রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন

পাল্টে গেছে শাহজালালের গ্রিন চ্যানেলের দৃশ্যপট

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল ঘিরে বসানো হয়েছে নতুন স্ক্যানার, গোল্ড টেস্টিং মেশিন। প্রবাসীদের সহায়তায় বসানো হয়েছে হেল্প ডেস্কও। পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। আর এতে করেই পাল্টে গেছে গ্রিন চ্যানেলের দৃশ্যপট।

যাত্রীদের এখন আর লম্বা লাইন ও ঘণ্টা পেরোনো সময় লাগছে না। ইমিগ্রেশন শেষে কাস্টমস সম্পন্ন করে বের হতে সর্বোচ্চ সময় লাগছে ৩০ মিনিট। কখনও কখনও এর কম সময়ও লাগছে। বিমানবন্দরে এ রকম সেবা পেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রবাসীসহ যাত্রীরা। তারা বলছেন, কোনও ঝামেলাই নেই। মেশিনে মেশিনেই সব কাজ শেষ। আমরা এ রকম সেবাই চাই।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন পরিদর্শনে শাহজালালে এমন চিত্র দেখা গেছে।

4e325fd1-280d-49ea-902c-fbd358acbf24ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইমিগ্রেশনের পর দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে লাগেজ পেতে অত্যাধুনিক মেশিন বসানো হবে। যাতে যাত্রীসেবার মান আরও বাড়ানো যায়।’ তিনি বলেন, তবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর কারণে চোরাকারবারিরা ভিন্ন পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করছে। আমরা চোরাকারবারি রোধে ডিটেকশন মেশিন স্থাপন করেছি। তাদের সিন্ডিকেট ভাঙতে সক্ষম হয়েছি। ফলে তারা বড় ধরনের কোনও চালান আনতে সাহস দেখাচ্ছে না।’

জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতেই কাজ করে যাচ্ছি।’

বিমানবন্দরে কর্মরত সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগা, লাগেজ হারিয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের ভোগান্তির অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। তবে দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি যেমন অনেকটাই লাঘব হয়েছে, তেমনই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সুসংহত হয়েছে।

57167d44-2c37-46ea-a552-1fdccfe6d45bযাত্রীদের লাগেজ পরীক্ষা করতে পর্যাপ্ত স্ক্যানার মেশিন চালু করা হয়েছে। এখন ২০-৩০ মিনিটের মধ্যেই যাত্রীরা তাদের লাগেজ পেয়ে যাচ্ছেন।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩৪টি বিদেশি এয়ারলাইন্স ৫২টি আন্তর্জাতিক রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে যাত্রীদের সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। একজন যাত্রীও যাতে ভোগান্তির শিকার না হন, সেদিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। আগে একসঙ্গে অনেক যাত্রী এলে ভোগান্তি হতো। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় যাত্রীরা দ্রুত লাগেজ পেলেও আটকে থাকতে হতো কাস্টমস চেকিং এলাকায়। চেকিংয়ের পেছনে যাত্রীদের ৩০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত চলে যেতো। পাশাপাশি অনেক লাগেজ স্ক্যান ছাড়াই বের হয়ে যেতো। যথাযথভাবে তল্লাশি না হওয়ায় শুল্কায়ন ও ট্যাক্সযোগ্য অনেক পণ্য, এমনকি স্বর্ণের অবৈধ চালানও দেশে প্রবেশের সুযোগ ছিল। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব যেমন হারিয়েছে, তেমনই নিরাপত্তা ঝুঁকিও ছিল।

930520b2-8757-47a9-aeef-7010f753b625 (2)যাত্রীদের প্রধান অভিযোগ ইমিগ্রেশন ও লাগেজ পেতে দেরি হওয়ার বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ায় এখন সেবা উন্নত হয়েছে। ইমিগ্রেশন দ্রুত সম্পন্ন করতে তিন শিফটের জায়গায় চার শিফট চালু করা হয়েছে। এতে সময় কম লাগছে। অল্প সময়ে লাগেজ পাওয়া নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিমানবন্দরের ‘হেল্প ডেস্ক’ যাত্রীদের সব ধরনের সহায়তা করার জন্য তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছে।

আরাফাত রহমান নামের যাত্রী জানান, ফ্লাইট থেকে নেমে দ্বিতীয় টার্মিনাল দিয়ে বের হতে তার সময় লেগেছে ৩০ মিনিট। সাধারণত প্লেন থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন, লাগেজ সংগ্রহসহ অন্য ফরমালিটি মেনে বের হতে গড়ে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যেতো। কিন্তু এখন কোনও ঝামেলা ছাড়াই বিমানবন্দর থেকে বের হতে পারছি। ইমিগ্রেশন শেষ করে বেল্টে আসার পরপরই লাগেজ পেয়েছি। আবার বিমানবন্দরের ভেতর থাকা ফ্রি টেলিফোন দিয়ে পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছি। সব কার্যক্রম খুব সুন্দরভাবে হচ্ছে।

আবুল হোসেন নামে আরেক যাত্রী বলেন, বিমানবন্দরে বর্তমানে যে সেবা দেওয়া হচ্ছে, তা ভালো। ফ্লাইট থেকে বের হয়ে আসতে আধাঘণ্টার মতো লাগছে।

তিনি বলেন, সব কিছু মেশিনেই হচ্ছে। তেমন কোনও কথাও বলা লাগেনি। আমরা এমন সেবাই চাই।
38251481-21db-47c3-b03d-80140e3bb69e
কাস্টমসের প্রিভেনটিভ টিমের উপ-কমিশনার ইফতেখার আলম ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিতেই কাজ করছি। নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাস্তবায়নও হয়েছে অনেক। নতুন স্ক্যানার, গোল্ড ডিটেকশন মেশিন বসানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া আমরা চোরাকারবারিদের প্রতিহত করতে নজরদারিও বাড়িয়েছি।’

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এভিয়েশন সেক্টরকে আরও শক্তিশালী করবো, যাতে আমরা যাত্রীসেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি। বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলছি, যাতে তারা যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা দেন।’

তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে কর্মরত সব সংস্থার লোকেরা যাতে যাত্রীদের সঙ্গে সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার করে, এমন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বিশ্বমানের সেবা পাবেন যাত্রীরা।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com