ঠিক যেন পাতালপুরি। আস্ত একটা হোটেল, যা তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণভাবে মাটির নিচে। সেখানে পৌঁছানোর পথও যথেষ্ট দুর্গম। কিন্তু একবার হোটেলের ঘরে ঢুকে পড়লে এতটুকু বোঝার উপায় নেই তা মাটির উপরে না নিচে। তাই দলে দলে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন এই হোটেলে রাত কাটানোর ইচ্ছা নিয়ে। কোথায় রয়েছে এমন হোটেল? আসুন শুনে নিই।
গল্পে বা সিনেমায় মাটির নিচে থাকা ঘরের হদিশ মেলে। বাস্তবেও পুরনো দিনের বাড়িতে এমন গুপ্তকুঠুরি দেখা যেতে পারে। কিন্তু সেসবের উচ্চতা খুব বেশি হলে কয়েক ফুট। আর গভীরতাও যে খুব বেশি তা নয়। কিন্তু এমনও এক হোটেল রয়েছে, যা সম্পূর্ণভাবে মাটির নিচে। তাও প্রায় ১৩৭৫ ফুট গভীরতায়।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। মাটির ঠিক এতটা গভীরেই তৈরি হয়েছে এই হোটেল। সেখানে রীতিমতো সুন্দরভাবে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। একেবারে পাঁচতারা হোটেলের থেকে কোনও অংশে কম নয় এই অদ্ভুত হোটেল। তবে হোটেলে ঢোকার পথ যথেষ্ট দুর্গম। কারণ এই হোটেল তৈরি করা হয়েছে পাহাড়ের গা ঘেঁষে। সেখানেই গভীর সুড়ঙ্গ তৈরি করে বেশ কয়েকটা ঘর বানানো হয়েছে। তাই সেই ঘরে ঢুকতে গেলে সবার আগে পাহাড়ের কিছুটা উপরদিকে উঠতে হবে। দেখলে মনে হবে, কোনও খনি। তাই ঠিক যেভাবে খনির ভিতর মানুষ নামে, সেরকম ভাবেই দড়ি ধরে বা লম্বা সিড়ি বেয়ে এই হোটেলে ঢোকার নিয়ম। আবার আরও একটা কারণে এই হোটেল ব্যতিক্রমী। কারণ এখানে কেউ একা একা ঢুকতে পারবেন না। সুরক্ষার স্বার্থে সবসময় সঙ্গে থাকবেন একজন গাইড। তিনিই পাহাড়ে চড়া থেকে শুরু করে হোটেলের ঘরে পৌছানো পর্যন্ত সবরকম সাহায্য করেন। শুনে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, বাস্তবে তা একেবারেই নয়। কারণ হোটেল ঘরে পৌঁছানোর জন্য এক ঘন্টারও বেশি সময় লাগতে পারে। আর এইসময় অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে হেলমেট, টর্চ-এর মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ১৩৭৫ফুট নেহাতই কম গভীরতা নয়।
হোটেলের ভাড়াও নেহাতই কম নয়। ৩৬ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫৫ হাজার টাকা অবধি খরচ হতে পারে এই হোটেলে রাত কাটানোর জন্য। সাধারণ কোনও হোটেলে যেমন উচ্চতার সঙ্গে ভাড়া বাড়ে। এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়। শুধু উচ্চতার বদলে ভাড়া ঠিক হয় গভীরতার নিরিখে। আসলে মাটির একদম গভীরেই রয়েছে হোটেলের সবথেকে সুন্দর ঘর। আপাতত হোটেলে মোত ৫ টি ঘর রয়েছে। যার মধ্যে একটা ঘর বিশেষ ভাবে তৈরি। অন্যান্য ঘরগুলোর তুলনায় এই ঘরটা আকারেও খানিক বড়। এখানে ঢুকলে একবারের জন্যও মনে হবে না আপনি মাটির নিচে আছেন। সবকটা ঘরে পৌঁছানোর জন্যই পেরোতে হবে দুর্গম পথ। কিন্তু তাতে কি! এমন অভিজ্ঞতা তো আর অন্য কোথাও হবে না। তাই ইতিমধ্যেই অনেকে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন ব্রিটেনের এই হোটেলে। আগামীদিনে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে বলেই মনে করছে হোটেল মালিক। অন্যদিকে এই হোটেলকে বিশ্বের সবথেকে গভীর হোটেলের স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে। তাই এখানে যারা রাত কাটাবেন তাঁদের গুরুত্বও নেহাত কম নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।