুঘর। নির্মাণের চূড়ান্ত খরচ প্রায় ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি, ৫২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হয় ল্যুভর আবুধাবি নাম যুক্ত করার জন্য।

প্রায় দুই ঘণ্টায় আমরা পৌঁছলাম আমাদের টার্গেট ল্যুভর আবুধাবি মিউজিয়ামে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। মিউজিয়ামের সুবিশাল ডোমের গা থেকে ঠিকরে পড়ছে রূপালি জোছনার আলোর ঝিলিক, যেন হীরক খণ্ড হতে আসা দ্যুতি। চারদিকে অ্যারাবিয়ান গালফের থইথই করা কৃষ্ণ জলরাশি, রাতের আঁধারে তা রহস্যময় রূপ নিয়েছে। অদূরে পোতাশ্রয়ে নোঙর করা জাহাজের সারি।

আমরা ঘুরে ঘুরে মিউজিয়ামের যতোটা দেখা সম্ভব দেখলাম, ভারতীয় একটা ফ্যামিলিকেও পেয়ে গেলাম এই রাতে ওখানটায়। লুভ্যরের স্থাপত্যশৈলী দেখে মনটা এতোই জুড়োল যে এই খরতাপের সময়ে পথের ক্লান্তি নিমিষে গেল কেটে।

এবার আমাদের ফিরতে হয়, রাত বারোটা থেকে সিটিতে আবার লকডাউন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com