জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা, রাজনৈতিক মতামত বা একটি নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীভুক্ত হওয়ার কারণে নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইনের অধীনে শরণার্থী মর্যাদা দেয়া হয়৷
একই আইনে (নির্দেশিকা ২০১১/৯৫) বলা হয়েছে, যারা শরণার্থী মর্যাদার যোগ্য নন, তারাও সহায়ক সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী নির্যাতন, অমানবিক পরিস্থিতি, অবমাননাকর ঝুঁকি বা শাস্তির সম্মুখীন হন, তবে তিনি সহায়ক সুরক্ষা পেতে পারেন।
সম্প্রতি লুক্সেমবুর্গে একটি মামলার শুনানির সময় ইসিজের কাছে বুলগেরিয়া এ বিষয়ে জানতে চেয়েছে৷ কুর্দি বংশোদ্ভূত এক তুর্কি নারীকে কোন ধরনের সুরক্ষা দেয়া উচিত এই নিয়ে আদালতে শুনানি চলছে৷
এই নারী বুলগেরিয়াতে আশ্রয় চেয়েছিলেন৷ সুন্নি মুসলিম এই নারীর নাম প্রকাশ করা হয়নি৷ জানা গেছে, এই নারীকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়৷ তার নিজের পরিবার, স্বামী, স্বামীর পরিবারের হাতে গৃহ নির্যাতন ও পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন তিনি৷ তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হতো নিয়মিত। বুলগেরিয়ায় পালিয়ে আসার পর তিনি জানান, তুরস্কে ফিরে গেলে তার প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে।
লিঙ্গের কারণে সহিংসতার ঝুঁকি
ইসিজে অ্যাডভোকেট জেনারেল রিচার্ড দে লা ট্যুর আদালতকে বলেন, ‘’ওই নারীকে তুরস্কে ফিরে যেতে বাধ্য করা হলে তাকে ‘ভয়াবহ বৈবাহিক সহিংসতার শিকার হতে হবে, যা সেখানকার কয়েকটি সম্প্রদায়ের ‘ঐতিহ্য’। তিনি বলেন, বারবার সহিংসতা আসলে একজন মানুষের মৌলিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।’’
তিনি জানান, এই ধরনের মামলায় ইইউ দেশের কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আবেদনটি ব্যক্তিগত দিক ভেবে মূল্যায়ন করতে হবে। যদি দেশটি সহায়ক সুরক্ষা দেয়ার কথা বিবেচনা করে, তাহলে পারিবারিক সহিংসতা বা ‘অনার ক্রাইম’এর মতো ‘ভয়াবহ ক্ষতির’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷
ইস্তাম্বুল কনভেনশনের অধীনে নারীর প্রতি লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা এক প্রকার নিপীড়ন হিসেবে স্বীকৃত ছিল। ২০২১ সালে তুরস্ক কনভেনশনটি প্রত্যাহার করে নেয়৷ এর ফলে সারা দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল।
এছাড়াও তুরস্কে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা এবং নারী হত্যার উচ্চ হার রয়েছে৷ ২০২২ সালের নভেম্বরে তুরস্কের ফেডারেশন অব উইমেন অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে কমপক্ষে ৩২৭ জন নারীকে হত্যা করা হয়৷ বেশিরভাগ নারীকে তাদের সঙ্গী এবং পরিবারের সদস্যরা হত্যা করেছেন।
ইইউতে লিঙ্গের ভিত্তিতে আশ্রয়
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ আফগান নারীদের লিঙ্গপরিচয়ের ভিত্তিতে আশ্রয়ের অধিকার দিয়েছে৷
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানে নারীদের পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি হয়েছে। স্কুলে পড়ার অধিকারও হারিয়েছেন তারা৷ এই প্রেক্ষিতেই ড্যানিশ শরণার্থী কমিটি (ডিআরসি) এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের অ্যাডভোকেট জেনারেলের মতামত চূড়ান্ত না হলেও এই মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই প্রায়শই আদালত এই মত অনুসরণ করে। এই মামলাটি এখনো বিচারপ্রক্রিয়ার অধীনে রয়েছে৷ ইসিজে যদিও এই মামলায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের তারিখ ঘোষণা করেনি।
তুর্কি নারীর ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা বুলগেরিয়ার জাতীয় আদালতের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য দেশের অন্য সমস্ত জাতীয় আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক হবে।