শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

পাখিদের অভয়ারণ্য উজলপুরের মিনি সুন্দরবন

  • আপডেট সময় সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১

পাখিরা দলবেঁধে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরছে। চারিদিকে ডানা ঝাপটানো উড়াউড়ির সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর এলাকা। দলবেঁধে ঘরে ফেরার দৃশ্য দেখতে দূর থেকে ছুটে আসছেন পাখি প্রেমীরা।

বাগেরহাট সদরের বারুইপাড়া ইউনিয়নের উজলপুর বাজার সংলগ্ন মিনি সুন্দরবনে বিকেল হলেই এমন দৃশ্যের এখন প্রতিদিনই দেখা মেলে। বাগেরহাট সদর, ফকিরহাট ও চিতলমারী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা নদীর জেগে ওঠা চরে গত দুই দশকে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন গাছপালা। শান্ত নদী চিত্রার দু’পাড়ে তৈরি হয়েছে সুন্দরবনের আবহ। যার কারণে এলাকাবাসী এটাকে মিনি সুন্দরবন বলে নামকরণ করেছেন।

প্রতিবছর শীত আসে আর শীতের সঙ্গে এখানে আসে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। দূর দেশ থেকে ডানায় ভর করে আসে একটু আশ্রয় ও খাদ্যের আশায়। মিনি সুন্দরবন পাখিদের সেই নিরাপদ আশ্রয়। এ বনে পাখিদের এই অভয়ারণ্য পর্যটন শিল্পের নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।

শীত বিদায় নিলেও এখনও অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর উজলপুর বাজার সংলগ্ন মিনি সুন্দরবন। বক, পানকৌড়ি, বালিহাঁস, রাঙা ময়ূরী, ছোট স্বরালী, সারশ, গাঙচিল, খঞ্জনা পাতারীসহ নাম জানা-অজানা অসংখ্য পাখির এখানে এলে দেখা মিলবে।

স্থানীয়রা জানান, সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছের বীজ জোয়ারের পানিতে ভেসে এসে প্রাকৃতিকভাবে চিত্রার বাঁকে এই বনের সৃষ্টি হয়েছে। এসব বীজের মাধ্যমে চরের জমিতে সুন্দরী, গোল, ওড়া, কেওড়া, গরানসহ নানা প্রজাতির অসংখ্য গাছ জন্ম নিয়েছে। এই বন দেখলে অনেকটা মূল সুন্দরবনেরই অনুভূতি পাওয়া যায়। এটা সংরক্ষণ করতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ দরকার বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

শীত মৌসুমে এখানে লাখ লাখ অতিথি পাখি আসে। যা শীত বিদায় নেওয়ার পর এখনও রয়েছে। বিকেল হওয়ার পরপর পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে বনের চারপাশ যা মুগ্ধ করে তোলে দর্শনার্থীদের এমনকি এলাকার লোকজনকেও। চিত্রাপাড়ের মিনি সুন্দরবনে পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। সারা বছরই এখানে নানা প্রজাতির পাখি থাকে। এখানে অসাধু শিকারীরা ফাঁদ পাততে পারে না। জাল ও বন্দুক দিয়েও পাখি শিকার করতে পারে না। উজলপুরের পাখি কেউ মারতে পারে না। পাখিরা নিরাপদে আছে। স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার পাখিপ্রেমীরা খুবই সোচ্ছার পাখি শিকারের বিরুদ্ধে। উজলপুর বাজারের চিত্রানদীর বাঁকে মিনি সুন্দরবনে ৭ থেকে ৮ বছর ধরে অতিথি পাখি আসে। জোয়ারের পানি যখন গোলগাছ ও ওড়া গাছ তলিয়ে দেয় তখন অবিকল সুন্দরবনের মতো মনে হয় এ বনকে। মন ভালো করার মতো প্রকৃতির এ সৌন্দর্য দেখতে যে কেউ আসতে পারেন উজলপুরে।

বাগেরহাট সদরের বারুইপাড়া ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের (উজলপুর, সাহেবাহার ও পারকুরশাইল) ইউপি সদস্য  হায়দার আলী জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, মিনি সুন্দরবনের ওড়া গাছ (সইলা গাছ), বাবলা, গোলপাতা ও মেগনিশ গাছে মূলত এ পাখিগুলো এসে থাকে। শীতে অতিথি পাখিগুলো আসে আর বর্ষায় চলে যায়।

প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এ বনকে ঘিরে দিনদিন বাড়ছে ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের আনাগোনা। বিশেষ করে অতিথি পাখি দেখতে বিকেল হলেই মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।

সাহেবাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লিলিয়া খাতুন বলেন, এখানে না গেলে বোঝা যাবে না কতটা সুন্দর দৃশ্য। আছরের পর পানকৌড়ি পড়লে মনে হবে কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। আবার সন্ধ্যার আগে আগে যখন সাদা বক আসে তখন মনে হবে সাদা চাদরে ঢেকে গেছে গোটা এলাকা। দূর-দূরান্ত থেকে হাজারও দর্শনার্থী এ মনোরম দৃশ্য দেখতে ছুটে আসেন।

মিনি সুন্দরবনকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে এটি হয়ে উঠতে পারে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com